ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার প্যারাডাইস পেপার্স ফাঁস ॥ মহাকেলেঙ্কারি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৭ নভেম্বর ২০১৭

এবার প্যারাডাইস পেপার্স ফাঁস ॥ মহাকেলেঙ্কারি

পানামা পেপার্সের পর এবার প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারি। এবারের তালিকায় উঠে এসেছে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরকারের ঘনিষ্ঠজনসহ অনেক ধনীর নাম। রবিবার এই আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হয়। বিবিসি। প্যারাডাইস পেপার্স নাম দিয়ে ফাঁস হওয়া ১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন আর্থিক কেলেঙ্কারির নথি প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) এটি প্রকাশ করেছে। গত বছর পানামা পেপার্স প্রকাশের নেপথ্যেও ছিল এই গ্রুপ । বিবিসির প্যানোরমা টিম তদন্তকারী সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করেছে। প্রতিবেদনটিতে ১৮০ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির নাম এসেছে, রয়েছে ৭১৪ ভারতীয়র হিসাববহির্ভূত সম্পত্তির বিবরণ। ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ, পপ সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনা ও মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীসহ বিশ্বের বহু ধনকুবেরের গোপন ব্যবসার বিবরণ। রানি এলিজাবেথ একটি অফশোর কোম্পানিতে ব্যক্তিগতভাবে ১ কোটি পাউন্ড (১ কোটি ৩ লাখ ডলার) বিনিয়োগ করেছেন। কর এড়াতেই রানি সম্ভবত ওই অর্থ অফশোর সংস্থায় বিনিয়োগ করেন। ডুচি অব ল্যানচেস্টার নামের প্রতিষ্ঠানটি কেম্যান আইল্যান্ডস এ্যান্ড বারমুডায় বিনিয়োগ করেছে। ডুচি অব ল্যানচেস্টার রানির ব্যক্তিগত ৫০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ ও আয়ের বিষয়টি দেখাশোনা করে। বিবিসি জানিয়েছে, এই বিনিয়োগে অবৈধ কিছু নেই এবং রানি কর দিচ্ছেন না বলেও এটা ইঙ্গিত করছে না। তবে রাজপরিবারের অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত কিনা সে প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়। গরিব ঠকানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রিটিশ কোম্পানি ব্রাইট হাউজেও রানির বিনিয়োগ রয়েছে। যুক্তরাজ্যজুড়ে কিস্তিতে ইলেক্ট্রনিক, গৃহস্থালি পণ্য ও আসবাব সরবরাহ করে ব্রাইট হাউজ। এর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। কর ফাঁকির এই নথিতে নাম এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের। নব্বইয়ের দশকে ট্রাম্পকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করে রস। প্রেসিডেন্ট হয়ে তাকে বাণিজ্যমন্ত্রী করেন ট্রাম্প। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, রস একটি শিপিং কোম্পানি থেকে লাভের অর্থ নেন। প্রতিষ্ঠানটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জামাতা ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা দুই রুশের মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস সরবরাহ করে কয়েক বছরে বিপুল অর্থ আয় করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ক্যাম্পেন টিমের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। বিষয়টি ট্রাম্পকে বেশ অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। এখন নতুন করে বাণিজ্যমন্ত্রীর রুশ সংশ্লিষ্টতা তাকে আরও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ স্টিফেন ব্রনফম্যানের অফশোর কোম্পানিতে লেনদেনে সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। ব্রনফম্যান ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির প্রধান তহবিল সংগ্রাহক। এ ঘটনা কর ফাঁকি ঠেকাতে সোচ্চার ট্রুডোকে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলবে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান ও অন্যতম অর্থদাতা লর্ড এ্যাশক্রফটের অফশোর বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে, ২০০০ সালে বারমুডার পুন্টা কোরড ট্রাস্টে তিনি কয়েক কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন। এবার নাম উঠে এলো ৭১৪ ভারতীয়র। আশঙ্কা করা হচ্ছে তাদের কর ফাঁকির দায়ে তারা ফেঁসে যেতে পারেন। ৬৭ দেশের ১শ’ মিডিয়া গ্রুপের ৩৮০ সাংবাদিক এখন এসব নথি বিশ্লেষণ করেন। প্রাথমিকভাবে নথিতে ১৮০ দেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। বেশিরভাগ ঘটনা রাজনীতিক, বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সেলিব্রিটি। বিশাল অর্থসম্পদের ওপর বিপুল পরিমাণ সরকারী কর এড়াতেই তারা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন।
×