ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুত পানি কমছে ॥ যমুনায় নৌ চলাচল ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

দ্রুত পানি কমছে ॥ যমুনায় নৌ চলাচল ব্যাহত

সমুদ্র হক ॥ যমুনার খেয়াঘাট। খেয়া পারাপারে অচলায়তন। খেয়া পারের মাঝি মাল্লাদের অলস থাকার সময় শুরু। যে ঘাটগুলো দিয়ে প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৩শ’ নৌকা চলাচল করত সেখানে এখন কয়েকটি চলাচল করে। মাঝি সামসুল বললেন ‘যেঙ্কা করে নদী শুকে যাচ্ছে মরা গাঙ হতে আর সময় লাগবি ন্যা (যেভাবে নদী শুকানো শুরু করছে তাতে মরা নদী হতে আর সময় লাগবে না)।’ শুকনো মৌসুমের শুরুতেই যমুনার পানি নিত্যদিন অস্বাভাবিক হারে কমে চর জেগে উঠছে। এখনই এক চর থেকে আরেক চরে পৌঁছতে ট্রানজিট করতে হয়। প্রকৃতি দিনে দিনে নৌপথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। যমুনায় জেগেছে অসংখ্য চর। ডুবোচরও পড়েছে কয়েকটি পয়েন্টে। নদী শুকিয়ে খেয়া পারাপার রুদ্ধ হয়ে গেলে দূরের চরগ্রামের মানুষকে যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের মূল খেয়াঘাট কালিতলা পয়েন্ট দিয়ে অন্তত ২৪টি রুটে নৌচলাচল করে। চর জেগে উঠলে স্থানীয় ১৪টি রুট ও আঞ্চলিক তিনটি মোট ১৭টি নৌরুট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এবার শুকনো মৌসুমের শুরুতে নৌ রুটগুলোর প্রায় ১২টি কোন রকমে চালু আছে। মাঝিমাল্লারা বলছেন, যেহারে চর জাগছে তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে ১৭টি নৌ রুট রুদ্ধ হয়ে যাবে। নৌ রুট রুদ্ধ হওয়ার সঙ্গে খেয়া পারাপারকে ঘিরে খেয়া পয়েন্টে ছোট বাজারে পরিণত হয়ে যে ব্যবসা গড়ে উঠেছিল তাও বন্ধ হয়ে যাবে। কেন এত চর জাগছে! অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়, নদীর নাব্য কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। ঢলের পানি এসে পলি পড়ে নাব্যকে আরও কমে দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কথা- নদী ড্রেজিং করতে হবে। কেন ড্রেজিং হচ্ছে না, এর সোজা উত্তর বরাদ্দ নেই। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা বলাবলি করেন, চর জেগে ওঠার হার বাড়লে নিকট ভবিষ্যতে হেঁটেই যমুনা পার হওয়া যাবে। তার আলামত এখনই স্পষ্ট। চরের ওপর দিয়ে ঘোড়া ও গাধার গাড়িতে করে লোকজন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা যাচ্ছে। পণ্য পারাপার করছে এইসব গাড়ি। এক সূত্র জানায় গত কয়েক বছরে যমুনায় চর পড়েছে অন্তত ১৫শ’ বর্গকিলোমিটার। গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে যমুনার চর দৃশ্যমান বেশি। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি যমুনার চর। এইসব চরে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। স্থানীয়রা জানান কাজলা, বোহাইল, চন্দনবাইশা, কর্নিবাড়ি, চালুয়াবাড়ি, কামালপুর ও হাটশেরপুর এই ৭ ইউনিয়নের মধ্যে প্রবাহিত যমুনায় অন্তত ৬৫টি চর পড়েছে। বগুড়া অংশের যমুনার ওপর দিয়ে সিরাজগঞ্জ গাইবান্ধা জামালপুরের লোকজন নৌকায় চলাচল করে। সারিয়াকান্দির সঙ্গে পাকুল্ল্যা, সোনাতলা, ধুনট, চন্দনবাইশা, কাজলা, বোহাইল, বেনিপুর, মানিকদাইর, চালুয়াবাড়ি, হাসনারপাড়া, দিঘাপাড়া কামালপুর কর্নিবাড়ি নয়াপাড়া, মথুরাপাড়া, আওলাকান্দি, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি (যমুনা সার কারখানা), গাইবান্ধার ফুলছড়ি, বালাসী, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর রুটে নৌচলাচল এখনই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এক সপ্তাহ পর এইসব এলাকায় নৌকায় পারাপারে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরের মানুষকে। কালিতলা ঘাটের কাছে বসবাসকারীরা বললেন, বছর কয়েক আগে যমুনার ভাটিতে রোহদহ ও চন্দবাইশা এলাকায় নদীর তীব্র ¯্রােতে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। নদীর গতিপথ পাল্টে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে নদীর উজানে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে জেগে ওঠে অসংখ্য ডুবোচর। দীঘলকান্দি, হাসনারপাড়া, দেলুয়াবাড়ি অন্তরেরপাড়া, কালিতলায় গ্রোয়েনের কাছে পানি দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই এলাকায় এখনই সহজে নৌকা ভিড়তে পারছে না। চরের মানুষের ভোগান্তির পালা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেও কালিতলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মথুরাপাড়ায় নৌকা ভিড়তো। সেখানেও এখন ডুবোচর। ওই জায়গা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিতে কুতুবপুরের মাদারগঞ্জ ঘাটেও ডুবোচরের কারনে নৌকা ভিড়তে সমস্যা হচ্ছে।
×