ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নগরবাসীর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ অক্টোবর ২০১৭

নগরবাসীর নিরাপত্তা

রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা জনসংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বহু বছর আগেই। এখন পৌনে দু’কোটি লোকের এই মহানগরীতে মানুষের গায়ে অনেকটা গা লাগার মতো দশা। নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডও চলছে এখানে সে হারে। সরকার জঙ্গী হামলা প্রতিরোধে এখন অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। স্মরণযোগ্য যে, রাজধানীতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বারবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন- সন্ত্রাসীদের শিকড় অবশ্যই খুঁজে বের করব। গত বছর পরপর দুটি জঙ্গী হামলার ঘটনায় অনেক প্রশ্নই সামনে চলে এসেছিল। জঙ্গী মোকাবেলায় করণীয় এবং সক্ষমতা সম্পর্কেও পর্যালোচনার তাগিদ তৈরি হয়েছিল। সরকার জঙ্গী দমনে বরাবরই সোচ্চার। এটা তো দিবালোকের মতো সত্য যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বিচার ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা উপলক্ষ করে দেশে জঙ্গী হামলা এবং অপশক্তির তৎপরতা বেড়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃঢ় পদক্ষেপের জন্য জঙ্গীরা আর সুবিধা করতে পারেনি। তবে রাজধানীতে বিচিত্র অপরাধ পুরোপুরি সামাল দেয়া এখনও সম্ভবপর হয়নি। একটি অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার কিছুটা অভাব অস্বীকার করা যায় না। ঢাকাকে অপরাধীদের অপতৎপরতা থেকে বাঁচাতে হলে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে অপরাধীদের কাছেও এমন বার্তা পৌঁছানো জরুরী যে, অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব নয়। অপরাধীকে খুঁজে বের করার কৌশল ও সক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এরকম পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগরীকে ডিজিটাল নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা ঢাকাবাসীকে স্বস্তি দেবে। রাজধানীর নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতেই সম্প্রতি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় গোটা রাজধানীতে বসানো হবে ৫০ হাজার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা (সিসিটিভি), যা দিয়ে ২৪ ঘণ্টা মনিটর করা হবে। এটা কার্যকর হলে রাজধানীতে ইচ্ছে করলেও কেউ কোন ধরনের অপরাধ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রদানের প্রকল্পটি সুপরিকল্পিত, তাতে সন্দেহ নেই। নিউইয়র্ক কিংবা প্যারিসের মতোই চব্বিশ ঘণ্টা সিসিটিভির আওতায় রেকর্ড করা হবে গোটা রাজধানীর কর্মকা-। ৪৯ থানা এলাকায় স্থাপন করা হবে সিসিটিভি, যা চব্বিশ ঘণ্টা মনিটর করা হবে সেন্ট্রাল সার্ভারে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে থাকবে এর মনিটরিং সেল। এখানে পালাক্রমে ডিউটি করবেন আইটি এক্সপার্ট। গোটা রাজধানীর প্রতিটি এলাকার ভিডিও ফুটেজ অঞ্চলভিত্তিক মনিটর করা হবে। প্রতিটি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও থাকবে অটো এলার্ট ও সিগন্যালিং সিস্টেম। এতে বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক ইভেন্ট কোড থাকবে। এ প্রকল্পের আওতায় পুলিশ আলাদা ব্যান্ডউইথ পাবে, যা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা ও ১২ হাজার ইমপ্রোভাইজড ওয়্যারলেস সেটে ভিডিও ফুটেজ প্রেরণ করতে সহায়ক হবে। নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ প্রকল্পটির কাজ যথাসম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে শুরু হোক, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ দক্ষতা, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি, সঞ্চার করুক- এটাই প্রত্যাশা।
×