ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যাচ্ছে

রূপপুরের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নিতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ আগস্ট ২০১৭

রূপপুরের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নিতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রর স্পেন্ট ফুয়েল বা তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ফিরিয়ে নিতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকা-মস্কোর মধ্যে চুক্তিটি সই হবে। এজন্য সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ২৮ আগস্ট রাশিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে। টাকার অঙ্কে দেশের সব থেকে বড় এই প্রকল্পর প্রাথমিক কার্যক্রম এরমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবরেই মূল নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হবে। এর আগেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চুক্তিটি সই হতে যাচ্ছে। শুরু থেকেই সরকারের তরফ থেকেই বলা হচ্ছিল রূপপুর প্রকল্পর তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য ফেরত নেবে রাশিয়া। কিন্তু এরমধ্যে একটি পক্ষ মূল চুক্তিতে বর্জ্য ফেরত নেয়ার কথা উল্লেখ নেই বলে প্রচার চালায়। এক্ষেত্রে সরকার ভুল তথ্য হাজির করছে বলে তারা দাবি করে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয় জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে চুক্তি হবে। মূল চুক্তির পর ঢাকা মস্কোর কয়েক দফা বৈঠকে পৃথক চুক্তিটি তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে গত ৫ জুন মন্ত্রিসভায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রর স্পেন্ট ফুয়েল ফেরত নেয়া সংক্রান্ত চুক্তিটি অনুমোদন দেয়া হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব আনোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য নিজেদের তত্ত্বাবধানে ফেরত নেবে রাশিয়া। তারা বর্জ্য পরিশোধনও করবে। এজন্য একটি চুক্তি সই হতে যাচ্ছে। জ্বালানি পরিবহন ও সংরক্ষণের ব্যয়ের বিষয়টি এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হবে। সূত্র মতে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক চুল্লিতে এই জ্বালানি শতভাগ ব্যবহৃত হয় না। যেটুকু বাকি থাকে, তাই তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য। যা উচ্চমাত্রায় তেজষ্ক্রিয়তা ছড়ায়। সঙ্গত কারণেই পারমাণবিক চুল্লি থেকে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য অপসারণ করার পর তা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করতে হয়। এই বর্জ্য পরিশোধন করে পুনরায় কিছু পরিমাণে ব্যবহার করা যায়। তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে তা থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ অনেক বছর ধরে মানুষ ও অন্যান্য প্রণীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়। তাই জ্বালানি বর্জ্য ফেরত নেয়ার বিষয়ে শুরু থেকেই ঢাকার চাপ ছিল মস্কোর উপরে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের শুরুর দিকের আলোচনায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষভাবে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। সূত্রমতে চুক্তিটি সই করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া যাচ্ছেন। প্রতিনিধি দলের অন্য দুই সদস্য হলেনÑ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণায়ের সচিব আনোয়ার হোসেন ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শওকত আকবর। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হবে পাঁচ টাকা। যা গ্যাস ছাড়া অন্য যে কোন জ্বালানির চেয়ে কম দরের। দেশে কয়লা চালিত বিদ্যুত উৎপাদনে (আমদানি করা কয়লা) দিয়ে গড়ে সাত থেকে আট টাকায় বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। দেশীয় কয়লাতেও উৎপাদন ব্যয় ৫ টাকার বেশি। এলএনজিতেও সাত থেকে আট টাকা দরে বিদ্যুত পাওয়া যাবে। আর জ্বালানি তেলে বিদ্যুত উৎপাদনে এর চারগুণ ব্যয় করতে হবে। একই পরিমাণ ব্যয় হয়ে থাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ৯০ ভাগ প্লান্ট ফ্যাক্টরে চালানো যায়। সঙ্গত কারণে অন্য কেন্দ্রর থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বেশি হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের সহযোগিতায় বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে রশিয়ার এ্যাটোমসট্রয় এক্সপোর্ট। ভূমি উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণ, নক্সা প্রণয়ন এবং জরিপসহ বিভিন্ন প্রাথমিক কার্যক্রম এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। বাংলাদেশ এ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মেজাম্মেল হক বলেন, স্পেন্ট ফুয়েল ছাড়াও পারমণাবিক কেন্দ্রে কিছু অল্প মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তা প্রকল্প এলাকাতেই সংরক্ষণ করা হয়। সাভারে তিন মেগাওয়াটের যে নিউক্লিয়ার প্লান্ট আছে তার বর্জ্যও আমরাই সংরক্ষণ করি। রূপপুরেও স্বল্প মাত্রার এই বর্জ্যগুলো নিজেদের সংরক্ষণ করতে হবে। মূল চিন্তা স্পেন্ট ফুয়েল নিয়ে। রাশিয়ার স্পেন্ট ফুয়েল ফেরত নেয়াকে তিনি সুখবর হিসেবে দেখছেন। তিনি জানান, রাশিয়া এই স্পেন্ট ফুয়েল পরিশোধন করে আবার ব্যবহার উপযোগী করে তোলে। পরিশোধন কালে কিছু তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে তা রাশিয়াই রেখে দেবে। পরিশোধন ফুয়েল রাশিয়াতেই থাকবে না বাংলাদেশে ফেরত আসবে তা চুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট হবে। বলা হচ্ছে বিদ্যুতকেন্দ্র চালুর কমপক্ষে ১০ বছর পর স্পেন্ট ফুয়েল অপসারণ শুরু হবে। সরকারে পরিকল্পনা দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ২০২২ সালে চালু হবে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে স্পেন্ট ফুয়েল অপাসরণ ও সংরক্ষণের ব্যয় অনেক বেশি। যা বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, জ্বালানি অপসারণের খরচ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ বিদ্যুত প্রকল্পের মোট ব্যয়ের তুলনায় এটা খুব বেশি হবে না। তিনি বলেন, স্পেন্ট ফুয়েল ব্যবস্থাপনার খরচ বিদ্যুত কেন্দ্রর আয় থেকে মেটানো হবে।
×