ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার সীমান্তে সেনা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমার সীমান্তে সেনা

মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে নতুন করে সেনা মোতায়েন করেছে। এর আগে তারা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় মাইন পেতে রেখেছিল। দুটোই আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। মিয়ানমার সরকার সে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে নিজেদের জড়াচ্ছে। সীমান্তে আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা এর সত্যতা গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েকটি ধারাবাহিক হত্যার ঘটনার পর রাখাইন প্রদেশে নতুন করে কয়েক শ’ সেনা পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জিরো লাইনেও ১২৪ জন সেনা সদস্য মোতায়েন করেছে ইয়াংগুন। রোহিঙ্গাদের বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়ার প্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সময় এমন সিদ্ধান্ত নিল মিয়ানমার। এতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, রাখাইনের উত্তর মংডু, বুচিদং, রাচিদং শহর এলাকার সর্বত্র সেনা আগ্রাসনে এখন যেন মৃত্যুপুরী। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এর প্রতিবাদ না জানালেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এভাবে সেনা মোতায়েন সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। আইনে আছে যে, কোন সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে সেনা টহল বা মোতায়েন নিষিদ্ধ। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্তের সব পয়েন্টে অনুরূপভাবে ধাপে ধাপে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে। এর মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গারা যাতে আর নিজ দেশে যেতে না পারে। এ পর্যন্ত বহু রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু প্রাণ নিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে বুলেটবিদ্ধ, বেয়নেট খোঁচায় ক্ষতবিক্ষত এবং স্থলমাইন বিস্ফোরণে হাত-পা উড়ে যাওয়ার সংখ্যা দুই শতাধিক। তাই বলা চলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন মিয়ানমার থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ১৫ দিনে এসেছে ৩ লাখ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার হিসাবে গত দুই সপ্তাহে দুই লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এখনও বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন সাত লাখ। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেয়া প্রায় অসম্ভব। সম্প্রতি তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেছেন। সহায়তার কথা বলেছেন। বহু মুসলিম দেশ এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চুপÑ যা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভের কারণ হয়েছে। রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে বংশানুক্রমে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে। তাদের সংখ্যা ১০ লাখ বলে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী যা করছে তা একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন বা বিতাড়িত করারই অপচেষ্টা মাত্র। জাতিসংঘের হিসাবেই বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। জাতিগোষ্ঠী নিধনের এই প্রক্রিয়াকে গণহত্যার শামিল বলে উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত মানবিকভাবে গ্রহণ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এই ভূমিকা খুবই প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান জরুরী। জোড়াতালির কোন সমাধান দিয়ে এই সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব নয়। দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আবাসস্থল ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। দরকার তাদের সসম্মানে স্বীয় দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্ববাসীকে। এই ক্ষেত্রে মিয়ানমারের দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সবার প্রত্যাশা তারা নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমানের বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বরাবরের। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে দুদেশের বাণিজ্যিক সুসম্পর্কও প্রসারিত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের বৈরিতা কারও কাম্য নয়। সবাই আশা করে মিয়ানমার দ্রুত তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে।
×