ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ

দেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কে কখন কোথায় বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যমূলক পোস্ট দিয়ে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালায় তা আগাম ধারণা করা সম্ভব নয়। সে কারণেই প্রয়োজন ফেসবুকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ। বাস্তবতা হলো ফেসবুকের মতো ভার্চুয়াল মাধ্যমে, যা একটি চাবি টিপেই অদৃশ্য করা বা মুছে ফেলা সম্ভব, সেই মাধ্যমের কোন ছবি বা পোস্টকে কেন্দ্র করে একটি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ঢালাও আঘাত হানার মতো অত্যন্ত নিন্দনীয় অপকর্ম হচ্ছে। অথচ প্রযুক্তি দিয়ে প্রযুক্তিকে মোকাবেলার সুযোগ রয়েছে। দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর বিষয় ঠেকাতে আইএসএস (ইন্টারনেট সেফটি সল্যুশন) প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেটি কতখানি কার্যকর সে প্রশ্ন উঠেছে রংপুরে ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দুদের ওপর হামলার পর। ইন্টারনেট সেফটি সল্যুশনের মাধ্যমে বাইরের আপত্তিকর কনটেন্ট ফিল্টার্ড হয়ে প্রবেশ করে থাকে। এই পদ্ধতি যথার্থভাবে দেশে চালু থাকলে ইন্টারনেটে বাড়বে দেশের মানুষ এবং নারীদের নিরাপত্তা। এটা ঠিক যে, সরকার সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও আপলোড, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়া, গুজব ছড়ানোসহ হয়রানি বন্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ফেসবুক বাংলাদেশে দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এই যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারী। ফেসবুকের ব্যবহার মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যেমন অবাধ করেছে, তেমন বিকশিত করেছে জানার অধিকারকে। পাশাপাশি ফেসবুকের অপব্যবহারও বাড়ছে। প্রতারক ও মতলববাজরা ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। ধর্মান্ধতা উসকে দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে এ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অজান্তে ফেসবুকে তাদের নামে ভুয়া আইডি খোলার প্রবণতা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলেছে। ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় ও দরকারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা সমীচীন নয়। তাই এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের সরকারী ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি গভর্নমেন্ট কমিউনিকেশন হেডকোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) নজরদারি করে থাকে ফেসবুক ও ইউটিউবের বিভিন্ন তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) যখন বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নজরদারি চালিয়ে আসছিল, তখন জিসিএইচকিউও ২০১২ সালে তাদের নজরদারির সক্ষমতা প্রদর্শন করে। এই নজরদারি রিয়েল-টাইমেই করা হতো। অর্থাৎ জনপ্রিয় এই দুই প্ল্যাটফর্মে প্রতিমুহূর্তের আপডেটগুলোই নখদর্পণে রাখত জিসিএইচকিউ। দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই এই সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্ব সাইবার অপরাধ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। এ ব্যাপারে এখনও আমাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সাম্প্রতিককালে দেশে যেসব সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার ভেতরে প্রধান হচ্ছে ব্যক্তিগত হয়রানি। কারও সম্পর্কে মানহানিকর বা আপত্তিকর কথা ও ছবি পোস্ট করা হয় ফেসবুকে। সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের ফলে এই অপরাধের মাত্রা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে নারী সংক্রান্ত সাইবার অপরাধের মাত্রা বেশি। তবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো সাইবার অপরাধ নিঃসন্দেহে গুরুতর। এটির প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কার্যকর কারিগরি ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। সেজন্যে বিশেষজ্ঞদের অভিমত বিবেচনা সাপেক্ষে সামনে এগুতে হবে। আর দেরি নয়।
×