ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে নদী এখন মরা খাল

সিংহ নদীর তীর দখল করে স্থাপনা ॥ দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৯ আগস্ট ২০১৭

সিংহ নদীর তীর দখল করে স্থাপনা ॥ দেখার কেউ নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ১৮ আগস্ট ॥ কেরানীগঞ্জের সিংহ নদী দখল করে ভূমিদস্যুরা নির্মাণ করেছে ইটভাঁটি। অবৈধ দখলের ফলে দিনে দিনে সিংহভাগ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ দশকে নদীর ৫০ কিলোমিটার জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক ভবন, মার্কেট ও ইটভাঁটি প্রতিষ্ঠান। নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতে সেচ ও নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী ক্রমাগত ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, মার্কেট ও ইটভাঁটি। ভূমিদস্যুরা দুই হাতে কামিয়ে নিচ্ছে কালো টাকা। ইতোমধ্যে তারা মাঝ নদীতে বালু ভরাট করে নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন। এ অপকর্মে জড়িত উপজেলা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ভূমিদস্যুরা ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে কেউবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, দখল করে নিয়েছে সিংহ নদী। অথচ কোন এক সময় লোকজন এই নদী দিয়ে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে নৌপথে যাতায়াত করত। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা রাজন্দ্রপুর, বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনা এমনকি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষেত্রেও এই নদী ব্যবহার করত। সিংহ নদীটি ধলেশ্বরীর আকশাইল এলাকা দিয়ে রামেরকান্দা, অগ্রখোলা, শিকারীটোলাসহ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাক্তারচর মোল্লাহাট এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। অপরদিকে নদীটি রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেলনা, আকশাইল ও কলাতিয়া হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ভারতবর্ষের সময় এই খরস্রোতা নদী দিয়ে শত শত মণের ধান-পাটবোঝাই নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত। সিংহের মতো এই নদীর ঢেউয়ের আওয়াজ ছিল। এ জন্য লোকেরা এই নদীকে সিংহ নদী বলে আখ্যায়িত করেছে। ভূমিদস্যুদের দখলের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। অথচ দেখার কেউ নেই। আবদুল্লাপুর এলাকার করিম মিয়া (৭৮) বলেন, ছোটবেলায় এই নদীতে নৌকাবাইচ করেছি। তখন বড় বড় নৌকা পাল তুলে চলত। বাস্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসকর আলী বলেন, সিংহ নদীর সিংহের মতোই গর্জন ছিল। বাল্যকালে নদী পার হতে ভয় পেতাম। ভূমিদস্যুরা নদীর দুই পাড় দখল করে নিয়েছে। আমরা জানি, কেরানীগঞ্জ অচিরেই একটি উন্নত শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। নৌপথে যাতায়াত ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সিংহ নদীর প্রয়োজন আছে। কিন্তু সিংহ নদীর পানি প্রবাহ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে সিংহ নদীর বাক্তারচার এলাকার অধিকাংশ জায়গা দখল করে জেবিএন, মদিনা ব্রিক্স, এনবিসিসহ বেশ কয়েকটি ইটভাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। তারা সরকারী কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে কোন রকম কাগজপত্র ছাড়াই আবার কেউবা জাল কাগজপত্র তৈরি করে ইটভাঁটি নির্মাণ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, মদিনা ব্রিক্স ইটভাঁটির মালিক হচ্ছেন নিয়াজ চৌধুরী। তিনি ১০ বছর আগে সিংহ নদীর তীরে ইটভাঁটি নির্মাণ করেন। জিবিএন ইটভাঁটির পরিচালক কামরুল হাসান ও ইউনুছ মিয়া জানান, বছর খানেক আগে আমরা বাক্তারচর এলাকার বাসিন্দা চান মিয়া মাতব্বরের পরিবারের কাছ থেকে ২০০ শতাংশ জমি প্রতিবছর ২ লাখ টাকা ভাড়ায় নিয়ে ইটভাঁটির ব্যবসা করছি। নদীর কোন জমি দখল করিনি। কেরানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ সার্কেল) রাকিব হাসান বলেন, নদীর তীর দখল করে ইটভাঁটি নির্মাণের বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নদীর জায়গা ভরাট করে কাউকে ইটভাঁটির ব্যবসা পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×