ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ সফলতা অর্জনের জন্য দরকার হয় অনেক ব্যাপারের সঠিক সমন্বয়। পরিকল্পনা, সদিচ্ছা, চেষ্টা বা পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস, মেধা এবং খানিকটা ভাগ্যের ছোঁয়া। ভুটানের থিম্পুতে চলমান সাফ অনুর্ধ-১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের সামনে এখন সফলতা অর্জনের হাতছানি। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এই আসরে তাদের সামনে এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুর্বণ সুযোগ অপেক্ষা করছে। পাঁচ জাতির এই ফুটবল আসরে লীগ পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে সেরা তিনটি দলের ভাগ্য। পয়েন্ট টেবিলে আপাতত দাপটের সঙ্গে শীর্ষেই অবস্থান করছে লাল-সবুজ বাহিনী। নিজেদের দুই খেলায় তারা প্রতিটিতেই জিতে অর্জন করেছে ৬ পয়েন্ট। স্বাগতিক ভুটানেরও সমান পয়েন্ট। তবে তারা খেলেছে এক ম্যাচ বেশি। তাছাড়া গোল তফাতেও পিছিয়ে আছে তারা (-১, বাংলাদেশ +৩)। কোন সন্দেহ নেই, এই আসরে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো (২০১৫ আসরে বাংলাদেশ ছিল সেমিফাইনালিস্ট, সেবার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় অ-১৯ নামে) শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিল ভুটানই। কেননা বাংলাদেশের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে তারাও এগিয়ে যাচ্ছিল বেশ ভালভাবেই। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে তারা হারায় যথাক্রমে মালদ্বীপকে ১-০ এবং নেপালকে (গত আসরের চ্যাম্পিয়ন)। শুক্রবার তারা খেলে তৃতীয় ম্যাচটি। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত (গত আসরের রানার্সআপ)। সবার ধারণা ছিল স্বাগতিক ভুটানের কাছে বুঝি হেরে যাবে ভারত, অথবা ড্র হবে ম্যাচটি। কিন্তু বাস্তবে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। ভারতই বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত ও অভাবনীয় উন্নতি করা ভুটানকে হারিয়ে দেয় ৩-০ গোলের স্কোরলাইনে! এর ফলে দুই দলের পয়েন্ট নষ্ট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু লাভবান হয় তৃতীয় পক্ষ। আর সে দলটি হলো বাংলাদেশ। ভারতের পয়েন্ট এখন ২ খেলায় ৩। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা হেরে যায় বাংলাদেশের কাছে। ভুটানের সঙ্গে দুই পয়েন্ট নষ্ট করায় তারা চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ল অনেকটাই। ভুটানের পয়েন্ট বেশি হলেও তারা বেশি ম্যাচ খেলায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের সামনে এখন বাকি আছে দুটি ম্যাচ। ২৫ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিপক্ষ নেপাল এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ভুটানের বিপক্ষে অবতীর্ণ হবে তারা। এই দুটি ম্যাচে কোন পয়েন্ট নষ্ট না করলে বা জিতলে আর কোন সমীকরণের দিকে বা অন্য কোন দলের ফলের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না তাদের। সেক্ষেত্রে বিনা বাধাতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করবে মাহবুব হোসেন রক্সির সুযোগ্য শিষ্যরা। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন নেপালের অবস্থা বেশ নাজুকই। ২ খেলায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে ভারতের নিচে, চার নম্বরে। আর মালদ্বীপের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরে ইতোমধ্যেই তাদের শিরোপা জেতার স্বাদ হয়ে গেছে ধূলিসাত (পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান পাঁচ দলের মধ্যে পঞ্চম)। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের অভিমতÑ ভুটান বনাম ভারতের ম্যাচটি যদি ড্র হতো, তাহলে আরও বেশি লাভ হতো বাংলাদেশের জন্য। সেক্ষেত্রে ভুটানের পয়েন্ট হতো ৩ খেলায় ৭, আর ভারতের হতো ৩ খেলায় ১। তারপরও ভারতের কাছে ভুটানের এই হারে প্রীতই তারা। এই ফলে যেমন ভুটানের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে, তেমনি আত্মবিশ্বাস আরও দ্বিগুণ বেড়েছে বাংলাদেশের। দলের কোচ রক্সিরও একই অভিমত, ‘ভুটান ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় আমাদের অনেক বড় উপকার হলো। ভুটান আজ ড্র করলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সমস্যা হতে পারত। কিন্তু বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় তাদের মনোবল অনেক ভেঙ্গে গেছে।’ নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানের মুখোমুখি হয়ে তাদের হারাতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তার আগেই অবশ্য আরেক ‘ক্ষয়িষ্ণু সাবেক চ্যাম্পিয়ন’ নেপালকে উড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তারা। প্রথম ম্যাচটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কঠিন। সেই পরীক্ষায় অবিশ্বাস্যভাবে উত্তীর্ণ হয় তারা। ০-৩ গোলে পিছিয়ে পড়েও ভারতকে তারা হারায় ৪-৩ গোলে। সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটাই যখন উতরানো গেছে, তখন পরেরগুলো তো সহজ হবারই কথা। সেটাই হয় পরের ম্যাচে। এবার মালদ্বীপকে হেসে-খেলে হারায় ২-০ গোলে। এবার তাদের হারানোর পালা নেপাল ও ভুটানকে। পারবে কি তারা?
×