ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীর পটগানে রূপময় যাকারিয়া জন্মশতবর্ষ উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩ অক্টোবর ২০১৭

গাজীর পটগানে রূপময় যাকারিয়া জন্মশতবর্ষ উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শরতসন্ধ্যায় ভেসে বেড়ায় গাজীর পটগানের সুর। গায়েনের সূত্র ধরে উঠে আসে পটে আঁকা ছবির বিবরণ। সুর ধরে এগিয়ে চলে নানা আখ্যানের বয়ান। পটগানের পর পরিবেশিত হয় গাজীর পালা। এভাবেই প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির উপস্থাপনায় স্নিগ্ধ রূপ পায় চারুকলা অনুষদের বকুলতলা। আর এমন আয়োজনের উপলক্ষ ছিল প্রত্নত্ত্ববিদ, পুঁথিবিশারদ ও নৃবিজ্ঞানী আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। প্রাচীন বঙ্গবিষয়ক এ গবেষককে নিবেদিত সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে আলোচনা ও স্মৃতিচারণের মাধ্যমে স্মরণ করা হয়। ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের শেষদিন ছিল সোমবার। জ্ঞানতাপস আ কা মো যাকারিয়ার জন্মশতবর্ষ উৎসবে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। উৎসবের সমাপনী দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গাজীর পটগান ও গাজীর পালা পরিবেশনা। বিক্রমপুরের মঙ্গল মিয়া গায়েন ও তার দল পরিবেশন করে গাজীর পটগান। বিশেষ আঙ্গিকের এই গান একসময় বেদেরা পরিবেশন করত। পটচিত্র দেখে দেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা গাইত গাজীর পটগান। সেই পটগান এবার পরিবেশিত হলো রাজধানী ঢাকায়। শিল্পী শম্ভু আচার্য্যরে আঁকা পটের আশ্রয়ে পালাক্রমে আখ্যান পরিবেশন করেন মঙ্গল মিয়া গায়েন। তার এই পরিবেশনা শহুরে দর্শক-শ্রোতাদের জন্য। তিন সদস্যের দলে মঙ্গল মিয়া গায়েনের সঙ্গে খমক বাজিয়েছেন জমির আলী বেপারী ও বাওয়া বাজান ওয়াজ আলী বেপারী। গুরুর ভূমিকায় ছিলেন ওয়াজ আলী বেপারী। গাজীর পালা পরিবেশন করে যাকারিয়াকে স্মরণ করে মানিকগঞ্জের চাঁন মিয়া গায়েন ও তার দল। বাংলার বাউল ফকিরদের ঐহিত্যবাহী প্রথা অনুযায়ী গাজীর পালা পরিবেশন করেন তিনি। এই গান পরিবেশনের রীতিও ভিন্নরকম। পরিবেশনা শুরুর আগে মঞ্চে স্থাপন করা হয় গাজীর আসন। সোয়া কেজি চাল, দুই প্যাকেট আগরবাতি, এক পোয়া কাঁচা দুধ, এক পোয়া বাতাসা, পাঁচটি কলা ও একটি লাল গামছা বিন্যস্ত করা হয় আসনকে। এরপর শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। লাভলু মিয়া, হারুজ মিয়া, রুহুল আমিন, শহিদ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চাঁন মিয়া হারমোনিয়াম, বাঁশি, মন্দিরা ও করতাল সহযোগে পরিবেশন করেন গাজীর পালা। পরিবেশনার আগে ছিল আলোচনা ও স্মৃতিচারণ পর্ব। এতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও মিউজিক বিভাগের শিক্ষক ও প্রখ্যাত নাট্যনির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ এবং পটচিত্রী শম্ভু আচার্য্য। সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, অতীতের সংস্কৃতি আমাদের সম্পদ। এই সম্পদকে জাদুঘর নয়, লোকনাট্যের ভেতর দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। শম্ভু আচার্য্য বলেন, গাজীর পটগান ও গাজীর পালা গান আজ বিলুপ্তির পথে। আমাদের এই প্রাচীন সংস্কৃতির সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। দুই দিনের এ উৎসবে ছিল আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার জীবনের স্মৃতিময় আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়াও ছিল আ কা মো যাকারিয়া রচিত দুটি আকরগ্রন্থের প্রদর্শনী। বই দুটি হলোÑ যোগী ঐতিহ্যভিত্তিক ‘গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস’ ও গাজীর ঐতিহ্যভিত্তিক ‘বাংলা সাহিত্যে গাজী কালু চম্পাবতী উপাখ্যান’। জাদুঘরে আকতারুন নাহারের মৃৎশিল্প প্রদর্শনী সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে শুরু হলো শিল্পী আখতারুন নাহার আইভীর মৃৎশিল্প প্রদর্শনী। পোড়ামাটির ফলকচিত্র, মৃৎপাত্র ও মোজাইক চিত্রকর্মের আশ্রয়ে শিল্পী সাজিয়েছেন তার মৃৎশিল্পের সম্ভার। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও গ্যালারি কসমস। যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুস সামাদ, ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এএইচএন সেওং-দু, বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান এবং ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য দেন গ্যালারি কসমসের চেয়ারম্যান এনায়েত উল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আকতারুন নাহার। হাশেম খান বলেন, প্রদর্শনীতে শিল্পী আকতারুন নাহার তিনটি ধারার (পোড়ামাটির ফলক-চিত্র, মৃৎপাত্র ও মোজাইক চিত্র) শিল্পকর্ম উপস্থাপন করেছেন। এসব শিল্পকর্ম তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং মৃৎশিল্প মাধ্যম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল। তার ফলকচিত্রগুলো যে কোন বাড়ির দেয়াল শোভিত করার জন্য রুচিশীল প্রয়াস। বক্তব্যে তিনি জাতিসংঘের প্রধান ভবনে বাংলাদেশের একমাত্র শিল্প হিসেবে ময়নামতির মৃৎশিল্প সংগৃহীত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। মুনতাসীর মামুন বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প হিসেবে মৃৎশিল্প আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত। এটি মানব সভ্যতারও সবচাইতে পুরনো শিল্প। অনুভূতি ব্যক্ত করে আকতারুন নাহার বলেন, মৃৎশিল্প একটি জটিল মাধ্যম এবং সময়সাপেক্ষ কাজ। আমার এই দীর্ঘ সময়ের কাজকে আজ সকলের সামনে তুলে ধরতে পরে আমি খুবই আনন্দিত। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকের ১৩৪টি শিল্পকর্ম। এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা এবং শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী। ১৮ দেশের শিশু শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের শিশুদের অংশগ্রহণে সোমবার বিকেলে মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান হয়ে গেল শিশু একাডেমি মঞ্চে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী শিশুসহ আমেরিকা, ফিলিপিন্স, ভারত, স্পেন, তুরস্ক, ইয়েমেন ও শ্রীলঙ্কাসহ আঠারো দেশের শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় নৃত্য-গীতের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নৃত্যনাট্য ‘রক্ত দিয়ে কিনলাম’ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। এছাড়া সুরের মূর্ছনায় ‘বাঁশের লহরী’ পরিবেশন করে রাঙ্গামাটি শিশু একাডেমির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সোমবার সকালে একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বিশেষ অতিথি ছিলেন উক্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের পরিকল্পনা শাখার প্রধান কার্লোস এ কস্তা। একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অহিংসা দিবসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজন বিশ্ব অহিংসা দিবস স্মরণে সোমবার আলেচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনকে জাতিসংঘ বিশ্ব অহিংসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
×