ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ছিনতাই

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

ছিনতাই

অপরের জিনিস বল ও জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়া আর যা-ই হোক কোন পেশা হতে পারে না। তথাপি এই কুকর্মকে পেশা হিসেবে নিয়ে পেশাদার ছিনতাইকারীতে পরিণত হওয়া অপরাধীর সংখ্যা এই সমাজ তথা রাষ্ট্রে কম নয়। হঠাৎ করে এদের তৎপরতা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি স্তিমিত হয়েও পড়ে। তাদের কুকর্তব্য কর্মে মানবিকতা, দয়ামায়া বলে কিছু নেই, থাকতে পারে না। এরা ধরাও পড়ে। কিন্তু ছাড়াও পেয়ে যায়। ছিনতাইয়ের ঘটনার সাক্ষী মেলে না। তাই চার্জশীটও হয় এমনভাবে যাতে ছিনতাইকারী সহজে রক্ষা পায়। ছিনতাইয়ের মাধ্যমে যে আয় হয়, তার ভাগ কোথাও কোথায় প্রদান করতে হয়, কাগজে-কলমে তার হদিস মেলে না যদিও। চোখের সামনে ছিনতাইকারী, পথচারী বা রিক্সা, ট্যাক্সিযাত্রীর অর্থকড়ি, গয়নাগাটি, মালামাল অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে। এসব দৃশ্য ঠেকানো বা প্রতিরোধ করা পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ভুক্তভোগী যখন প্রতিকারের আশায় থানায় যায়, তখন অনেকক্ষেত্রে বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক ভুক্তভোগী তো জানেই কোন প্রতিকারই মিলবে না। বরং উটকো নানা ঝামেলাকেই বরণ করতে হবে। তাই থানামুখী না হওয়ার সংখ্যা বাড়ে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি। অবশ্য পুলিশের কর্তারা যুক্তি দেখান যে, তারা ছিনতাইকারী গ্রেফতার করলেও তারা জামিনে ছাড়া পায় এবং আবারও ছিনতাইয়ে জড়ায়। কিন্তু এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, এক্ষেত্রে ছিনতাই ঘটনায় মামলাগুলো তদন্তে পুলিশের আগ্রহের অভাব এবং দুর্বল তদন্তের ভূমিকাও জামিন পাওয়ার সমূহ সহায়ক বলা যায়। ছিনতাইকারীর সঙ্গে গত ক’বছর যাবত যুক্ত হয়েছে ‘টানা পার্টি’, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টির মতো অনেক পার্টি। টানা পার্টির দৌরাত্ম্য দেশের সর্বত্রই বলা যায়। এরা ছোঁ মেরে ব্যাগ, ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিতে সব সময় সক্রিয় বলা যায়। শুধু ছিনতাই নয়, এরা খুনখারাবি করতেও দ্বিধা করে না। গুলি ও ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার, ক্ষেত্রবিশেষে হাত বোমার তৎপরতাও চালায়। এক সময় পেশা হিসেবে ‘পকেটমার’ ছিল বেশ রমরমা। পথচারী, বাসযাত্রী, ভিড়ের মধ্যে এরা সুনিপুণে অন্যের পকেটে থাকা মানিব্যাগ তুলে নিত। ঘুণাক্ষরেও টের পেত না ভুক্তভোগী। পকেটমার প্রশিক্ষণে ঢাকার নবাবপুরে এক সময় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। পকেটমারদের এক ধরনের স্কুল বলা যায়। এদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হতো। দু’একজন যে ধরা পড়ত না, তা নয়। ধরা পড়া মানে গণপিটুনি। যা আবার পকেটমারদের সহযোগীদের অংশগ্রহণ থাকত বলেই তারাই নিয়ে যেত উদ্ধার করে। কিন্তু পকেটমার শিক্ষা বা পেশা বিলুপ্তির পথে, যখন ছিনতাই, টানাপার্টিসহ অন্য পার্টিরা মাঠে নেমে বেশ দাপটের সঙ্গে কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে ছিনতাইকারীরা তাদের দৌরাত্ম্য প্রদর্শন করে যাচ্ছে। খোদ রাজধানীতে গত দু’মাসে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন ছিনতাইকারীদের অস্ত্রাঘাতে। খুন হয়েছেন চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছিনতাইকারী ঘটনা প্রতিরোধ করতে গিয়েই তার শিকারে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। এক নারীর পায়ে গুলি করে টাকাসহ হাতব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে গত সপ্তাহে। দিন কয়েক আগে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতনের চল্লিশ লাখ ছিনিয়ে নেয়। আর মৌচাক এলাকায় রিক্সারোহী ডিবি পুলিশের এক পরিদর্শক ছুরিকাহত হন। গত দু’মাসে ঢাকায় তিন ডজন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ভোর, সকাল, সন্ধ্যায় ঘটা এসব ঘটনার সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে চৌকস হিসেবে পরিণত ছিনতাইকারীর একজনও ধরা পড়েনি। থানার নথিপত্রে মাত্র ১২টি ছিনতাইয়ের ঘটনার উল্লেখ থাকলেও কেউ ধরা পড়েনি। অবশ্য এরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। সর্বশেষ মর্মান্তিক ছিনতাই এর ঘটনা ঘটে দয়াগঞ্জে। রিক্সাযাত্রী আকলিমার ব্যাগ টান দিয়ে ছিনিয়ে নেবার সময় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি ও তার কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী সন্তান। হাসপাতালে নেয়ার পরপরই শিশুটি মারা যায়। তার রক্তে রাজপথ ভিজেছিল। এসব ঘটনার প্রতিকার অত্যন্ত জরুরী।
×