ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ নভেম্বর ২০১৭

শীতের আমেজ

শীতের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাতাসে এখন শীতল পরশ। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া শুরুর সময় এসে গেছে। সত্তর দশকের বাংলাভাষী কবি লিখেছিলেন, শীতকাল কবে আসবে, সুপর্ণা? জবাবে বলা যায় এবার আগাম আসছে শীত। প্রকৃতিতে যদিও এখন হেমন্তকাল। দিনের বেলায় গরম থাকলেও রাতে শীত পড়ছে। তবে তা এখনও জেঁকে বসেনি। তাপমাত্রা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ষড়ঋতুর এ দেশে একেকটি ঋতু আসে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকলে ঋতুর কাল বদলে যাচ্ছে। এবার তো গ্রীষ্ম আর বর্ষা একাকার হয়ে গেছে। ঋতুবৈচিত্র্যের পালাবদলে ওলটপালট হয়ে গেছে। প্রকৃতির পালাবদলের সঙ্গে বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। প্রকৃতির মধ্যে সাড়া পড়ে যায় বদলে যাওয়া সময়ের স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতায়। আমলকীর বনে বনে শীতের কাঁপন জেগে ওঠার সময় দ্রুত আসছে। অনিবার্যভাবেই প্রকৃতিতে ঘটে কিছু পরিবর্তন। শীতকালেই হেমন্তের ফসল কাটা শেষ হয়। নবান্নের সঙ্গে পিঠে-পায়েসের আয়োজন চলে। রাজধানীতে ইতোমধ্যে মৌসুমী পিঠে বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছে। শীত যেমন একদিকে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে, তেমনি তীব্র শীত জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে প্রান্তিক মানুষের। বিশেষ করে দরিদ্রজনেরা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগের শিকার হয়। গৃহহীন, ছিন্নমূলেরা অসহনীয় কষ্টের শিকার হয়। এ সময় শীতজনিত নানা রোগ-ব্যাধিও দেখা দেয়। আবহাওয়ার বিচিত্র খেলায় এবার শীত আসছে অনেক আগেই। শীত সাধারণভাবে সবচেয়ে পছন্দনীয় ঋতু অনেকের কাছেই। কার্তিকের এই মাঝামাঝি সময়ে শীতলতা প্রকৃতিতে জেঁকে বসছে। ঠান্ডা হাওয়ার কম্পন জাগছে সর্বত্র। ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন করে রাখছে রাত্রিকালীন এই পৃথিবীকে। এবার সারাদেশে হাড় কাঁপানো কনকনে শীত নামতেও পারে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। পৌষের বিদায় লগ্নে সারাদেশে বাড়বে শীতের প্রকোপ। কুয়াশার পরিমাণও বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দেবে। লেপের ব্যবহার কমে গেছে। তবুও লেপ বানানোর ধুম পড়েছে ঢাকা ও মফস্বলে। উচ্চ মধ্যবিত্ত ও বিত্তশালী মানুষ লেপের চেয়ে কম্বলই ব্যবহার করেন বেশি। দরিদ্রজনরাও কম্বল পাওয়ার আশায় তীর্থযাত্রীর মতো আশায় বসতি গড়ে। এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে যেমন, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এগিয়ে আসেন শীত পোশাক ও কম্বল বিতরণে। দরিদ্ররা এর ওপর নির্ভর করে শীতকাল কাটিয়ে দেয়। তবে এখনও এ ধরনের উদ্যোগ ততটা শুরু হয়নি। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের দশ লাখ রোহিঙ্গার জন্য শীতবস্ত্র ও কম্বল সাহায্য প্রদান করার জন্য তৎপর হতে হচ্ছে সরকার এবং সাহায্যদাতাদের। কিন্তু দেশীয় জনগণের শীত নিবারণের জন্য এখনও কেউ এগিয়ে আসেনি। শীতের প্রকোপ আসার আগেই সমাজের দরিদ্র ও হতদরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। এটি যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি সম্পন্ন জনগণেরও এগিয়ে আসা সঙ্গত। পাশাপাশি শীতজনিত নানা রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণও জরুরী। শীত মৌসুমে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নানারকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। ডায়রিয়া, জ্বর, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এসব রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। কিশোর কবি সুকান্ত সূর্যের কাছে উত্তাপ চেয়েছিলেন ‘রাস্তার ধারের উলঙ্গ ছেলেটির জন্য।’ তেমনিভাবে আমাদের মধ্যে শীতে মানবিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। আর তখনই শীত কষ্টের ঋতু না হয়ে হয়ে উঠবে উৎসবের ঋতু। শীতের সাঁঝে সবার মাঝে ফুটে ওঠা ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে যেন পড়তে পারে। আগুনের উত্তাপ যেন দেহ-মনকে করতে পারে সতেজ। কার্তিকের এই শীতের আমেজ যেন সবার জন্য হয়ে ওঠে আশীর্বাদ সেটাই হোক প্রত্যাশা।
×