ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় গওহর রিজভী

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১০ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘকে সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন। দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা ইস্যুকে স্থায়ী সমাধানের প্রতি জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এই সমস্যাকে দীর্ঘমেয়াদী করার চেষ্টা করা উচিত হবে না। রাখাইনে যা ঘটছে তা গণহত্যা। এই গণহত্যাকে কোনভাবেই বিশ্ব সমর্থন করতে পারে না। মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সৃষ্টি হলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হতে বাধ্য। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। রাখাইন রাজ্যে লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ করা হয়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষকে। ইতিহাসের এমন গণহত্যা কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। সোমবার বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ২০১৭’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১ বাংলাদেশ কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ২০১৭’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ বছর আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘টুগেদার ফর পিস রেসপেক্ট, সেফটি এ্যান্ড ডিগনিটি ফর অল’। আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গোটা বিশ্বের জনগণের অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অভিবাসী ও শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। বিআইআইএসএসের মহা-পরিচালন সেমিনারে মেজর জেনারেল একেএম আব্দুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। রোটারিয়ান এফএইচ আরিফ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে রোটারী ক্লাব রমনার প্রেসিডেন্ট এয়ার কমোডর (অব) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সেমিনারে সব শেষে ধন্যবাদ জানান রোটারী ক্লাব শ্যামলীর রোটারিয়ান এমএম আবিদ উল্লাহ। ড. গওহর রিজভী বলেন, জাতিসংঘ বিশে^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সফলভাবে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন ক্ষমতা নেই। তিনি নিরাপত্তা পরিষদে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা বাতিল এবং জাতিসংঘের নীতি ও কাঠমোগত সংস্কার দাবি করেন তিনি। অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাধারণ পরিষদে, নিরাপত্তা পরিষদ সেটা পর্যবেক্ষণ এবং বিবেচনা করতে পারে মাত্র। যেমন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে কোন আইন পাস হলে তা বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশে^র মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশ^ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনযজ্ঞে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে শরণার্থী সঙ্কট প্রবল হওয়া নিয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাদের এই উদ্বেগ, মনোযোগ কতদিন থাকবে সেটাই এখন বাংলাদেশের জন্য ভাবনার বিষয়। বিশে^র মনোযোগ ধরে রাখার দাবি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলেও তিনি মত দেন। বিশে^ এ মুহূর্তে সব রাষ্ট্রের জন্যই জাতিসংঘের ভূমিকা গুরুত্বপূর্র্ণ। বিশ^বাসীর ভাল-মন্দ সব কিছুর সঙ্গে জাতিসংঘ জড়িয়ে আছে। জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, বিশে^ বিভিন্ন স্থানে সংঘাত নিরসন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ সফলভাবে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, জাতিসংঘে ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই। সিদ্ধান্ত নেয় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পাঁচটি প্রভাবশালী দেশ। এই দেশগুলো যখন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তখন তারা নিজ নিজ দেশের স্বার্থকেই প্রধান্য দেয়। আবার তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা আটকে দেয়। ফলে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়। বিতর্কের কারণে বৈধতার প্রশ্নটিও সামনে চলে আসে। সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক চীফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল (অব) মোঃ মাইনুল ইসলাম উপস্থাপন করেন ‘ জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন’ এর ওপর একটি প্রবন্ধ। অন্য প্রবন্ধটি উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। তার প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘শরণার্থী সমস্যা এবং শান্তির প্রতি হুমকি’। এই প্রবন্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নানা দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে আনা হয়। রোহিঙ্গাদের ওপর যে জুলুম, নির্যাতন করা হচ্ছেÑ চালানো হচ্ছে গণহত্যা। এখানে কী করে শান্তির কথা বলা যায়। আন্তর্জাতিক বিশ্ব এমন একটি জ্বলন্ত ইস্যুতে যত দূর এগিয়ে আসার কথা সেদিক থেকে কোন কিছুই করা হচ্ছে না। মিয়ানমারের ওপর এখন পর্যন্ত কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। গ্রামের পর গ্রাম মিয়ানমার সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছে। নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। পুরুদের হত্যা করে নদীতে ফেলে দিচ্ছে। শান্তির বাণী এখানে নীরবে কাঁদে। রাখানইন রাজ্যে উদ্ভূত সহিংসতা এবং জাতিগত নিধনের ফলস্বরূপ নির্যাতিত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ক্রমাগত অনুপ্রবেশের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেমিনারে এমন পরিস্থিতির মোকাবেলায় এবং বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক মহলকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ প্রেক্ষাপটে বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক বলেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সংলাপ ও পারস্পারিক সহযোগিতামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ। যার মূল ভিত্তি হবে মানুষের প্রতি সম্মান, ন্যয় বিচার, সংহতি এবং মানবাধিকার। সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাকর্তারা, বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি, উর্ধতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকবৃন্দ, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিগণ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতগণ এবং গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতির বিশেষ নজর দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান।
×