ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টির কারণে গৃহায়ন অর্থায়ন মেলায় ভিড় ছিল কম

ঘরের ভেতর ঘর-হোটেলে ব্যতিক্রমী প্যাভিলিয়ন

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২১ অক্টোবর ২০১৭

ঘরের ভেতর ঘর-হোটেলে ব্যতিক্রমী প্যাভিলিয়ন

আনোয়ার রোজেন ॥ ঘরের মধ্যে ঘর! হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমের ভেতর প্যাভিলিয়ন করা হয়েছে ঘর বানিয়ে। দরজা-জানালা সবই আছে, শুধু ছাদ নেই। তবে ব্যতিক্রমী প্যাভিলিয়নটি দর্শনার্থীশূন্য। ছুটির দিন হলেও দিনভর বৃষ্টির কারণে ‘গৃহায়ন অর্থায়ন মেলায়’ ভিড় ছিল কম। শুক্রবার ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। তিন দিনের এ মেলায় অংশ নিচ্ছে ৩১টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, ৭ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৪৭ প্রতিষ্ঠান। বিকেলে মেলা ঘুরে দেখা যায়, আগত দর্শনার্থীদের বেশিরভাগ এসেছেন যাচাই-বাছাই করতে। প্লট বুকিং দেয়ার চেয়ে বাড়ি নির্মাণে কোন্ প্রতিষ্ঠান কত ভাল অফার দিচ্ছে সে খোঁজখবর নিচ্ছেন। পাশাপাশি কম খরচে টেকসই বাড়ি নির্মাণের প্রযুক্তির খুঁটিনাটি জানতে অনেকের আগ্রহ দেখা গেছে। হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) স্টলে পাওয়া গেল এমন কয়েকজনকে। স্টলে বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত গ্রামীণ বহুতল ভবনের একটি রেপ্লিকা রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তোলা বালু দিয়ে নির্মিত বিভিন্ন সাইজের ‘স্যান্ড সিমেন্ট ব্লক’। এইআরবিআইয়ের গবেষণা কর্মকর্তা মোঃ আবুল কাশেম বাড়ি নির্মাণে এসব প্রযুক্তির উপযোগিতা ও খরচের বিষয়ে দর্শনার্থীদের কৌতূহল মেটাচ্ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজকাল মাটি, বাঁশ, টিন, কাঠ ছেড়ে মানুষ বেশি ঝুঁকছে ইটের দিকে। কিন্তু ইট যেখানে তৈরি হয় সেই ইটভাঁটির কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাই ইট তৈরিতে উদ্ভাবন হয়েছে বিকল্প প্রযুক্তির। নদীর তলদেশ খনন করে বালি মিশ্রিত যে মাটি পাওয়া যায়, তা দিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে ইট তৈরি করা যায়। দেশে বাড়ি নির্মাণের মতো অকৃষি জমির পরিমাণ খুবই কম। দেশের বিপুল জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা পূরণের জন্য সুউচ্চ ভবন নির্মাণের হার বেড়ে গেছে। সেখানে প্রচুর ইট ব্যবহার হচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে এইচবিআরআই উদ্ভাবন করেছে ফেরোসিমেন্ট টেকনোলজি। এ ফেরোসিমেন্ট দিয়ে দোতলা ভবন সহজেই নির্মাণ করা যায়। গ্রামে ইটের দেয়াল দিয়ে টিনশেডের যেসব বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, সেখানে ফেরোসিমেন্ট ব্যবহার করলে ব্যয় কমবে। শহরাঞ্চলেও বাড়ি নির্মাণে এ প্রযক্তির ব্যবহার সাশ্রয়ী হবে। নদীর তলদেশের মাটি ছাড়াও এ প্রযুক্তিতে সিমেন্ট-বালি, পলিমার বা কর্কশীট, ফ্লাই এ্যাশ এবং ধানের তুষ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রযুক্তিটিকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করতেই স্টলে বিভিন্ন ধরনের রেপ্লিকা সাজানা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় এসেছেন রফিকুল ইসলাম ও সাবিনা ইয়াসমীন। প্লট বুকিংয়ের খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে মেলায় এসেছেন এ দম্পতি। বললেন, রাজধানীতে নিজেদের একটি বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। নিজের আয়ের মধ্যে সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ আছে কিনা তা জানতে মেলায় আসা। রফিক-সাবিনা দম্পতির মতো ক্রেতা দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন অফার নিয়ে এসেছে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলায় অংশ নেয়া ইউএস-বাংলা এ্যাসেটস গ্রাহকদের দিচ্ছে প্লটে মূল্য ছাড়সহ বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ। স্টল সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে ইউ-এস বাংলা এ্যাসেটসের ৮ হাজার বিঘা জায়গার ওপর ২০ হাজার রয়েছে। এরই মধ্যে ৩০০ প্লট গ্রাহকদের হাতে মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৬০০ প্লট প্রস্তুত রয়েছে। প্রস্তুতকৃত প্লট ১০ বছরের কিস্তিতে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্লটের মোট মূল্যের ওপর ২৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে প্রতি কাঠার জন্য দিতে হবে ১৩ লাখ টাকা। কাঠাপ্রতি সর্বনিম্ন মাসিক কিস্তি প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা। আর যদি কেউ এককালীন মূল্য পরিশোধ করে তাহলে তার জন্য কাঠাপ্রতি দিতে হবে ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইউএস-বাংলা এ্যাসেট মার্কেটিং ম্যানেজার শাহনেওয়াজ জানান, আমরা তুলনামূলক কম মূল্যে সেরা প্লট দেয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্দেশ্য নিরাপদ আবাসন। একই সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে যেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও কিস্তিতে প্লট কিনতে পারে সেই সুযোগ দেয়া। এছাড়া মেলায় প্লট বুকিং দিলে রয়েছে সিঙ্গাপুর/মালয়েশিয়া/ ব্যাঙ্কক রিটার্ন টিকেটসহ ভ্রমণ এবং তিন দিন দুই রাত থাকা-খাওয়ার সুযোগ। মেলায় স্টল নিয়েছে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রাহকদের বিভিন্ন মেয়াদে লোন দেয়ার অফার দিচ্ছে। দর্শনার্থীদের অনেককেই ঘুরে ঘুরে এসব প্রতিষ্ঠানের সুদ হার, কিস্তি পরিশোধ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। আজ শনিবার মেলার শেষ দিন। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×