ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এসেছে অধিকাংশ দেশী গরু

রাজধানীর কোরবানির হাট জমে উঠতে শুরু করেছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৩০ আগস্ট ২০১৭

রাজধানীর কোরবানির হাট জমে উঠতে শুরু করেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দিন-রাত নেই, একটির পর একটি ট্রাক এসে ঢুকছে গাবতলীর পশুর হাটে। রাজধানীর চার পাশের নদী দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রলারেও আনা হচ্ছে কোরবানির পশু। ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে বেচাকেনা। ঘুরে দেখা গেছে, হাটে আসা অধিকাংশ গরুই দেশী জাতের। হাটে এবারও চোখে পড়েছে মোটাতাজা গরু। বেপারিরা জানালেন, এগুলো দেশী। বললেন, বেশি খাওয়ানোর ফলে মোটা হয়ে গেছে। হাটে খুব বেশি ক্রেতা দেখা না গেলেও গরুর দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই আসছেন পশুর দাম যাচাই করতে। বেপারিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, ট্রাক নিয়ে আসার সময় রাস্তার পার্শ্ববর্তী হাটের ইজারাদারের লোকজন জোর করে গরু নামিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আবার পথে চাঁদাবাজির অভিযোগও তুলেছেন। রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে এবার রেকর্ড সংখ্যক কোরবানির পশু উঠেছে। সব মিলিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হাট বসেছে ২৪টি। ২৩টি হাট আগে বসার অনুমোদন দেয়া হলেও গত সোমবার দক্ষিণে শেষ মুহূর্তে একটি অবৈধ হাটকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং তা হচ্ছে কমলাপুর টিটিপাড়া এলাকার রাস্তায়। মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, সারাদিনই ট্রাক-পিকআপে করে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দিনের বেলা প্রতি ঘণ্টায় ১০-১২টি পশুবাহী ট্রাক আসছে এ হাটে। রাতের বেলায় এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ট্রাকেই আসছে গরু। কিছু আসছে ট্রলারে। ভিটিতে ট্রাক পার্কিং করা হলেই হলুদ রঙের শার্ট পরা হাটের রাখালরা দৌড়ে গিয়ে উঠছেন ট্রাকে। ট্রাক থেকে সারি করে বাঁধা গরুর রশি ধরে টেনে নামিয়ে তারা পৌঁছে দিচ্ছেন হাটে পাইকারের নির্দিষ্ট স্থানে। এ হাটের রাখাল আলম চাঁন জানান, কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। দিনের তুলনায় রাতে বেশি আসছে ট্রাক। কুষ্টিয়া থেকে ২২টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন মোঃ বাদল। প্রতিবছর এ হাটেই গরু নিয়ে আসেন তিনি। জানালেন, গত রবিবার রাতে এসেছেন। অনেক ক্রেতাই দাম জেনে চলে যাচ্ছেন। একই কথা জানান, ঈশ্বরদী থেকে আসা বেপারি ইয়াকুব মিয়া। বললেন, হাটে ১৬টি দেশী গরু নিয়ে এসেছি। ব্যবসা ভাল হলে আরও আনব। দাম কমে গেলে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা জানালেন এ বেপারি। গাবতলী হাটে এবার বড় আকারের গরু দুই লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছে পাইকাররা। আর মাঝারি গরু ৬৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। ছোট গরুর দাম ৪০ থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত। আর বড় আকারের খাসির দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। ছোট খাসির দাম ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। তবে বাজারে এখনও ভারতীয় গরু না আসায় ব্যবসায় লাভ হবে বলে আশা করছে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা। হাটের পশ্চিম পার্শ্বে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করছেন পাবনার বেপারি সুবল বিশ্বাস। ক্রেতার কাছে দুই গরুর দাম চেয়েছেন আড়াই লাখ টাকা। দাম শুনেই সোজা পথ মাপলেন ওই ক্রেতা। পরে কথা হয় সুবল বিশ্বাসের সঙ্গে। জানালেন, কম দামে গরু ছাড়ার সুযোগ নেই। সব কিছুরই এখন দাম বেশি। গত বছরের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে ট্রাকের। রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা থেকে গাবতলীতে এসেছেন ক্রেতা সাঈদ আহমেদ। তিনি জানান, এবার হাটে কোরবানির গরু যেমন বেশি, এখন পর্যন্ত দামও অনেক বেশি। গরুর সরবরাহ ভাল থাকলে শেষ মুহূর্তে দাম কমে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করলেন এই ক্রেতা। আরেক ক্রেতা মকবুল হোসেন জানান, দাম শুনে তো হতবাক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গতবারের তুলনায় দুইগুণ দাম হাঁকাচ্ছেন বেপারিরা। এদিকে রাজধানীর আফতাবনগর হাটে পশু অনেক উঠলেও এখনও আশানুরূপ ক্রেতা মিলছে না। অনেক ব্যবসায়ী বলছে, কিছু ক্রেতা এসে ঘুরে দেখে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া থেকে আসা আতিয়ার রহমান বলেন, আমার বড় আকৃতির দুটি গরু দুই লাখ ২০ হাজার টাকা করে দাম চাচ্ছি। এক লাখ ৯০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করে ফেলব। এর কম বিক্রি করলে নিজের পরিশ্রমের বিনিময়ে কিছু পাব না। ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে দুটি গরু নিয়ে এসেছেন সাইদুর রহমান। প্রতিটি গরুর পেছনে দৈনিক ৪০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। একটি গরু পালন করতে ৮-৯ মাসে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় গরু না এলে বিক্রির পর কিছু টাকা লাভ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন। হাটে ভারতীয় গরু খুব একটা চোখে না পড়লেও কিছু নেপালী গরু দেখা গেছে। কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী মোঃ ঝিনু মিয়া পাঁচটি নেপালী গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি প্রতিটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা করে। এ হাটে মাঝারি আকারের গরুর উপস্থিতিও বেশ। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার চিনাপাখুড়া বাজার এলাকার মঞ্জু ব্যাপারী ২২টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। একই আকারের এ গরু তিনি ৬৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে দাম চাচ্ছেন। এ ব্যবসায়ী জানান, ক্রেতার চাহিদা কম থাকলে গরুপ্রতি আরও পাঁচ হাজার টাকা কম হলেও বিক্রি করবেন। এ হাটে বড় আকারের গরু পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে প্রতিটি হাটের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ডিএমপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি হাটেই পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপির সঙ্গে আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। পশু ব্যবসায়ীরা যেন নির্বিঘেœ লেনদেন করতে পারেন এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ নিরাপদে নিয়ে আসতে পারেন, সেজন্য ডিএমপি ব্যবসায়ীদের ‘মানি সিকিউরিটি’ সুবিধা প্রদান করছে।
×