ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব শুরু

অস্থিরতা অশান্তির বিপরীতে শান্তির ডাক

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

অস্থিরতা অশান্তির বিপরীতে শান্তির ডাক

মোরসালিন মিজান তোমার গানের পদ্মবনে আবার ডাকো নিমন্ত্রণে তারি গোপন সুধাকণা আবার করাও পান,তারি রেণুর তিলকলেখা আমায় করো দান...। রবীন্দ্রনাথের গান সুন্দরের। শান্তির। সেই সুন্দর এবং শান্তির ভুবনে ফেরার প্রার্থনায় শুরু হলো জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার এটি ঊনত্রিংশতম আয়োজন। শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। চারদিনের উৎসবে অনেক নবীন শিল্পী গান করবেন। থাকবে খ্যাতিমান শিল্পীদের পরিবেশনা। প্রথমদিন সন্ধ্যা নামার আগে উৎসবস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে মিলনায়তনের বহিরাঙ্গন। কবিগুরুর বিভিন্ন বয়সের ছবি এখানে ওখানে স্থাপন করা হয়েছে। উদ্ধৃত করা হয়েছে মহামানবের গানের কথা। একটি প্রতিকৃতির পাশে চির সত্যটি উচ্চারণ করে আয়োজকরা লিখেছেন, ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে এসো গন্ধে বরনে,এসো গানে।’ চিরকালের রবীন্দ্রনাথ নতুন প্রাণ হয়ে গান হয়ে এখানে এসেছেন। শিল্পীরাও এসেছিলেন আগেভাগেই। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এখন। সকলে তাই জাতীয় পতাকার লাল সবুজে সেজে এসেছিলেন। নারী শিল্পীরা গায়ে জড়িয়েছিলেন লাল শাড়ি। সবুজ পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন পুরুষ শিল্পীরা। কয়েক সারিতে ভাগ হয়ে বসেছিলেন প্রায় অর্ধশত গায়ক গায়িকা। তাদের দুই পাশে যথারীতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর সামনের অংশে রজনীগন্ধা গোলাপসহ মৌসুমি ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছিল। প্যাঁচিয়ে দেয়া হয়েছিল গাঁদা ফুলের মালা। সব মিলিয়ে দারুণ একটি পরিবেশ। এ পরিবেশেই আনুষ্ঠানিক শুরু। প্রথমে জাতীয় সঙ্গীত। শিল্পী এবং শ্রোতা সবাই মিলে গান, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’ পরের সম্মেলক গানে দেশমাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শিল্পীরা গান ও মা, অনেক তোমার খেয়েছি গো, অনেক নিয়েছি মা তবু জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা...! উৎসবে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গাওয়া হয়, ‘সবারে করি আহ্বান এসো উৎসুকচিত্ত, এসো আনন্দিত প্রাণ।’ শেষ সম্মেলক গানটি ছিল ‘আমার দিন ফুরাবে যবে।’ উদ্বোধনী দিন একক গান করেন ৬ শিল্পী। সীমা হুদার কণ্ঠে ছিল, ‘ও যে মানে না মানা।’ সুরাইয়া ফারাহ খান বেছে নেন ‘দিনের বেলায় বাঁশি তোমার’ গানটি। প্রান্তিকা সরকারের কণ্ঠে ছিল ‘আমি রূপে তোমায় ভুলাবো না।’ অন্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আঁখি হালদার টিপু চৌধুরী ও রাবেয়া আক্তার। তারা একে একে পরিবেশন করেন, ‘বরিষ ধারা মাঝে’, ‘আমি তোমার প্রেমে’ ও ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন’। পরে লোকনাট্য দল পরিবেশন করে নাটক ‘রথযাত্রা।’ উৎসব মঞ্চে এ আয়োজনটি একটু নতুন বলতে হবে। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন খ্যাতিমান বাচিক শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে এদিন সম্মাননা জানানো হয় দেশের বিখ্যাত শিল্পী হাশেম খানকে। ঊনত্রিংশ জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবের উদ্দেশ্য ও ভাবনা পরিষ্কার করে সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, এখন নানা অশান্তি। অস্থিরতা। এর মধ্যেই একটু প্রশান্তির জন্য উৎসবের আয়োজন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের মধ্যে কোন অস্থিরতা নেই। অশান্তির কারণটা নেই। এই সঙ্গীত অবলম্বন করে নিজেরা সুস্থির থাকতে চাই, অন্যদেরও একটু প্রশান্তি দান করি। বিশেষ করে নবীন প্রজন্ম যারা অস্থিরতায় ভুগছেন এবং যারা অস্থির হলে ভবিষ্যত খুব খারাপ হতে পারে, তাদের অনুষ্ঠানে আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। উৎসব প্রতিদিন একই সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে। চলবে শনিবার পর্যন্ত।
×