ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইড্রোলিক হর্ন

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৬ আগস্ট ২০১৭

হাইড্রোলিক হর্ন

ঢাকার রাস্তায় পরিবহনের হাইড্রোলিক হর্নের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। ২৭ আগস্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট হর্ন বাজানো গাড়িও জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। শুরু থেকে ২ দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদনও জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধের ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বায়ু ও পানি দূষণের ওপর বিভিন্ন সময়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ আসলেও শব্দ দূষণ নিয়ে সেভাবে কোন নির্দেশনা জারির খবর ছিল না বললেই চলে, যা অত্যন্ত জরুরী। কারণ সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষ শব্দ দূষণেও আক্রান্ত হচ্ছে সব সময়ই। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ কিংবা অসুস্থ রোগী এমনকি শিশু-কিশোররাও এই শব্দ দূষণের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। শব্দ গ্রহণ মাত্রা একজন মানুষ কতখানি নিতে পারে তারও একটি নির্ধারিত নিয়ম আছে। মূলত ৪০-৫০ ডেসিবেলের শব্দ মাত্রা একজন পূর্ণাঙ্গ সক্ষম মানুষ মোটামুটি গ্রহণ করতে পারে। এর অতিরিক্ত শরীরের সংশ্লিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ স্বাস্থ্যে নানা মাত্রিক সমস্যা তৈরি করে। এ সমস্যা শুধু নির্দিষ্ট স্থান কিংবা এলাকায়ই নয়, আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়লে তা মানুষের শ্রবণশক্তির ওপর ভীষণভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হৃদযন্ত্রের ওপরও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাভাবিক শব্দ মাত্রায় যেখানে বিপদের আশঙ্কা থাকে, সেখানে হাইড্রোলিক হর্ন তো একেবারে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আবাসিক এলাকা এবং রাতের বেলায় এই শব্দমাত্রা কোনভাবেই নির্ধারিত ডেসিবেলকে অতিক্রম করতে পারবে না। হাইড্রোলিক হর্নের লাগাতার এবং তীব্র শব্দ যেভাবে শ্রবণেন্দ্রিয়র ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে হাইড্রোলিক হর্নকে একেবারে তুলে দেয়া এবং স্বাভাবিক হর্নের শব্দমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনা ভীষণ জরুরী। শব্দ দূষণের অনেক কারণ থাকলেও প্রথম এবং প্রধান কারণই হর্ন। এক জরিপে জানা যায়, নির্মাণ কাজ এবং কল-কারখানায় সৃষ্ট যান্ত্রিক শব্দ দূষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী। শব্দের মাত্রা কমিয়ে আনতে না পারলে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখানে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি গণসচেতনতাও অত্যন্ত জরুরী। সুতরাং আইনের প্রয়োগ যেমন শব্দ দূষণের বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা নেবে, একইভাবে চালকের সচেতন অভিব্যক্তিও সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মুমূর্ষু রোগী বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক কার্যক্রম কিংবা কোন ভিআইপির ক্ষেত্রে হর্ন বাজানোর বিধি থাকলেও তা সাধারণত মানা হয় না। অকারণে, অপ্রয়োজনে উচ্চমাত্রার হর্ন যাত্রী সাধারণের ওপর যে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে তা অনাকাক্সিক্ষত। বিশেষ করে চালকরাই অনিয়ন্ত্রিত এবং বেপরোয়াভাবে হর্নের শব্দমাত্রায় সড়কের মানুষদের অস্থির করে তোলে। এই হর্নের শব্দ দূষণ থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দেয়ার লক্ষ্যেই কোর্ট হাইড্রোলিক হর্নের ওপর এমন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সকলের প্রত্যাশা- আদালতের এই নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই সচেতন হবেন এবং যথাযথ কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
×