ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামের জন্য ফ্ল্যাট

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

গ্রামের জন্য ফ্ল্যাট

দেশের গ্রামাঞ্চল অনেক আগেই তার চিরাচরিত চিত্র অনেকখানি হারিয়ে ফেলেছে। গ্রাম আর সেই আগের গ্রাম নেই; এখন গোটা বাংলাদেশ খুঁজলে হয়ত গুটিকতক বিশুদ্ধ গ্রাম মিললেও মিলতে পারে। শহরের ছোঁয়া ইতোমধ্যেই পেয়েছে গ্রামগুলো। অনেক গ্রাম হয়ে উঠেছে আধা শহর। শহরের সুবিধা এখন বহু গ্রামেই পৌঁছে গেছে। বহু এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় ধরনের উন্নয়ন ঘটেছে। বিদ্যুত ব্যবস্থাও অনেকাংশে উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে পল্লী এবং সৌর বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নতির কারণে গ্রামে বিদ্যুত পাওয়া এখন সহজতর হয়েছে। আগে টিভি সেটের কিছুটা কমতি ছিল গ্রামে। এখন অবস্থাসম্পন্ন গ্রামবাসীর বাড়িতে তো বটেই, মধ্যবিত্ত এমনকি নি¤œ মধ্যবিত্ত বহু পরিবারেও রয়েছে টেলিভিশন। বহু শিক্ষার্থী ব্যবহার করছে কম্পিউটার। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনও পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। বিত্তবানরা বহুতল ভবন নয়, গ্রামের ভিটেমাটিতে ডুপ্লেক্স নির্মাণ করে থাকেন। এখনও দেশের বহু গ্রামে পাকা দালানের তুলনায় মাটির ঘরের সংখ্যা বেশি। তাছাড়া পরিবারের লোকসংখ্যা বাড়ার ফলে কিছুটা গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করেও মানুষ বাস করে থাকে। বেশি অসুবিধা হলে চাষের জমিতেই ঘর তুলে ফেলে। গত এক দশকে এই প্রবণতা অনেক বেড়েছে। কৃষি জমিতে দোতলা পাকা বাড়িও করা হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিন কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে তা প্রতি বছরই আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে গ্রামাঞ্চলে কল-কারখানা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে। এতে ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন বলেই গ্রামে ১০ হাজার ফ্ল্যাটবাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত একটি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ওই পরিকল্পনার কথা জানান। উল্লেখ্য, এর আগে সরকার রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে গ্রাম কিংবা শহর যেখানেই ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হোক না কেন ওইসব ফ্ল্যাটে বিদ্যুত ও পানির সংযোগ থাকা আবশ্যক। সেইসঙ্গে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাও আধুনিক হতে হবে। অর্থাৎ আধুনিক আবাসনের যা যা শর্ত রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। বহুতল ভবন নির্মাণের সময় বিজ্ঞানসম্মত বিধিমালা মেনে চলা এবং নির্মাণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণÑ এসব শর্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ না করা হলে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থেকে যাবে। উঁচু ভবনে একসঙ্গে বহু লোক বসবাস করবে, তাই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো নির্মাণ পরবর্তী সময়ে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এসব ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় বহুতল ভবন থেকে যাচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে। তৈরি বহুতল ভবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এখন সময়ের দাবি। স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার কাজটিও এই সঙ্গে এগিয়ে নেয়া চাই। ন্যাশনাল হাউজিংয়ের অধীনে ফ্ল্যাট নির্মাণে সরকারই অর্থায়ন করবে, তাই প্রাইভেট নির্মাণ সংস্থার এই কাজে উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আশা করা যায়, নতুন দশ হাজার ফ্ল্যাট দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের আবাসন সমস্যা মেটাবে। সেইসঙ্গে মূল্যবান কৃষি জমিরও সুরক্ষা সম্ভব হবে।
×