ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লামায় খাল থেকে বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লামায় খাল থেকে বালু উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১৮ সেপ্টেম্বর ॥ লামা উপজেলার পাহাড়ী ঝিরি, খাল থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। শ্যালো মেশিন দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উপজেলার সরই ইউনিয়নের পলু খাল, হরি খাল, সরই খাল ও ডলু খালের অন্তত ২৫টি স্থান থেকে অবাধে দিনরাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লামার পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলা ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে। ফলে ওই সব খালে আজ আর নেই পানি ও স্রোত, হারাচ্ছে তার প্রকৃত রূপ। গতি হারিয়ে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, সড়ক, ব্রিজ। বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখেও কোন কার্যকর ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা। বালু উত্তোলন ও পরিবহনে জড়িতরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এ কারণে ভয়ে এলাকার লোকজন তাদের বাধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না। গ্রামীণ সড়ক ও ব্যক্তিমালিকানাধীন আবাদি জমি রক্ষা করতে অবিলম্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। বালুমহাল আইন অনুসারে বিপণনের উদ্দেশ্যে কোন উন্মুক্ত স্থান, ছড়া, খাল বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। সরজমিন দেখা যায়, বালুমহাল আইনকে উপেক্ষা করে সরই ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কসংলগ্ন দুমছাবিল, ছালাম মেম্বারপাড়া, ডলুছড়ি বাজার, পুলাংপাড়া, কেয়াবন্যা, হাসনাভিটা, ডোলছড়ি বাজারপাড়া, ঝটকি বনিয়াপাড়া, আমতলী মুসলিমপাড়া, কিল্লাখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ঝিরি ও খালের পানিতে ভাসমান চরাট বানিয়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে গভীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে সড়কের পাশেই পাহাড়সমান স্তূপ করছে তারা। আরও জানা যায়, ইদ্রিস কোম্পানি, নুরুল আলম, সেলিম, মঞ্জুর সওদাগর, ইসলাম, খোরশেদ চৌধুরী, আবদুর ছবুর নামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব বালু তুলছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, বালু উত্তোলনের ফলে খালগুলো স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে ফসলি জমি বিলীনের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে খালগুলোতে পানি শুকিয়ে যায়। আবার উত্তোলিত বালু বড় বড় ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়। এতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। উত্তোলিত বালু শুধুমাত্র লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিনের চালক বলেন, চুক্তিতে তারা বালু উত্তোলন করছেন। তবে এ বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রশাসনের নিকট থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। স্থানীয় গৃহবধূ সাকেরা খাতুন বলেন, খাল থেকে বালু তোলার কারণে পানি কমার পাশাপাশি ফসলি জমির ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আবার বালু পরিবহনের কারণে ক্যায়াজুপাড়া-সুয়ালক-লোহাগাড়া, ডলুছড়ি-পুলংপাড়া, লামা-ক্যায়াজুপাড়া, কিল্লাখোলা-পুটিভিলা সড়কের প্রায় স্থানের দু’পাশ দেবে গেছে, দ্রুত বালি পরিবহনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করা না হলে অচিরেই সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। স্থানীয়রা মনে করেন, নির্মাণকাজে বালুর প্রয়োজন আছে। সেক্ষেত্রে সরকারীভাবে যদি এলাকা নির্ধারণ করে বালুমহাল লিজ প্রদান করা হতো তাহলে সরকারীভাবে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় হতো এবং পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করলে বাঁধ, গাছপালা, ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা পেত। বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ইদ্রিস কোম্পানি ও নুরুল আলম বলেন, আগে বালু তুলেছিলাম, এখন বালু উত্তোলন করছি না। সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা ইউনিয়ন পরিষদকে তোয়াক্কা করছে না। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনা শুনেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×