ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৪ অক্টোবর ২০১৭

রিপোর্টারের ডায়েরি

গভীর রাতেও জ্যামের কবলে ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। আমার এ দিনটি অন্য দিনের মতো ছিল না। সকাল থেকে রাত অবদি কোন কিছুই পরিকল্পনামাফিক হয়নি। অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক কিছুই করতে হয়েছে যার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল না। মনের বিপরীতে গিয়ে সব কাজ করতে হয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়েছে যা আগে কখনও হয়নি। সবাই বলে সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং হাঁটাহাঁটি স্বাস্থের জন্য ভাল। ডাক্তারী এই নিয়ম মেনে ইদানীং আমিও হাঁটার অভ্যাস করছি। প্রত্যেক দিন সকালে মাকে নিয়ে পাশের সরকারী কোয়ার্টারে ফাঁকা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করি। আমার মতো অনেকই হাঁটতে আসে। ওইদিন সকালে উঠে হাঁটতে বের হইনি। সকাল ৭টায় নাস্তা করে ছুটে গেছি মতিঝিলে ফুটবল ফেডারেশনের মাঠে। জনকণ্ঠ দলের হয়ে ফুটবল খেলায় অংশ নিতে। খেলার ফল প্রত্যাশিত ছিল না। মাঠ থেকে ফিরে গেছি বাসায়। গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া করে আবার অফিসে চলে এসেছি। অফিস শেষে রাতে যখন বাসায় ফিরব তখনই জানলাম আমার লেটনাইট। যা আগে জানা ছিল না। সাধারণত লেটনাইট করতে হলে আগেই প্রস্তুতি নিতে হয়। বাসার দারোয়ানকে আগেই বলে রাখতে হয়। সেই অনুযায়ী রাতে গেট খুলে দেয়। না বললে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমায়। হাজার ডাকলেও গেট খুলবে না। দুপুরে অফিসে আসার সময় মা জানাল তার পেটে গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। বললাম রাতে ফেরার সময় ওষুধ নিয়ে আসব। লেটনাইটের কারণে রাতে তার ওষুধ নেয়াও হয়নি। যদিও আমার নির্ধারিত লেটনাইট ছিল না ওইদিন। বদলি হিসেবে আমাকেই করতে হয়েছে। কিন্তু আগ থেকে না জানায় বিপত্তি। মাকে যখন বললাম আজ লেটনাইট আছে ফিরতে দেরি হবে। মা বলল আগে তো বলিসনি। বউ ফোন করে বলল আগে তো জানাওনি। কি বলব। আমারই তো জানা ছিল না আগে। অগত্যা ফোনেই দারোয়ানকে বললাম মোবাইল খোলা রাখতে। সামনে আরও বিপত্তি আছে জানা ছিল না। লেটনাইট শেষে যখন বাসায় ফিরব তার আগ থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সিএনজিতে চড়েছি। চলতে চলতেই বৃষ্টি কমে এলো। সাধারণত অফিস থেকে বাসায় ফিরতে রাতে আমার সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। রাস্তা ফাঁকা। তাই সময় বেশি লাগে না। এবারই প্রথম নতুন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হলো। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন পেরিয়ে যেতেই জ্যামের কবলে। মনে হলো হালকা জ্যাম একটু পরেই রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাবে। শুধু জ্যাম নয়, আবারও শুরু হলো মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। কর্মব্যস্ততা শেষে যখন বাসায় ফিরছি তখন রাত দেড়টা বেজে গেছে। শরীরটা প্রচ- ক্লান্ত। সিএনজির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ছি বার বার। আবার বৃষ্টি ছিটা এসে শরীরটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে একটি বিরক্তিকর পরিবেশ। মন চাচ্ছে দ্রুত বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। শরীরকে আর ধরে রাখতে পারছি না। গাড়ি আর চলে না। প্রচ- জ্যামে আটকে আছে। একটু এগোয়তো আবার অনেকক্ষণ অপেক্ষা। রাতে ট্যাফিক ব্যবস্থাপনাও নেই। ফলে গাড়িগুলো যে যার মতো করে চলছে। জ্যাম পেরিয়ে টেকনিক্যাল মোড় পার হতে ততক্ষণে বেজে গেছে পৌনে তিনটা। আগে কখনও এত