ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তারের এ্যাপয়েন্ট পাওয়ার উপায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ অক্টোবর ২০১৭

ডাক্তারের এ্যাপয়েন্ট পাওয়ার উপায়

রোগ হলেই চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের এ্যাপয়েন্ট পাওয়াটাও যেন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ডাক্তারদের এ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে মাসখানেক অপেক্ষা করতে হয়। সে সমস্যার সমাধান এখন ওয়েবসাইটে ভিজিট করে বা সাধারণ একটা ফোন কল করেই সম্ভব। এই কঠিন কাজটি সহজ করেছে বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন মেডিক্যাল সার্ভিস সাইট ডক্টরোলা। ডক্টরোলার স্বপ্নদ্রষ্টা মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে উদ্যোক্তা হন। দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়ার সময় শুরু করেন ব্যবসা। ৭ বছর চলে সেই ব্যবসা, বেশ বড়ও হয় সেই ব্যবসা। ব্যবসার বিষয়টি সে সময়ই মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন ভেতরে ঢুকে যায়। তারপরও বিভিন্ন কারণে বন্ধ করে দিতে হয় সেই ব্যবসা। তখন শুরু হয় চাকরি জীবন। সব সময় ইচ্ছা ছিল, একটু স্থিতিশীলতা এলে আবার ব্যবসায়ে ফেরার। এভাবে কেটে গেল ১২টি বছর। চাকরি করে মনে হলো এখন ঝুঁকি নেয়া যায়। চাকরি ছেড়ে গড়ে তুললেন সফটওয়্যার কোম্পানি, যার একটি প্রজেক্ট ডক্টরোলা। পরবর্তীতে এটি আলাদা কোম্পানি হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম থেকে শুরু হয় এই এ্যাপয়েনমেন্ট সার্ভিস। এরপর ২০১৫ সালে পুরোদমে শুরু হয়ে যায় ডক্টরোলার কাজ। মূলত সারাদেশের মানুষকে সঠিক ডাক্তার খুঁজতে কাজ করা, এ্যাপয়েনমেন্ট নিশ্চিত করা এবং ফলোআপের জন্য সাহায্য করাÑ এ তিনটি বিষয়ে কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, সুদূরপ্রসারী কাজ এবং মানুষের প্রকৃত উপকার করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ডক্টরোলার কর্মীরা। আমরা অনেকেই অনেক কিছু করতে চাই কিন্তু সফল হই না। দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের বাঁধা আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন এর মতে উদ্যোক্তা হতে হলে সঠিক কারণ জানা ও বোঝার প্রয়োজন আছে। আমি কেন উদ্যোক্তা হচ্ছি বা হতে চাচ্ছি সেটা আগে নিজেকে ঠিক করতে হবে। কিছু কারণ আছে এমন যে ‘চাকরি পাচ্ছি নাÑ তাই উদ্যোক্তা হবো’, ‘চাকরিতে হতাশা- তাই উদ্যোক্তা হতে হবে’ বা ‘চাকরি এমন পর্যায়ে আছে যে এখানে আর অর্জন করার মতো কিছু নেইÑ তাই উদ্যোক্তা হতে হবে’। শুধু এসব কারণে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি নিজের ভেতর থেকে কিছু একটা অর্জন করার জোরালো তাগিদ থাকতে হয়। নিজের সময় ভাল যাচ্ছে না বলে কিছু একটা করলাম আর ভাল কোন সুযোগ এলে তখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলাম- এ রকম হলে সংগ্রাম করার সহনশীলতা থাকে না। উদ্যোক্তা হতে গেলে সংগ্রাম করতে হয়। অনেক আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয়। উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা করার জন্য সঠিক মানসিকতা হচ্ছে হাল না ছেড়ে সংগ্রাম করে এগিয়ে যাওয়া এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখা। মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন ও চলার পথে সম্মুখীন হয়েছেন নানা প্রতিকূলতার। একটা সময়ে অনভিজ্ঞতার জন্য বেশ আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন। কর্মীদের বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছিল। তখন সিদ্ধান্ত নিলেন, সঙ্কট কেটে না যাওয়া পর্যন্ত নিজের পেছনে আর একটিও অতিরিক্ত টাকা খরচ করব না। সে সময়ে টানা চার মাস তিনি দুপুরে খাবার খাইনি। রিকশা, বাস, ট্যাক্সি কিছুতেই চড়িনি। বৃষ্টি বাদলের দিনেও হেঁটে যাতায়াত করতাম। এমনকি আমি ধূমপানও ছেড়েছিলাম। চার মাস পরে যখন সঙ্কট দূর হতে শুরু করল তখন ধূমপান বাদে বাকি সবকিছুই ধীরে ধীরে যোগ করা শুরু করেন ইমন। বর্তমানে ডক্টরোলা দেশজুড়ে সারে সাত হাজার চিকিৎসক ও ৫০০ এরও বেশি হাসপাতাল থেকে খুঁজে দিচ্ছে আপনার ডাক্তার। