ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিএ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৭

সিপিএ সম্মেলন

কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণের সময় এখন। সদস্য দেশগুলোকে বিবিধ সমস্যার সমাধানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জোরদার করতে হবে দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। বিনিময় করতে হবে অভিজ্ঞতা, যা পরবর্তী সময়ে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই বিনিময় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে পারবে। আর এই সুযোগ এনে দিয়েছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলন। অবশেষে ঢাকায় হচ্ছে এই সম্মেলন। আজ রবিবার সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশী অতিথিরা ইতোমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন। সম্মেলন চলবে ৮ নবেম্বর পর্যন্ত। গত ১ নবেম্বর শুরু হওয়ার পর চারদিন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি এ্যাসোসিয়েশনের তেষট্টিতম সম্মেলন। এতে বায়ান্নটি সদস্য দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ৫৬ জন স্পীকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পীকার, ছয় শতাধিক সংসদ সদস্যসহ দেড় হাজার প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এছাড়া ৪৪টি দেশসহ প্রায় ১৪৪টি সিপিএ ব্রাঞ্চ-শাখা এতে যোগ দিচ্ছে। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘কনটিনিউয়িং টু এনহ্যান্স দ্য হাই স্ট্যান্ডার্ড অব পারফরম্যান্স অব পার্লামেন্টারিয়ান।’ সম্মেলনে ৮টি কর্মশালা ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনা এবার বিশ্বের ৫২টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। সম্মেলনের সূচীতে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য কোন নির্ধারিত এজেন্ডা ছিল না। তাই বিশ্ববাসীকে জানাতে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করা হবে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাকারীদের পাশাপাশি পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যে শিষ্টাচারবহির্ভূত আলোচনা হয়েছে তা নিয়েও সরব থাকবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। আমাদের সংসদে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ২৫ মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়েও তৎপর থাকছে বাংলাদেশ। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাই একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে। গত সম্মেলনে পাকিস্তান যোগ না দিলেও এবারের সম্মেলনে তারা অংশ নিচ্ছে। এক বছর আগে বাংলাদেশে সিপিএর ৬২তম সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও গত বছরের পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানের ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলায় হতাহতের ঘটনায় বহু দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছিল। অস্ট্রেলিয়াসহ অনেকে সম্মেলনে অংশ নেয়ার অনাগ্রহ প্রকাশের পর স্থগিত করা হয়েছিল ওই সম্মেলন। এবার কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্ব জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের ফলে সারাবিশ্বে ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বণ নিঃসরণের ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। এতে জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। ফলে বিশ্বজুড়েই বাড়ছে ঝুঁকি। বিপন্ন হয়ে পড়েছে অনেকেরই জীবন-জীবিকা। বিশেষত উপকূলীয় দেশগুলো এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। যে কোন মুহূর্তে ওই দেশগুলোর অস্তিত্ব হতে পারে বিলীন। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই সদস্য দেশগুলোর। প্যারিস চুক্তির আলোকে জলবায়ুর অভিঘাত ও ক্ষতি মোকাবেলায় ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য সিপিএর চেয়ারপার্সন ও স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আহ্বান জানিয়েছেন প্রাক সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে। সিপিএ অঙ্গীকার করেছে সংসদের নারী-পুরুষের সমতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার। ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য বিশ্বের তরুণ সমাজকেও দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সিপিএ তার নানামুখী কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে আগ্রহী। সম্মেলনে নয়া চেয়ারপার্সন নির্বাচন করা হবে। এই সম্মেলন সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অন্তত যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করবে এই প্রত্যাশা।
×