রাতে জ্যামে পড়িনি। নতুন অভিজ্ঞতা এটা। রাস্তায় শুধু ট্রাক আর ট্রাক। মাঝে মাঝে দু-একটি সিএনজি এবং প্রাইভেট কার। এত রাতে এত ট্রাক যাচ্ছে কোথায় বুঝতে পারলাম না। মনে হলো চারদিকে শুধু ট্রাকের ঘেরাওয়ের মধ্যে বসে আছি। ঢাকা শহর জ্যামের শহর। এটা দেশের গ-ি পেরিয়ে বাইরের দেশে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু গভীর রাতেও এত জ্যাম হয় আগে জানা ছিল না। সম্ভবত ঢাকায় বাস করা বেশির ভাগ নাগরিকেরই এই অভিজ্ঞতা নেই। সাংবাদিকতার কল্যাণে এবং লেটনাইট করার কারণেই নতুন এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলো। বৃষ্টির মধ্যে বাসার গেটে পৌঁছে দারোয়ানকে ফোন দিলাম। সে গেট খুলে দিলে সরাসরি সিএনজি থেকে নেমে ভেতরে ঢুকলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যেন কষ্ট হচ্ছে। শরীর জুড়ে ক্লান্তি থাকলেও বাসায় পৌঁছানোর পর কিছুটা স্বস্তি বোধ হলো। মনে হচ্ছে এখনই শুয়ে পড়ি। কিন্তু পেটের ক্ষুধা জেগে উঠল। কিছু খাবার খেয়েই ঘুমের রাজ্যে। সকালে বউয়ের ফোনে ঘুম ভাঙ্গল। ঘড়িতে দেখি সকাল ৯টা বাজে। আগের দিন বিপরীত অবস্থার মুখোমুখি হলেও রাতে ভাল ঘুমের পর শরীর, মনটাকে ফ্রেস মনে হলো। মনে হলো, বিরক্তিকর হলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিজ্ঞতা কাজে দেয়। সারভাইবাল এক্সপেরিয়েন্স থাকলে বিপদের সময় হতাশ না হয়ে পথ খুঁজে পাওয়া যায়। আশা করি আমারও কাজে দেবে এ ধরনের অভিজ্ঞতা। শাহীন রহমান [email protected] জীবনের প্রথম হলুদ কার্ড ২৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) আয়োজিত মিডিয়া কাপ ফুটবল খেলতে আমরা ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ টিম যায় মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আর্টিফিসিয়াল টার্ফে। সেখানে সেমিফাইনালে ওঠার মিশন। মানে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ঢাকা ট্রিবিউন। গ্রুপ পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ আটের টিকেট পেয়েছি আমরা। সেমিফাইনালে খেলতে তাই সবাই মুখিয়ে। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয় ট্রিবিউনের বিরুদ্ধে ময়দানী লড়াই। ক্রীড়া সম্পাদক মজিবুর রহমান ভাইয়ের নেতৃত্বে তপন বিশ্বাস, রুমেল খান, মিথুন আশরাফ, নিখিল মানখিন, শাহিন রহমান, রাজু আহমেদ, রহিম শেখ, নিয়াজ আহমেদ লাবু, ফটো সম্পাদক হাসানুজ্জামান তারুণ ভাই এবং আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামি। মজার বিষয় হচ্ছে, বিএসজেএর আগের আসরেও এই একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেছিল জনকণ্ঠ। শুধু তাই নয়, লড়াইয়ের মঞ্চও ছিল এক। অর্থাৎ কোয়ার্টার ফাইনাল। সেবার দুর্দান্ত খেলেছিল জনকণ্ঠ টিম। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি অমীমাংসিত ছিল ১-১ গোলে। আমাদের বিদায় নিতে হয়েছিল ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে হেরে। এবার তাই প্রতিশোধ নেয়ার মোক্ষম সুযোগ আসে। তাই সবার মাঝে কাজ করছিল জেদ আর সেরাটা দেয়ার। ম্যাচের শুরু থেকে সেই স্পৃহা পরিলক্ষিত হয়। গোছালো ফুটবল খেলে সবার প্রশংসা কুড়ায় জনকণ্ঠ। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিপক্ষ ঢাকা ট্রিবিউন অনেক শক্তিশালী। পেশাদারিত্ব লক্ষ্য করা যায় তাদের খেলায়। তাই বলে তাদেরকে ছেড়ে কথা বলিনি আমরা। আমাদের সবার মাঝেই আত্মবিশ্বাস ছিল, নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে জয় সম্ভব। