ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবশুরু ৯ নবেম্বর

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবশুরু ৯ নবেম্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি, জারি-সারি কিংবা লালনের গানের সুরে যান্ত্রিক শহর ঢাকায় বইবে স্বস্তির সুবাতাস। যান ও জনজটের নগরে বসবে লোকগানের আসর। শেকড়ের সুরে সুরে সিক্ত হবে শ্রোতাকুল। দেশের লোকসঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে নিজস্ব সংস্কৃতির আশ্রয়ী পরিবেশনা মেলে ধরবেন ভিনদেশী শিল্পীরা। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি বৈচিত্র্যময় মাটির গানের মোহময়তায় জেগে থাকবে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম। আগামী ৯ নবেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব। তিন দিনের সঙ্গীত আসরটি চলবে ১১ নবেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত চলমান উৎসবে গাইবেন বাংলাদেশসহ আট দেশের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীতশিল্পীরা। শ্রোতা-দর্শকের জন্য উন্মুক্ত এ উৎসবে শামিল হতে নিবন্ধন করতে হবে অনলাইনে। ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি হচ্ছে www.dhakainternationalfolkfest.com। পহেলা নবেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। চলবে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত। উৎসবে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন ৪০ হাজার শ্রোতা। তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্টের আয়োজক সান কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। এবারের উৎসব রাঙিয়ে তোলা বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে থাকবেন শাহজাহান মুন্সি, আরিফ দেওয়ান, ফকির শাহাবুদ্দিন, শাহনাজ বেলী, শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগম। তাদের সঙ্গে অংশ নেবেন বাউলা ও বাউলিয়ানার শিল্পীরা। ভারত থেকে উৎসবে যোগ দেবেন পাপন, নুরান সিস্টার্স ও বাসুদেব দাস বাউল। থাকবে মালির গ্র্যামি বিজয়ী তিনারিওয়েন ব্যান্ডের পরিবেশনা। পরিবেশনায় অংশ নেবে পাকিস্তানের মিকাল হাসান ব্যান্ড, নেপালের লোকগানের দল কুটুম্বা, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তিব্বতের ফোকশিল্পী তেনজিন চো’য়েগাল, ইরানের ব্যান্ডদল রাস্তাক এবং ব্রাজিলের মোরিসিও টিযুমবা। এ আট দেশের শিল্পীদের সঙ্গে যন্ত্রসঙ্গীতের সহায়তায় থাকবে জাপান ও ফ্রান্সের যন্ত্রীরা। সব মিলিয়ে আপন আপন সংস্কৃতির শেকড়ের গান গাইবেন ১৪০ জন লোকগানের শিল্পী। তিন দিনের আয়োজনে উপস্থাপিত হবে ১৬টি পরিবেশনা। রবিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় উৎসবসংক্রান্ত এসব তথ্য। এতে উৎসবসংক্রান্ত নানা তথ্য উপস্থাপনসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন আয়োজক সান কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ইস্পাহানী গ্রুপের পরিচালক এমাদ ইস্পাহানী, গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজের বিপণন প্রধান মালিক মোঃ সাঈদ। সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জন চৌধুরী বলেন, দেশের লোকসঙ্গীতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তিন বছর আগে আমরা এ উৎসবের সূচনা করি। দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে চাই শহুরে মানুষের মাঝে। দেশের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে নবীন শিল্পীদের পরিবেশনার সুযোগ ঘটে এ আয়োজনের মাধ্যমে। উৎসবটি সফল হওয়ার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এ দেশের লোকশিল্পীরা। তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ উৎসব এত ব্যাপকতা পেত না। এখন এ উৎসব শুধু আমাদের নয়, এটা এখন দেশের উৎসব, দেশের গর্ব ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস। উৎসবে অংশ নেয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়া তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত দুবারের মতো এবারও দর্শকরা বিনামূল্যে শুধুমাত্র অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে উৎসব সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে মোবাইল ফোনে ওটিপি ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এবারের নিবন্ধন করতে হবে। প্রতিটি মোবাইল নম্বর থেকে একটি করে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টের নম্বর বা স্কুল/কলেজের ফটো আইডি কার্ড প্রয়োজন হবে। নিবন্ধন সফল হলে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবেশ পাস প্রিন্ট করতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলে তিন দিনের জন্য তিনটি আলাদা এন্ট্রি পাস প্রদর্শন করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে উৎসব চলাকালীন রাত দশটার পর ভেন্যুতে প্রবেশ করার সুযোগ পাবেন না শ্রোতারা। কোন ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না অনুষ্ঠানস্থলে। প্রতিদিনের উৎসব শেষে শ্রোতাদের জন্য থাকবে