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ডক্টরোলা ফেসবুক পেজ ছিল সর্বদা সরব। ৭ লাখ ৩৫ হাজার ফ্যান এর এই পেজে। এখন কথা আসতে পারে কীভাবে হয় এই এ্যাপয়েনমেন্ট কার্যক্রম। বন্ধুদের জানিয়ে দিচ্ছি সাধারণত তিনভাবে এই এ্যাপয়েনমেন্ট নেয়ার কার্যক্রম করা হয়Ñ অনলাইনের মাধ্যমে, টেলিফোনের মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। প্রথমত অনলাইন িি.িফড়পঃড়ৎড়ষধ.পড়স এ সার্চ করে পাওয়া যায় এ্যাপয়েনমেন্টের ফরম। এই ওয়েবসাইটিতে ঢুকলে জানতে চাইবে আপনার কী ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজন, কোন শহরে ও কোন এলাকায় দেখালে সুবিধা হয়, কোন তারিখে দেখাতে চানÑ এসব বিষয়ে। পাশাপাশি চিকিৎসকের তালিকা দেয়া হয়। রোগী যেখান থেকে চিকিৎসক বাছাই করে, তখন সেখানে চিকিৎসককে দেখানোর সম্ভাব্য সময়গুলো শো করে। তারপর রোগী তার প্রয়োজন অনুযায়ী সময় নির্বাচন করে। এ সময় তাকে মোবাইল নম্বর দিতে হয়, অনুরোধ নিশ্চিত করার জন্য। এরপর রোগীকে কলসেন্টার থেকে ফোন করা হয়। এরপর যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এ্যাপয়েনমেন্ট-সংক্রান্ত তথ্য মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে চলে যায়। সেখানে ডাক্তারের নাম, চেম্বারের ঠিকানা, তারিখ ও সময় চলে যায়। এ রকম একটি মেসেজও চিকিৎসকের কাছে চলে যায়। এরপর নির্দিষ্ট তারিখের একদিন আগে ফোনকলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় এ্যাপয়েনমেন্টের বিষয়ে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর রোগীর কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে জানা হয় সে গিয়েছিল কিনা, ফলোআপ করতে বলা হয়েছে কিনা, কেমন লেগেছে চিকিৎসকের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে। এ ছাড়া অনলাইনে না পারলে সরাসরি ফোনকল করেও ফোনের মাধ্যমেও অ্যাপয়েনমেন্ট নেয়া যাবে। ফোন নম্বর হলোÑ ০৯ ৬০৬ ৭০৭ ৮০৮, মোবাইল : ০১৭৯০ ৮৮৮ ৭৭৭। এ ছাড়া ফেসবুকের (ঋধপবনড়ড়শ.পড়স/ফড়পঃড়ৎড়ষধভধহং) মাধ্যমেও এ্যাপয়েনমেন্টের কাজটি করা হয়। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বিশ্বের কয়েকটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগের (স্টার্টআপ) তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ডক্টরোলা (িি.িফড়পঃড়ৎড়ষধ.পড়স)। ৪ আগস্ট ফোর্বসের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের আটটি স্টার্টআপের কথা উল্লেখ করা হয়, যেগুলোকে তারা বলছে সম্ভাবনাময় স্টার্টআপ। দেশীয় স্টার্টআপ ডক্টরোলা তাদের ওয়েবসাইট ও এ্যাপের মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে যোগাযোগের কাজটি করে দেয়। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু হয় ডক্টরোলার। সে সময় ২০০ হাসপাতাল ও কয়েক হাজার চিকিৎসককে এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়েছিল। সংখ্যার পরিমাণ এখন আরও বেড়েছে। ফোর্বসের প্রতিবেদনে ডক্টরোলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ডক্টরোলা স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত একটি প্রযুক্তি উদ্যোগ। যেটি ডিজিটালের মাধ্যমে চিকিৎসকের সাক্ষাত পেতে সহায়তা করে রোগীকে। দেড় বছরে প্রতিষ্ঠানটি বেশ উন্নতি করেছে। পুরো বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা দিন দিন যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ডক্টরোলার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবেই চিকিৎসকের খোঁজ পাওয়া যাবে। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×