ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার অনুমোদনহীন স্কুল

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১০ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকার অনুমোদনহীন স্কুল

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এটি প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারও। শিক্ষা সার্বজনীন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বটে! জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই উন্নয়নের বিকাশমান ধারার সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোর যে তাগিদ মূলত সেখান থেকেই সামনে চলে আসে নতুন স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। কিন্তু বিভিন্ন নিত্যনতুন স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুণগত মান আর আইনী বিধানকে বিবেচনায় না রেখে শিক্ষা কার্যক্রমের যে লাগামহীন সংখ্যা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে রাজধানীর অলিগলিতে এমন অনেক স্কুল আছে যেখানে শিক্ষা বোর্ডের কোন অনুমোদন তো নেয়াই হয় না, উপরন্তু প্রাসঙ্গিক সমস্ত শর্তকেও উপেক্ষা করা হয়। বেআইনীভাবে প্রতিষ্ঠিত এসব স্কুলে প্রথমেই কোচিং সেন্টার দিয়ে তার যাত্রা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে কিছু ছাত্রছাত্রী প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া শুরু করলে এক সময় তাকে স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়। আর সেটা করা হয় যে কোন বড় ভবনের ২-১টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে, যা শিক্ষা কার্যক্রমের বিধিবিধানের আওতায়ই পড়ে না। এখানে সব থেকে বেশি জরুরী শিক্ষা বোর্ডের কাছ থেকে আইনী অনুমোদন নেয়া। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কিছু অবকাঠামোগত আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালায় উল্লেখ আছে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হলে ৫০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের ওপর ন্যূনতম চাহিদা ও শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন করতে হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় নি¤œ মাধ্যমিকের জন্য দশমিক ২০ একর, মাধ্যমিকের জন্য দশমিক ২৫ একর জমি থাকা অতি আবশ্যক। তার ওপর আছে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, খেলার জায়গা, লাইব্রেরি, নিজস্ব কোষাগারসহ আরও প্রয়োজনীয় কিছু অনুষঙ্গ, যা বিদ্যা শিক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। কিন্তু এই নিয়মবহির্ভূত স্কুলগুলো শিক্ষা বোর্ডের কোন নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা করছে না। নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবসায়িক সাফল্য আনতে গিয়ে এসব অনুমোদনহীন শিক্ষা কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। পঠন-পাঠনের পদ্ধতিসহ সংশ্লিষ্ট গুণমান নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। রাজধানীর বংশাল, আজিমপুর, বকশীবাজার, কলতাবাজার, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, শনির আখড়া, মগবাজার, কলাবাগান, বনশ্রী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর আর মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব অনিয়ন্ত্রিত স্কুল। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার মানকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনকি অভিভাবকদেরও কোন মাথাব্যথা নেই। শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক জানান, এসব স্কুল আসলে কোন নিয়মকানুনের তোয়াক্কাই করে না। যেহেতু স্কুলগুলো শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেখানে শিক্ষা বোর্ডও তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। ফলে যাচাই-বাছাই করে মানসম্মত বিদ্যালয় চিহ্নিত করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। শিক্ষা সার্বজনীন এবং তা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকর। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায় নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার মতো একটি মহান কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোন্ ধরনের দায়বদ্ধতা? এমন অনিয়ম থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষাকে তার যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা অত্যন্ত জরুরী। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সেই ধরনের দায়িত্ববোধই প্রত্যাশিত।
×