ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় বাসের বিরুদ্ধে অভিযান ১৯ নবেম্বর থেকে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় বাসের বিরুদ্ধে অভিযান ১৯ নবেম্বর থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১৯ নবেম্বর থেকে রাজধানীতে অবৈধভাবে পরিচালিত মেয়াদহীন ও বিশ বছরের পুরনো লক্কড়ঝক্কড়, লাইসেন্সবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে দখলে থাকা গুলিস্তান বঙ্গবাজার সংলগ্ন আনন্দবাজার বস্তিতে গড়ে তোলা মাদকের আখড়া ভাঙ্গতে যে কোন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জমি দখল করে নতুন বাসস্ট্যান্ড স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র। অপরদিকে পুরান ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের চিহ্নিত ৩শ’ ৬৭টি কেমিক্যাল গোডাউনও উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। রবিবার ডিএসসিসির নগর ভবনে ব্যাংক ফ্লোরে রাজধানীতে সেবাদানকারী সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত ২৬ টি সংস্থার প্রধানকে সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে মেয়র এসব কথা বলেন। এছাড়াও ১ ডিসেম্বর থেকে বাস্তবতার আলোকে সকল পার্কিং চিহ্নিত করে অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার ও পুরান ঢাকার অবৈধ দখলে থাকা সকল রাস্তা দখলমুক্ত করা হবে এবং গাবতলী থেকে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত রাস্তার কাজ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর আগামী ১ জানুয়ারি শুরু করবে বলে জানান মেয়র। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয় সভায় রাজধানীর সেবাদানকারী ২৬ সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে সংস্থার প্রধানদের থাকা বাধ্যতামূলক বলা হলেও পূর্বের প্রতিটি সভায় কোন কোন সংস্থার নি¤œ পর্যায়ের কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এই অবস্থা নিরসনে মেয়র সাইদ খোকন কঠোরভাবে সেসব সংস্থার প্রতিনিধিদের বলেন, পরবর্তী সভায় এ রকম প্রতিনিধি পাঠালে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। মেয়র জনস্বার্থ রক্ষার অতি গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় সভায় সংস্থা প্রধানের চেয়ে অতি কম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি উপস্থিত হওয়ায় এক কর্মকর্তাকে মিটিং থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সাইদ খোকন বলেন, জনস্বার্থে ও শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় ডিএসসিসির সীমানায় মোট ৪ থেকে ৫ টি স্পটে একটানা মাসব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানটি বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদফতর, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ও ডিএসসিসির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হবে। এছাড়া আজিমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হবে। রাস্তায় যত্রতত্র বাস থামতে দেয়া হবে না। মেয়র বলেন, রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড বর্তমানে সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অতিদ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের গুলিস্তান আনন্দ বাজারের জমিটি ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড স্থাপনের জন্য প্রদান করতে রেলমন্ত্রী নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও আমরা এখনও সেই জমিটি বুঝে পাইনি। তাই বাসস্ট্যান্ড স্থাপনের জন্য এই জমিটি বুঝে পেতে শীঘ্রই রেলওয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষিক বৈঠক করা হবে। বর্তমানে রাজধানীর অন্যতম মাদক বিক্রির স্থান হিসেবে আনন্দ বাজারের বস্তিটি পরিণত হয়েছে। বৈঠক শেষে জমিটি দখলের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) র‌্যাব ও ডিএসসিসি যৌথভাবে উচ্ছেদ পরিচালনা করবে। বর্তমানে বস্তিটি পাইকারিভাবে মাদক বিক্রির জন্য নির্ভরযোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছে। পুরান ঢাকার রাস্তা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এমনকি নতুন করে বাড়ি তৈরিতে রাজউকের নির্দেশ মানছে না বাড়ির মালিকরা। এ বিষয়ে রাজউকের করণীয় জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেয়রকে বলেন, আমরা এতদিন নির্মিত পুরনো বাড়িগুলোকে সরকারী নিয়মের আওতায় এনেছি। কিন্তু নতুন করে কোন বাড়ি তৈরিতে যেন কোন নিয়মের ব্যত্যয় না হয় সেজন্য কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। এছাড়া আমরা অতিদ্রুত পুরান ঢাকার অলিগলিতে রাস্তা দখল কে কতটুকু করেছে তা মেপে রাস্তা উদ্ধারে নামার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। শীঘ্রই পুরান ঢাকায় নক্সা অনুযায়ী অবৈধভাবে দখলে থাকা সকল রাস্তা উদ্ধারে মাঠে নামব। এছাড়া সকল পার্কিং দখল মুক্ত করা হবে। চেয়ারম্যান বলেন, রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করতে আমরা রাজধানীর মোট ৫শ’টি ফাঁকা স্থান চিহ্নিত করেছি। যেগুলো লিজ প্রদানের মাধ্যমে পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। সভায় অবৈধ খাল দখল উচ্ছেদ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীর সকল খাল অবৈধভাবে দখলকারীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ৬টি খাল উচ্ছেদ পরিচালনা করা হলেও কোন প্রকার সীমানা নির্ধারণে স্থায়ী স্থাপনার মাধ্যমে তা রক্ষা না করায় পুনরায় দখল হয়ে যাচ্ছে। তাই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন করার দাবি জানানো হয়। বাকি খালগুলো পরিষ্কার করা ও পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মেয়র। ওয়াসার পক্ষ থেকে এমডি তাসকিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল বদ্ধ কালভার্ট পরিষ্কার করা হবে। এছাড়া খোলা কালভার্টে যাতে করে কোন প্রকার ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন না থাকে বা না ফেলা হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলমান রয়েছে। রাজধানীতে মোট ৩ শ’ ২১ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। তবে এর মধ্যে ডিএসসিসি এলাকায় মোট ১০টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার করা হয়েছে। মোট ৩৫টি ভবন অতি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে ২৪ টি ভবন ইতোমধ্যেই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বাকি ১১ টি ভবনও যে কোন সময় ভাঙ্গা হবে। পোস্তগোলা ব্রিজ ও মাতুয়াইলের রাস্তা সম্পর্কে সড়ক ও জনপথের প্রতিনিধি বলেন আগামী জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে এসব রাস্তা পূনঃনির্মাণ বা সংস্কার করা হবে। এছাড়া গাবতলী থেকে শিকদার মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত রাস্তার কাজ তথা বেড়িবাঁধ রাস্তার কাজও একই সময়ে শুরু করা হবে। যানজট প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় যানজটের অন্যতম কারণ, যত্রতত্র সভা-সমাবেশ করা। দেখা গেল, শাহবাগে ২০-৩০ জন বসে পড়লেন। কিন্তু তারা এটি বুঝলেন না যে, তাদের কারণে লাগা যানজটে কত লোকজনের কষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানীর বাসিন্দাদের যানজটের ভোগান্তি কমাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ছুটির দিনে সভা-সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ সে আহবানে সাড়া দিয়েছে। কিন্তু অন্য দলগুল তা করেনি। মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে সমন্বয় সভায় ডিএসসিসির পূর্ব সমন্বয় সভায় গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের হার তুলে ধরে বিভিন্ন সংস্থা। এতে ২৬ টি সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা মোট ২৪ টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করেন।
×