স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ বন্দকি জমি ফিরে পেতে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করায় এবং জমি লিখে দিতে অস্বীকার করায় সাতক্ষীরায় এক কৃষককে ঘুমন্ত অবস্থায় পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বামীকে রক্ষা করতে যেয়ে আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন তার স্ত্রী। বুধবার শেষরাতে কলারোয়া উপজেলার জয়নগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারাত্মক জখম আব্দুল হামিদকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ আব্দুল হামিদ (৫২) কলারোয়া উপজেলার জয়নগর গ্রামের সাজ্জাদ আলী মোল্লার ছেলে।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে কুয়েতে যাওয়ার সময় একই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিনের ছেলে শামীমের কাছে ১০ কাঠা জমি ২৩ হাজার টাকায় বন্ধক রাখেন। সুবিধামত সময়ে ওই জমি ছাড়িয়ে নেয়ার কথা ছিল। দুই সপ্তাহ আগে তিনি তার বোন মাহমুদা বেগমকে নিয়ে ২৩ হাজার টাকা দিয়ে জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য শামিমকে বলেন। শামিম ওই জমি ফেরত দিতে অস্বীকার করে উল্টে তাকে ওই জমি রেজিস্ট্রি দলিল করে দিতে বলেন। নইলে জমির পরিবর্তে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে তিনি এক সপ্তাহ আগে ন্যায় বিচার চেয়ে জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়ের করেন। ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু উভয়পক্ষকে ডেকে বন্দক নেয়া জমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য শামীমকে এক সপ্তাহ সময় দেন। জমি ফিরে পাওয়ায় জন্য পরিষদে অভিযোগ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন শামীম, তার ভাই সেলিম ও একই গ্রামের কাশেম সরদারের ছেলে ইউপি সদস্য চারটি নাশকতার মামলার আসামি বজলুর রহমান। তারা তাকে হামিদকে জমি লিখে না দিলে খুন করার হুমকি দেয় বলে হামিদ অভিযোগ করেন।
অগ্নিদগ্ধ আব্দুল হামিদ জানান, বুধবার রাত তিনটার দিকে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থা মশারির ওপর দিয়ে পেট্রোল ছড়িয়ে দিয়ে বিছানায় আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। আগুন তার শরীরে লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি টর্চের আলো মেরে শামীম, সেলিম ও বজলু মেম্বরসহ কয়েকজনকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন বলে তিনি জানান। তার চিৎকারে স্ত্রী জাহানারা তাকে রক্ষা করতে গেলে তিনিও দগ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিল জানান, আব্দুল হামিদের দুই হাত, কপাল ও মাথার কিছু অংশ দাহ্য পদার্থে পুড়ে গেছে। আব্দুল হামিদের স্ত্রী জাহানারা খাতুনের অভিযোগ, বুধবার তার স্বামীকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় শামীম হোসেন, সেলিম হোসেন ও বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। উপরন্তু সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এফএম তারেক ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এফএম তারেক হোসেন জানান, জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ বা তৃতীয় কোন পক্ষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে সহকারী উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম একটি পেট্রোল রাখার ছোট পাত্র ও কাপড় জড়ানো পেট্রোল ভেজানো একটি ছোট লাঠি উদ্ধার করেছেন। প্রথমে চিকিৎসা ও পরে মামলা করার জন্য আব্দুল হামিদকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
