ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে সর্বাত্মক সহযেগিতায় দেবে জাকার্তা

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে সর্বাত্মক সহযেগিতায় দেবে জাকার্তা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেছেন, রোহিঙ্গা নাগরিকদের মানবিক বিপর্যয় শেষ হতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা দেবে ইন্দোনেশিয়া। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য আজ বুধবার ঢাকায় আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু। রেতনো মারসুদি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন পাবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তবে আমাকে এখানে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এখানে তিন ইস্যু তুলে ধরেছি। প্রথমটি হলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা বাংলাদেশের পাশে থেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। দ্বিতীয়ত এই ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ সহায়তা করা। তৃতীয়ত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চলমান পরিস্থিতি আলোচনা করা। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় আসেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি। বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমার সফর করেন ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রী। সেখানে মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সহিংসতা বন্ধের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা সফরে এসে রেতনো মারসুদি প্রথমে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানান ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া মিয়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণভবনে গিয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সংক্ষিপ্ত সফর শেষে মঙ্গলবার রাতেই ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের আগে রাতে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রেতনো মারসুদি এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন করেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে রেতনো মারসুদির এই সফর। রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই ইন্দোনেশিয়ায় বিক্ষোভ হচ্ছে। রবিবার জাকার্তায় মিয়ানমারের দূতাবাসের দিকে ককটেল ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে হামলার ঘটনায় নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউএনএইচসিআরের তথ্য। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসা আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বুধবার আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ বুধবার গভীর রাতে বাংলাদেশে আসছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু। নিজস্ব বিমানে তিনি আজারবাইজান থেকে ঢাকায় আসবেন। ঢাকায় আসার পরেই তার সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে তুরস্কের নীতির সঙ্গে বাংলাদেশের নীতির মিল থাকায় এ আলোচনাটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে অবস্থিত সব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন, রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ এবং কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন পরামর্শ কমিশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ। এই তিনটি বিষয়ে তুরস্কের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোগান রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের কঠোর সমালোচনাও করেছেন।
×