ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটুপানি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ অক্টোবর ২০১৭

বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটুপানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৬ অক্টোবর ॥ বন্দর ডাকপাড়া এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। দেখলে মনে হয় এটা সড়ক না, খাল। নালা-নর্দমা, পুকুর অপরিকল্পিতভাবে ভরাট হওয়াই এ জলাবদ্ধতার মূল কারণ। তাছাড়া প্রধান সড়কের ওপর পানি নিষ্কাশনের ৩টি কালভার্ট কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও সড়কের দুইপারের প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এলাকার নালা, ড্রেন, বহুতল ভবন ও সিট কারখানা গড়ে উঠেছে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা করেনি। বরং আগের তৈরি কালভার্টগুলোও রাস্তার দুইপারের ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে বহুতল ভবন, সিট ব্যবসা, কমিউনিটি সেন্টার ও অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। ২য় সেতুর দক্ষিণের পাদদেশ থেকে কদমতলী চৌরাস্তা, ডাকপাড়া, মনু বেপারির ঢাল এবং ভাগনা এলাকার দক্ষিণাঞ্চল সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়। বুড়িগঙ্গা ২য় সেতু দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশালের শত শত যাত্রীবাহী এবং মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২৫ লাখ লোকের বসতি। তাদের উপার্জনের একমাত্র স্থান রাজধানী ঢাকা। এদের মধ্যে কেউ যাত্রীবাহী বাস, কেউ মিনিবাস, কেউ অটোরিক্সা কেউবা হেঁটে ২য় সেতু পার হয়ে কর্মস্থলে যায়। সবচেয়ে বিপাকে পড়ে মহিলা গার্মেন্টস্ কর্মীরা। প্রতিদিন কয়েক হাজার মহিলা কর্মী হেঁটে সকাল সন্ধ্যায় কাজে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে বাধ্য হয়ে তারা জামা-কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করে। এছাড়া ছোটখাটো সড়ক দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী, ঢাকা-২ সড়ক উপজেলা উপবিভাগ-২ বনানী ঢাকা ইকবাল হাসান চৌধুরী বলেন, বুড়িগঙ্গা ২য় সেতুর পাদদেশ থেকে (কদমতলী) দোহার পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে ৪শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; শ্রীঘ্রই যার কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। এনায়েতপুরে খানাখন্দে ভরা সংবাদদাতা বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান,এনায়েতপুর-বেলকুচি, বেতিল-গাবতলা, ফুটানী মার্কেট-মেঘুল্লা, গোপিনাথপুর-রুপনাই ও দ্বাদশপট্টি মোড়-পাচিল সড়কের বেহাল অবস্থা যেন দেখার কেউ নেই। অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে ও সড়কে যত্রতত্র খানাখন্দের ফলে একদিকে যানচলাচল বিঘœ হচ্ছে অন্যদিকে জনজীবনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতাল, বিশ্বাবিদ্যালয় ও খাজা এনায়েতপুরী (রহ:) মাজারে যাতায়াতের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সায়দাবাদ থেকে বেলকুচি সড়ক হয়ে এনায়েতপুরে আসতে হয়। এছাড়া তাঁতপল্লী অধ্যুষিত বেতিল-গাবতলা, ফুটানী মার্কেট-মেঘুল্লা, গোপিনাথপুর-রুপনাই সড়ক দিয়ে এলাকার অন্তত সাড়ে তিনশতাধিক তাঁত কারখানার হাজার হাজার শ্রমিককে যাতায়াত করতে হয়। আর ব্যবসায়িক কাজে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি বন্দরে যাতায়াতের অন্যতম সড়ক হচ্ছে এনায়েতপুর-দ্বাদশপট্টি-পাচিল সড়ক। এদিকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও তাঁতপণ্য উৎপাদন ও বিপণনের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলো ব্যবহার করতে হয় নিত্যদিন। কিন্তু রাস্তার খানাখন্দের কারণে সব সময় বেকায়দায় পড়তে হয় সবাইকে। এছাড়া রাস্তার যত্রতত্র ভেঙ্গে গিয়ে কাদা-মাটির কারণে এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায়ই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্থানীয়রা জানায়, বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতাসহ ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে চার-পাঁচ বছর ধরেই এ রাস্তার যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত ও খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতার কারণে এ রাস্তায় তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দীর্ঘ দিনেও। সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী শিক্ষক আব্দুল জলিল তালুকদার, পল্লী চিকিৎসক ডাঃ শাহাদৎ হোসেন, স্বর্ণ ব্যবাসীয় স্বপন কর্মকার ও শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম মনি জানায়, ছোট ছোট রাস্তায় ভারি যানবাহন চলাচল করা এবং সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকায় রাস্তার পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর দীর্ঘদিনেও সরকারীভাবে এখানে রাস্তা মেরামতের কোন উদ্যোগ না থাকায় এলাকাবাসীসহ পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ম-ল গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ম-ল বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল এলাকায়ই কাজ করা হবে। ডিএনডি ক্যানেল বাঁধসড়ক বেহাল মোঃ খলিলুর রহমান নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের শিমরাইল পাম্প হাউজ থেকে ৮নং ওয়ার্ডের গোদনাইলের ধনকু-া এলাকা পর্যন্ত ডিএনডি ক্যানেল বাঁধ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির বেহাল দশায় পরিণত হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটি কোন কোন স্থানে একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। বিশেষ করে কদমতলী নয়াপাড়া এলাকার অংশটি খুবই বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। রাস্তাটি মেরামত না করায় এলাকাবাসীকে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্রোরেশনের ডিএনডি ৪ কিমি. ক্যানেল সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ইট-সুরকি রেব হয়ে এসেছে। বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার কাঁচাবাজার, সিআইখোলা, হিরাঝিল, কদমতলী, নয়াপাড়া ও মজিববাগ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাস্তার আশপাশের লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে কদমতলীর ভা-ারীপুল ও নয়াপাড়া এলাকায় সড়কটি অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যদি শীঘ্রই ক্যানেল সড়কটি মেরামত না করায় তবে যে কোন সময় ডিএনডি’র সেচ খালের পানি ডিএনডি’র অভ্যন্তরে প্রবেশ করার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এ ক্যানেল সড়কটি ব্যবহার করে মিজমিজি বাতানপাড়া, পূর্বপাড়া, মজিববাগ, পাইনাদী জুয়েল রোড ও সিআইখোলা, মজিববাগ, গোদনাইল, কদমতলী এলাকার লোকজন চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছে। মিজমিজি বাতানপাড়ার বাসিন্দা আসলাম জানায়, ক্যানেল রোড সংস্কার না করায় যাতায়াতের খুবই কষ্ট হচ্ছে। ফলে ক্যানেল রোড ব্যবহার না করে বিকল্প পথ দিয়ে বাসায় যেতে হচ্ছে। এছাড়াও রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বর্ষা মৌসুমে রাস্তা পানি জমে চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হয়। সিআইখোলার বাসিন্দা আলাউদ্দিন জানায়, রাস্তাটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় হিরাঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়ক দিয়ে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরতে হয়। এতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন জানান, ডিএনডি ক্যানেল সড়কটির ড্রইং সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করি এ মাসের শেষের দিকেই টেন্ডার আহ্বান করতে পারব।
×