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ দিকে রেফারির বাজে সিদ্ধান্তে হতাশ হতে হয় আমাদের। প্রতিপক্ষের একটি সম্ভাবনায় আক্রমণ দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক তপন দা। এরপর ফাঁকায় বল পেয়ে যান ওদের একজন। ফাঁকা পোস্টে শট নিলেই গোল। আমি উপায় না দেখে গোলপোস্টের সামনে শুয়ে পড়ি। কাজও হয়। ওদের এক খেলোয়াড়ের নেয়া শট প্রথমে আমার মাথা এরপর কাঁধে লেগে বাইরে যায়। নিশ্চিত গোল হজম থেকে রক্ষা করার তৃপ্তি তখন আমার! কিন্তু সম্বিত ফেরে রেফারির বাঁশিতে। উনি দিলেন প্রতিপক্ষকে ‘পেনাল্টি উপহার’!!! রেফারি মনে করেছেন বল আমার হাতে লেগেছে। কিন্তু লেগেছে তো মাথায়। রেফারির এ সিদ্ধান্তে আমরা সবাই হতবাক হই। মনটাও ভেঙে যায়। কারণ সমশক্তির দু’দলের লড়াইয়ে সুযোগ বেশি আসে না। সুযোগ দু’একটা আসলে যারা কাজে লাগাতে পারে তারাই শেষ হাসি হাসে। ট্রিবিউনকে দেয়া এই ‘উপহার’ আমাদের হৃদয়টা ভেঙ্গে দেয়। যেহেতু গোলটা রক্ষা করেছিলাম আমি, আবার আমার কারণেই প্রতিপক্ষ পেনাল্টি লাভ করে। তাই মনটা ছিল বিক্ষিপ্ত। রেফারিকে উদ্দেশ্য করে আমি বলি, ‘স্যার এমন ভুল সিদ্ধান্ত কিভাবে দিলেন! আমার তো হাতে না, মাথায় বল লেগেছে। আপনি আমাদের ডুবিয়ে দিলেন।’ কথাটা রেফারির ভাল লাগার কথা না। তাইতো তিনি আমাকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে দিলেন! যা আমার অপেশাদারী ক্যারিয়ারে প্রথম। ম্যাচ শেষে মজিবুর ভাইও বলেন, ‘এই পেনাল্টিই আমাদের ডুবিয়ে দিয়েছে’। ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ আমার। কমবেশি যেমনই পারি না কেন, মাঠে থাকতেই হবে। খেলতে হবে। তাই খেলাধুলার মধ্যেই থেকেছি। অনেক খেলেছি, কখনও কাউকে ফাউল করিনি। তবে ফাউলের শিকার হতে হয়েছে। পাড়ার টিম, গ্রামের টিম এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বিভাগীয় টিমেও খেলেছি। অধিনায়কত্ব করেছি। কোনদিন কার্ড দেখিনি। কিন্তু এই প্রথম রেফারির দৃষ্টিতে খলনায়ক হলাম। দেখলাম বিনোদনের ক্যারিয়ারে প্রথম হলুদ কার্ড!!! জাহিদুল আলম জয় [email protected] সৈয়দ শামসুল হক কুড়িগ্রামে ঘুমিয়ে আছেন ২৭ সেপ্টেম্বর। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। কবি অন্তিম শয়ানে শুয়ে আছেন কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের মাঠের দক্ষিণ পাশের ধান ক্ষেতে। কবির শেষ ইচ্ছে ছিল তার প্রিয় ধরলা নদীর পারে জল্বেশরীতেই তিনি যেন থাকতে পারেন। এবং তিনি তার কবরের জন্য নির্ধারিত জায়গায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন নিয়েছিলেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে এখানেই শায়িত করা হয়েছে। সকালেই আমি কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলাম। গভীর শ্রদ্ধা ও গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে দেশবরেণ্য এই মানুষটির ১ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। এ উপলক্ষে সকাল ১০টার দিকে সরকারী কলেজ মাঠে কবির সমাধিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে ফুলের বেদী নিয়ে আসছে। তারপর একে একে তার কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। এর পর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে কবির সমাধিস্থল থেকে একটি শোক র‌্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালি শেষে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ অডিটোরিয়ামে কবির আত্মজীবনী নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। দিনভর নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। একজন মানুষ তার নিজ এলাকায় কত জনপ্রিয় হতে পারে চোখে না দেখলে বিশ^াস করা যায় না। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন। তার অকাল প্রয়াণে দেশের সাহিত্য অঙ্গনে হয়েছে অপূরণীয় ক্ষতি। