ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মাহবুব মোমতাজ

আওয়ামী লীগ মানে জনগণ

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আওয়ামী লীগ মানে জনগণ

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এসে কি করেছিল দেখা যাক- বিএনপি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী রাজাকার আলবদর আল শামস্ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করেছিল। রক্তের দামে কেনা জাতীয় পতাকাকে কলঙ্কিত করেছিল। শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইসহ উগ্র জঙ্গীরা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে দেশছাড়া করতে ধর্ষণ, হত্যা, বাড়িঘরে লুটপাট করেছিল। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। ওয়ার্র্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ৫ দল নেতা বর্তমান বিমান এবং পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে পার্টি অফিসের সামনে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি ও বোমা হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাস বলেছিলেন নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হানিফকে ঢাকা থেকে বের করে দেয়া হবে। জনগণের ভালবাসায় হানিফ সাহেব মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে লালবাগে বিএনপির কমিশনার পরাজিত হয়ে ব্রাশ ফায়ারে ৬ জনকে হত্যা করেছিল। বিএনপি সরকার ১৮ জন কৃষককে সার চাওয়ার অপরাধে গুলি করে হত্যা করেছিল। মিরপুরে ও মাগুরায় উপ-নির্বাচনে সমস্ত আইন-কানুন উপেক্ষা করে সন্ত্রাসী কায়দায় ভোট ছিনতাই করে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছিল। পাকিস্তানের দালাল যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব প্রদান করে কলঙ্কিত করা হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানকে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হত্যা নির্যাতন খুন গুম আর মিথ্যা বানোয়াট কথার জবাব দিয়ে জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ও জাতির জনকের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রক্ষা করতে জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে ১৫ আগস্টের হত্যার বিচারকার্য শুরু করে। ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কাজ শুরু করা হয় এবং ২ ডিসেম্বর অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের অশান্তি দূর করে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ‘শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষর করা হয়। এই চুক্তি বাঙালী ও পাহাড়ীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি আদায় করে। ১৯৯৮ সালে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে পুরো বাংলাদেশের যোগাযোগ ঘটে ‘বঙ্গবন্ধু সেতুু’র দ্বার উন্মোচনের মধ্য দিয়ে। ২০০১ সালে ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সারাদেশে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, খুন, গুম, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো হয়। ওই আমলে ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ১ বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ৫০ জনের অধিক আহত হয়। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলায় ২০০ জন আহত হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই পরে মারা যায়। ৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ৪টি সিনেমা হলে বোমা হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে হত্যা করা হয়। একই বছর ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখে ফেরার পথে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি ও বোমা হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একসঙ্গে ৬৩টি জেলায় বোমা হামলা চালানো হয়। একই বছর ৩ অক্টোবর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামে আদালতে বিচার চলার সময় বিচারকদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। ঝালকাঠির দুই বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে জঙ্গীদের হামলায় প্রাণ হারান। হত্যা, জঙ্গীবাদ, খুন, লুটতারাজ, গুম আর জামায়াত-শিবির পুনর্বাসন ছিল বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছরের ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে জটিলতা সৃষ্টি করে বিএনপি। বিচারপতি কে এম হাসানকেই বিএনপি তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চায়। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে কে এম হাসান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব না নিতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিনের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে আন্দোলন শুরু করলে ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরী আইন ঘোষণা করা হয় এবং ইয়াজউদ্দিন আহমদ পদত্যাগ করেন। ১২ জানুয়ারি ফখরুদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় বসেন। সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ রাজনীতিতে মাইনাস টু ফর্মুলা হাজির করেন। এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালে শেখা হাসিনা মুক্তি পান। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ থেকে ক্ষুধা দারিদ্র্য দূর করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন। নবম সংসদের প্রথম অধীবেশন বসে ২৫ জানুয়ারি। ২৯ জানুয়ারি সংসদে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে শেখ হাসিনা কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। শেখ হাসিনার সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলাই ছিল বিডিআর বিদ্রোহ। দেশের অভ্যন্তরে যে কোন নৈরাজ্য, অশান্তি সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা দলকে প্রশ্রয় দেন না শেখ হাসিনা। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বিডিআর বিদ্রোহকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের শুধু ধারণা নয়, কার্যকরভাবে জনগণের দোরগোড়ায় উন্নয়নের সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশকে নিয়ে চলেছেন। একটি আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জনগণের পাশে থেকে মাঠ পর্যায়ে দেখভাল করছেন। উন্নয়নের সুফল যাতে সকলে সমানভাবে পায় তার জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কারণে জনগণ তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারছেন। তথ্য প্রবাহের সহজলভ্যতার কারনে যে কোন প্রয়োজনে সরকারের নির্দেশনা কিংবা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে জনগণ সহজেই অংশগ্রহণ করতে পারেন। আইন-আদালতে সরকারের খরচে পাওয়া যায় বিচারের নিশ্চয়তা। পরিবারে সুখ-শান্তি ফিরেছে নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক সংগঠনগুলোর উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কারণে। আর তাই এসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ কিংবা নারীর প্রতি যে কোন ধরনের সহিংসতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। নারী এখন অবলা নয়, বরং উন্নয়নের অংশীদার। গণমাধ্যমের বদৌলতে ঘরে বসে সরকারের সিদ্ধান্ত, কর্মসূচী, পরিকল্পনা গ্রামের যে কোন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৩টি সরকারী টেলিভিশন, ২৬টি বেসরকারী টেলিভিশন, ২১টি এফএম বেতার ও ১৭টি কমিউনিটি বেতার চালু রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২৮০০ দৈনিক, ষান্মাষিক, মাসিক পত্রিকা দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা এখন আর কাগজে-কলমে নয়। জনগণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছে বিধায় কর্মক্ষম জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশ এখন উপার্জনক্ষম। উন্নয়নের একটি বড় নির্দেশক হচ্ছে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার। উৎপাদনে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়লে বেকারত্ব হ্রাস করা ও রফতানি আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রায় ৭৮% বিদ্যুতায়নের মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যমাত্রায় সকলের কাছে বিদ্যুত পৌঁছানো সম্ভব হবে। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের এ যাত্রায় এখন কোন সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, হত্যা আর নৈরাজ্য থাকবে না। নোংরা রাজনীতির পেছনে সময় নষ্ট করার আর সময় নেই তরুণদের। দেশ গঠনে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের এই আধুনিক ধারণার কোন বিকল্প নেই। বাঙালীর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে আবার ফিরেয়ে এনে মাছে-ভাতে বাঙালী দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবে আর শান্তির সুবাতাসে নিদ্রা যাবে এই হচ্ছে শেখ হাসিনার স্বপ্ন। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক তেজগাঁও কলেজ [email protected]
×