ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী

সন্তান ভরণপোষণ না করলে মামলা করতে পারবেন বাবা-মা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১ অক্টোবর ২০১৭

সন্তান ভরণপোষণ না করলে মামলা করতে পারবেন বাবা-মা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কাছ থেকে ভরণ-পোষণ পাওয়া বাবা-মার জন্য করুণা নয়, এটা তাদের অধিকার। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী পিতা-মাতাকে এখন ভরণ-পোষণ দিতে সন্তান বাধ্য থাকবে। না দিলে তাদের বিরুদ্ধে বাবা-মা যে কোন আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সভ্যতা’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, অধিকার প্রতিষ্ঠা থাকুক নিজ গৃহে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন করার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এখন পর্যন্ত এই আইন তৈরি হয়নি। আমরা সংসদে সেটা পাস করেছি। কেউ যদি তার সন্তানের কাছ থেকে ভরণ-পোষণ না পান, তাহলে মামলা করতে পারবেন। সন্তান বাধ্য হবে, পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ দিতে। তিনি আরও বলেন, আমি সারাজীবনের পরিশ্রম দিয়ে সন্তান মানুষ করব, আর শেষ বয়সে ওল্ডহোমে (বৃদ্ধনিবাস) গিয়ে থাকব তা হতে পারে না। সব ভালবাসার মধ্যে লিমিটেশন থাকে কিন্তু সন্তানের প্রতি বাবা-মার ভালবাসার মধ্যে কোন লিমিটেশন নেই। জীবনের শেষ বিন্দু দিয়ে সন্তানদের সুখী করতে চান। বাবা-মা এমন মানুষ, সন্তানের বেলায় সব কিছু ত্যাগ করতে তাদের একটুও বাধে না। আমি আমার ছেলে, ছেলের বৌ, নাতি-নাতনি নিয়ে থাকবÑ এটা আমার অধিকার। দেশে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, সন্তান সম্ভবা ভাতাসহ প্রায় ৮০ থেকে ৯০ রকম ভাতা চালু রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন দেশে ৮০ থেকে ৯০ রকম ভাতা রয়েছে। গ্রামে ভাতা পায় না এমন সংখ্যা খুব কম। এটা সরকারের বিশাল সাফল্য এবং দারিদ্র্য দূর করতে বিরাট পদক্ষেপ। মুজিবুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশের যে কোন ব্যবসায়ীর দুই কোটি টাকা মূলধন এবং তিন কোটি টাকার সম্পদ থাকলে তিনি যে রিটার্ন সাবমিট করবেন তাতে মুনাফার ৫ শতাংশ আলাদা করতে হবে। শ্রম আইনে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, মুনাফার এই ৫ শতাংশকে ১০০ ভাগ করে ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সমান ভাগে বিতরণ করতে হবে। আর ১০ ভাগ প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ড করে জমা রাখবে ভবিষ্যত আপদ-বিপদের জন্য। আর বাকি ১০ ভাগ শ্রম মন্ত্রণালয়ের ‘শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে’ জমা দিতে হবে।তিনি বলেন, আমি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসার পর দেখলাম শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ফান্ড আছে মাত্র ৪০ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমি বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। এখন এই ফান্ডে আড়াইশ’ কোটি টাকা জমা হয়েছে। বেসরকারী খাতের যে কোন শ্রমিক কাজ করার সময় মারা গেলে ফান্ড থেকে তার পরিবারকে দুই লাখ টাকা দেয়া হবে। বাংলাদেশের যে কোন শ্রমিকের সন্তান সরকারী মেডিক্যাল কলেজ বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে তাকে ফান্ড থেকে তিন লাখ টাকা দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ এস এম আতীকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা যেমন ধীরে ধীরে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছি, আজ যারা তরুণ, আগামীতে তাদেরও বার্ধক্যে পৌঁছাতে হবে। এটা অনিবার্য। এ কারণে প্রত্যেকেরই উচিত সময় থাকতে প্রস্তুতি নেয়া। কারণ শেষ বয়সে আপনার হাতে টাকা না থাকলে কেউ আপনার পাশে দাঁড়াবে না। আর যদি সম্পদ বা নগদ টাকা আপনার হাতে থাকে, তাহলে সবাই আপনার দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সেক্রেটারি সৈয়দ আবদুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মাহবুব উল আলম, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের যুগ্ম নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শফিক শামিম প্রমুখ।
×