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ হকের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য কুড়িগ্রামে সর্বস্তরের মানুষের ঢলেই প্রমাণ করে মানুষের ভালবাসা। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায়। তার বাবা মরহুম সিদ্দিক হক ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। বাবার ছিল একটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের দোকান। শহরের ঐতিহ্যবাহী জাহাজ মোড়ে তার মায়ের নামে ছিল নূরজাহান মেডিকেল হল। সব্যসাচী লেখক ৫ ভাই আর ৩ বোনের মধ্যে সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল আর দুরন্ত। মেধাবী শামসুল হককে এলাকার মানুষ বাদশা নামে ডাকতেন। তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত রিভার ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে ঢাকায় পাড়ি জমান। কুড়িগ্রামে তার ছোট ভাই এ্যাডভোকেট আজিজুল হক পরিবার নিয়ে এখানেই থেকে যান। নানা ম্মৃতি তার এই ছোট্ট জলেশ^রী কুড়িগ্রামে। ঢাকা চলে যাবার পর সব্যসাচী এই কবি কুড়িগ্রামে খুব বেশি না আসলেও এখানকার মানুষ, মাটি, গাছপালা আর নদীর কথা তিনি ভুলতে পারেননি এক মুহূর্তের জন্য আমৃত্যু। তিনি তার লেখায় বিভিন্নভাবে নিয়ে এসেছেন এ অঞ্চলের মাটি মানুষ আর ধরলা নদীকে। জীবনের শেষ প্রান্তে ঘন ঘন আসতেন কুড়িগ্রামবাসীর প্রিয় বাদশা ভাই। একা খুঁজে ফিরতেন ছোটবেলার সেই জায়গা গুলো। মেলানোর চেষ্টা করতেন কৈশোরের সেই দিন গুলির সাথে। সময়ের সঙ্গে অনেক পরিবর্তন হয়েছে কুড়িগ্রাম শহরের। তারপরও ঘুরতেন জানতে চাইতেন মানুষের কাছে নানা কিছু। শীতের এক সন্ধ্যায় এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম পৌরসভা মাঠে তিনি তার নিজ জীবনের ম্মৃতি রোমন্থন করছিলেন। তিনি বললেন তখন দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ চলছিল। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যরা কুড়িগ্রামে ডাকবাংলা ক্যাম্প করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন খেলতে যেতেন ঐ ডাকবাংলা এলাকায়। তখন ব্রিটিশ এক সৈন্য তাকে খুব আদর করতেন। তাকে একটা বই উপহার দিয়েছিলেন ঐ সৈনিক। সেই বইটি তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছেন তার সংগ্রহ শালায়। নানা স্মৃতি তার কুড়িগ্রাম কে ঘিরে। ঐ অনুষ্ঠানেই তিনি ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন তাকে যেন কুড়িগ্রামের মাটিতেই শেষ শয্যায় শায়িত করা হয়। খুব ভালবাসতেন ধরলা পারের মানুষ গুলিকে। সেদিনের তার নানা স্মৃতির কথাগুলো মনে পড়ছে আমার। তিনি তার সমস্ত বই তার কবরের পাশে লাইব্রেরী কমপ্লেক্সে দান করে দিয়ে গেছেন নতুন প্রজন্মের জন্য। তারা যেন তাকে জানতে পারে তার লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হতে পারে। এক বছর হয়ে গেল সব্যসাচী এই লেখকের কবরের পাশে একটি কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা থাকলেও আজও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ জেলাবাসী। তারা জানে না এই আধুনিক কমপ্লেক্স কবে গড়ে উঠবে। কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে উঠবে লাইব্রেরী, উন্মুক্ত মঞ্চ। দেশ বিদেশের মানুষ আসবে এই কমপ্লেক্স ভবনে। গবেষণা করবে কবির লেখনী নিয়ে। তার লিখনীর আলো ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। তার সঙ্গে আমাদের এই জলশ^রীর ধরলা পারের কুড়িগ্রাম শহরকেও মানুষ চিনবে। দিন ভর কবির নানা অনুষ্ঠান শেষ করে যখন বাড়ি ফিরছি তখন ভাবছি বিশ^ বরণ্য একজন মানুষ হয়েও কি গভীর ভালবাসা তার ধরলা পারের এই কুড়িগ্রাম শহরকে নিয়ে। রাজু মোস্তাফিজ কুড়িগ্রাম
×