পরিবহন সুবিধা। ফেসবুকের ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট’ পেজটিতে পাওয়া যাবে আয়োজনের সব তথ্য। এছাড়া বিস্তারিত জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা যাবে ০১৯৪২৯৯৯৬৬৬ নম্বরে। মেরিল নিবেদিত এবারের উৎসবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ঢাকা ব্যাংক। উৎসবের ফুড পার্টনার রাঁধুনী, হট বেভারেজ পার্টনার ইস্পাহানী, লজিস্টিক পার্টনার বেঙ্গল ডিজিটাল, এ্যাসোসিয়েট পার্টনার গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স, পিআর পার্টনার মিডিয়াকম লিমিটেড, সিকিউরিটি পার্টনার এইজিস সিকিউরিটি ফোর্স, মেডিক্যাল পার্টনার স্কয়ার হসপিটালস, হসপিটালিটি পার্টনার দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, রেডিও পার্টনার রেডিও দিনরাত ৯৩.৬ এফএম, রেজিস্ট্রেশন পার্টনার টিকেটচাই এবং ব্রডকাস্ট পার্টনার মাছরাঙা টেলিভিশন। এছাড়াও ফেসবুকের ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট’ পেজ এবং নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে পুরো অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখার সুযোগ থাকবে। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাককে নিবেদিত আনিসুজ্জামানের বক্তৃতা ॥ রবিবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাককে নিবেদিত একক বক্তৃতা দিলেন ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ‘বাংলার মুসলমানের পরিচয়-বৈচিত্র্য : অষ্টাদশ শতাব্দী অবধি’ শীর্ষক এ বক্তৃতার আয়োজন করে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে আনিসুজ্জামানের জীবনকীর্তির মূল্যায়ন করে সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। একক বক্তৃতায় আনিসুজ্জামান বলেন, মনে রাখতে হবে যে, বাসস্থান ও বৈবাহিক মর্যাদার মতো ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তনশীল। তবে উদ্ভব ও ভাষাগত পরিচয় অপরিবর্তনীয়। আমরা যে পরিচয় কিভাবে ব্যবহার করি, তা নিয়ে অনেক কথা হতে পারে, তবে এতটুকু বলা দরকার যে, পরিচয়ের বহুত্ব কিছুতেই অবজ্ঞেয় নয়। দীর্ঘ বক্তৃতায় বাঙালী মুসলমানের ঐতিহাসিক বিবর্তন বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, মানুষ মাত্রেই একাধিক পরিচয় থাকে। প্রসঙ্গক্রমে যে কোন একটা পরিচয় তুলে ধরে বা গুরুত্ব দেয়; কিন্তু সেটিই তার একমাত্র পরিচয় নয়। অনেক সময় একাধিক বর্গের পরিচয়কে একসঙ্গে যুক্ত করা যায়। কিন্তু এক বর্গের সঙ্গে অন্য বর্গ পরিবর্তনযোগ্য হয় না। বাংলায় মুসলমান আগমনের সময় থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আমরা দেখি ধর্মীয় পরিচয় বেশ গুরুত্ব লাভ করেছে। সেটা দিয়েই সম্প্রদায়গত ভেদ চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু হিন্দু বললেই যেমন সে পরিচয় লাভ করত না, তার বর্ণ, অঞ্চল, পেশা না বললে পরিচয় সম্পূর্ণ হতো না। তেমনি বাংলার মুসলমান সমাজেও নানা রকম ভাগ ছিল। মূল বক্তব্যের আগে ভূমিকায় অধ্যাপক রাজ্জাক সম্পর্কে আনিসুজ্জামান বলেন, একটা উচ্চ নৈতিক মান ধারণ করতেন আব্দুর রাজ্জাক। তাই অন্যের মধ্যে কোন বিচ্যুতি দেখলে তিনি আহত ও বিচলিত হতেন। তার তিরোধানের পর অনেকগুলো বছর চলে গেছে। বাংলাদেশে মূল্যবোধের অবক্ষয় কিন্তু অব্যাহত গতিতে চলছে। তিনি হয়ত সাধারণজনের উদ্দেশে নয়, তার চারপাশে যারা থাকতেন, তাদের কাছে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন এবং তাদের কাছ থেকে একটা ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা করতেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার গভীর আস্থা ছিল। তিনি মনে করতেন ‘আমাদের মাটি, পানি ও মানুষের সম্ভাবনা অফুরন্ত’। শিল্পকলার আয়োজনে পথিকৃৎ শিল্পীদ্বয়কে স্মরণ ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে দেশের প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণে ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। চার দিনের এ আয়োজনে প্রথম দিন রবিবার বিকেলে স্মরণ করা হলো পথিকৃৎ দুই শিল্পীকে। তারা হলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসান। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের সভাপতিত্বে জয়নুল আবেদিন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক বুলবন ওসমান ও শিল্প সংগ্রাহক ময়নুল আবেদিন। পটুয়া কামরুল হাসান বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আলোচনা করেন শিল্পী নিসার হোসেন ও সুমনা হাসান। আজ সোমবার একই ভেন্যুতে স্মরণ করা হবে বরেণ্য দুই শিল্পী শফিউদ্দীন আহমেদ ও এসএম সুলতানকে। শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে শফিউদ্দীন আহমেদ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। আলোচনা করবেন সাংবাদিক আবুল হাসনাত ও শিল্পী আহমেদ নজির। এসএম সুলতান বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্পী মোস্তফা জামান। আলোচনা করবেন শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ও শিল্পী বলদেব অধিকারী।
×