ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভেন্যু না পাওয়ায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের ষষ্ঠ আসর অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

ভেন্যু না পাওয়ায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের ষষ্ঠ আসর অনিশ্চিত

মনোয়ার হোসেন ॥ গত পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় এবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের ষষ্ঠ আসরটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বরাবরের মতোই আগামী নবেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য উৎসবটির প্রতীক্ষায় শহরের সংস্কৃতিপ্রেমীরা। পাঁচ রাত ধরে চলা সঙ্গীতের এই আনন্দযজ্ঞে অংশ নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন শ্রোতা-দর্শক। তবে ষষ্ঠতম উৎসব নিয়ে এখনও পুরোপুরি অনিশ্চয়তায় রয়েছে আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। কারণ, এখন পর্যন্ত উৎসবের ভেন্যু বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ পায়নি আয়োজক প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন বলছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভেন্যুর বরাদ্দ না পেলে উৎসব বাতিল করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই শিল্পীর সংখ্যা ও সময়ের বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসরে পরিণত হওয়া উৎসবটি ঘিরে বিরাজ করছে শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা। ষষ্ঠতম উৎসব প্রসঙ্গে সোমবার কথা হয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঙ্গে। ষষ্ঠতম আসরটির আয়োজন নিয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, উৎসবের বাকি আছে মাত্র এক মাস। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা উৎসবের ভেন্যু আর্মি স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পাইনি। আমাদের সব রকম প্রস্তুতি থাকলেও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এবারের আয়োজন। বিদেশী শিল্পীসহ দর্শকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্য কোন ভেন্যুতে এ উৎসব করা সম্ভব না। মার্চের ৫ তারিখে ভেন্যুটি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে। উৎসবের জন্য ২০ থেকে ২৮ নবেম্বর পর্যন্ত ভেন্যু চেয়েছিলাম। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট চিঠির মাধ্যমে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ জানায়, নবেম্বরে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস আসার কারণেই ভেন্যু দেয়া সম্ভব হবে না। তাকে নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামের আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। যদিও পরবর্তীতে আমরা জানতে পেরেছি, পোপ ফ্রান্সিস ঢাকায় এলেও তাকে নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর ভেন্যু বরাদ্দ পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দেই। এখন পর্যন্ত সেই চিঠির কোন উত্তর পাইনি। এ অবস্থায় উৎসব আয়োজন নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও শঙ্কিত। এ সপ্তাহের মধ্যে ভেন্যু বরাদ্দ না পেলে উৎসবটি বাতিল করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। সেক্ষেত্রে বিদেশী শিল্পীদেরও জানিয়ে দিতে হবে যে এবারের উৎসবটি হচ্ছে না। কণ্ঠসঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, নৃত্যসহ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যে মানের শিল্পীরা এ উৎসবে অংশ নেয় তাতে আর্মি স্টেডিয়াম ছাড়া এ আয়োজন করা সম্ভব নয়। আর্মি স্টেডিয়াম ছাড়া বিপুল শ্রোতা-দর্শকের সঙ্গে এসব শিল্পীর নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। যেনতেন করে কোন উৎসবের আয়োজন আমরা করব না। উপায় না দেখে আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলার মাঠটি আমরা ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাণিজ্যমেলার জন্য বুক হয়ে যাওয়ায় সেটাও পাওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা এখনও হাল ছাড়িনি। এ উৎসব আয়োজনের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি। ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ২০১৬ সালে জঙ্গীবাদের হুমকিকে মোকাবেলা করে উৎসব আয়োজন করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি উৎসবটি হবে। কারণ, এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতিরই প্রতিনিধিত্ব করেছি। ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের সঙ্গীতপিপাসু ও সংস্কৃতিপ্রেমীর কাছে দারুণ সমাদৃত হয়েছে এ উৎসব। তিনি বলেন, এবারের উৎসবে ভিন্নতা আনার জন্য তাজিকিস্তান থেকে একটি ওয়েস্টার্ন অর্কেস্ট্রা টিম আনার যুক্ত হওয়ার কথা। উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে বুজ কমিউনিকেশন্স। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের উৎসব হবে কি হবে না সেটা জানে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। তবে আর্মি স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে উৎসবের সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। শিল্পীদের শিডিউল নিশ্চিত করা, তাদের আবাসনসহ উৎসবের সার্বিক বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতিতে কোন ঘাটতি নেই। এখন বিষয় হচ্ছে ভেন্যু পাওয়া। শ্রোতা-দর্শকসহ শিল্পীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় আর্মি স্টেডিয়াম ছাড়া অন্য কোন ভেন্যুতে উৎসব আয়োজন করা অসম্ভব। আর্মি স্টেডিয়াম ছাড়া এ উৎসব আয়োজনের কোন বিকল্প নেই। এদিকে এবারের উৎসবের বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানাতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ডেকেও পিছিয়ে দিয়েছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ১৮ অক্টোবরের পরিবর্তে ২২ অক্টোবর রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে এ সংবাদ সম্মেলন। সেদিনই জানা যাবে, কোথায় গড়াচ্ছে এবারের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের পরিণতি। এ পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়া উৎসবটি বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আয়োজক সূত্র জানায়, যথাসময়ে উৎসবটি না হলে আয়োজনটির শিল্পী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পারফেক্ট হারমোনি গ্লোবাল অন্য কোন দেশে এর আয়োজন করবে। কারণ, ইতোমধ্যে শিল্পীদের শিডিউল নেয়া হয়ে গেছে। ওই শিডিউল বাতিল বা পেছানোর সুযোগ নেই আন্তর্জাতিক উৎসব ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির। ২০১২ সাল থেকে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। প্রতিবছর নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ রাত ধরে চলা সুর-তাল ও লয়ের সমন্বিত এ আসর। শ্রোতা-দর্শককে সম্মোহিত করা এ আয়োজনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার সুররসিকদের সমাগমে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে উৎসব আঙিনা আর্মি স্টেডিয়াম। রাতভর শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের গান শোনা, নাচ দেখা ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনার আনন্দ উপভোগের সঙ্গে চলে মুখরোচক খাওয়া-দাওয়াসহ বন্ধু কিংবা স্বজনদের নির্মল আড্ডা। সব মিলিয়ে এ উৎসবে পাঁচটি দিন যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় যান ও জনজটের শহর ঢাকায়।
×