ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা

দেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রাণিজ আমিষ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ আমিষের ঘাটতি মেটাতে এই শিল্প রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের আমিষের ঘাটতি রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্যের ক্রম উর্ধগতির এ সময়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের আমিষের যোগানে একমাত্র উৎস এখন পোল্ট্রি মুরগির ডিম ও মাংস। গরু, মহিষ, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংসের দাম অনেক বেশি। এসব সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক ও সাধ্যের মধ্যে রয়েছে শুধু পোল্ট্রির মাংসের দাম। ফলে আমিষের দৈনন্দিন চাহিদার সিংহভাগই পূরণ করছে এ খামারি পণ্যটি। জানা যায়, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে দৈনিক মুরগির মাংসের উৎপাদন হয় প্রায় এক হাজার ৮৫১ টন। এ হিসাবে বছরে মাংস উৎপাদন হয় ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৬১৫ টন, যা দেশের মোট মাংসের চাহিদার সিংহভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষের শরীরে গড়ে ৬০ গ্রাম করে মাংসের প্রয়োজন। কিন্তু গরু বা খাসির দাম একটু বেশি হওয়ায় ইচ্ছা করলে সে চাহিদা পূরণ করা যায় না। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু মানুষ আমিষের চাহিদা ঠিকই পূরণ করতে পারছে। পোল্ট্রি খাতের বিপ্লবের কারণে কম দামে মুরগির মাংস কিনতে পারছে সাধারণ মানুষ। শুধু মাংসের চাহিদা নয়, দেশের মোট ডিমের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে এ খাত থেকে। তথ্য অনুসারে দেশে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হচ্ছে দুই কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ। ফলে বাজারে ডিমের দাম এখনও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। আশির দশকে এ শিল্পে দেশে মোট বিনিয়োগ ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সরকারের সরাসরি সহযোগিতা পেলে ২০২০ সাল নাগাদ বিনিয়োগ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। সেইসঙ্গে প্রায় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। শুধু তাই নয়, কখন দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মুরগির মাংস ও ডিম রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর জন্য এই শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য করতে হবে। বর্তমানে দেশে পোল্ট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে আশার কথা, পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন খরচ কমাতে এখন দেশেই খামারিরা প্রয়োজনীয় ফিড উৎপাদন করছে। তবে সব জায়গায় এই উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রত্যেক জেলায় এই উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি দেশে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই বাচ্চা উৎপাদনের বিষয়টি এখনও পার্শ্ববর্তী দেশনির্ভর। ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়াতে এই শিল্পের উন্নয়নে এই বিষয়গুলোর প্রতি আরও মনোনিবেশ জোরদার করা দরকার।
×