ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে বর্তমানে ১৩ কোটি ৫৯ লাখ গ্রাহক

৬ মাসে মোবাইল ফোনের গ্রাহক বেড়েছে ৯৬ লাখ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৫ আগস্ট ২০১৭

৬ মাসে মোবাইল ফোনের গ্রাহক বেড়েছে ৯৬ লাখ

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোবাইল ফোনের গ্রাহক বেড়েছে ৯৬ লাখ। নতুন গ্রাহক মিলে দেশে বর্তমানে ১৩ কোটি ৫৯ লাখ মোবাইলের গ্রাহক রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের হাতেই এখন মোবাইল পৌঁছে গেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৬৩ লাখ। আর চলতি বছরের ৬ মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৫৯ লাখ বেড়েছে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৮৬ লাখ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ২৭ লাখের কিছু বেশি। বিটিআরসি মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক বেড়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার। গত ৬ মাসে অপারেটরটির গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ। এর মধ্যে একীভূত হওয়া এয়ারটেলের গ্রাহক ছিল ৮২ লাখ ১৯ হাজার (ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী)। একীভূত রবির গ্রাহক ছয় মাসে বেড়েছে ৫০ লাখেরও বেশি। ৬ মাসে গ্রামীণফোনের গ্রাহক বেড়েছে ৩৬ লাখ। চলতি বছরে রবির গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ৬ কোটি ১৫ লাখ গ্রাহক ফোন শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ১৫ লাখ। গত ৬ মাসে বাংলালিংকের গ্রাহক বেড়েছে ৬ লাখ। অন্যান্য অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও গ্রাহক হারিযেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। গত ৬ মাসে টেলিটকের গ্রাহক কমেছে ৪ লাখ। এ বছরের জুন পর্যন্ত টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ। এয়ারটেল গত বছরের নবেম্বরে একীভূত কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে রবি ও এয়ারটেল। একীভূত হওয়ার পরও রবি আজিয়াটা লিমিটেড নামে অপারেটরটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদিকে চলতি বছরের ৬ মাসে মোবাইল গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেট গ্রাহকও বেড়েছে। দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৮৬ লাখ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে বছর শেষে ৮ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে বিটিআরসি আশা প্রকাশ করেছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ১৬ কোটি দেশের মানুষের মধ্যে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল পৌঁছে গেছে। এটা এক ধরনের বিপ্লব। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন উন্নতি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই ঘটেনি। একইভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকেও দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দেশে প্রায় ৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টি ইতিবাচক। দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। আবার ইন্টারনেটের অপব্যবহারও ঘটছে। অপব্যবহারের পরিমাণ খুব কম। এখন আর ইন্টারনেট ফেসবুক ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইন্টারনেটে অনেক ভাল কাজ হচ্ছে। বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে ইন্টারনেটে। দেশে মানুষ ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ১২০ ধরণের সেবা পাচ্ছেন। সারাদেশের এ প্রান্ত ও প্রান্ত পর্যন্ত মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। এখন আর কেউ দূরে নেই। সবাই যেন খুব কাছাকাছি বসবাস করছেন। যখন তখন বাবা মা ভাই বোন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। বিটিআরসির প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৭ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই এ সেবা নিচ্ছেন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অন্যদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্কের (পিএসটিএন) ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৪৬ লাখ ২২ হাজার। এই জায়গায় এখন ইন্টারনেট সেবা পিছিয়ে রয়েছে বলে বিটিআরসি উল্লেখ করেছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বাড়াতে না পারলে গ্রাম পর্যায়ের মানুষ শহরের মানুষের থেকে পিছিয়ে পড়বে। যদিও সরকার ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিয়ে গেছে। কিন্তু এই সেবা শুধু ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। নিজেদের ইচ্ছে মতো ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কেউ ব্যবহার করতে পারছেন না। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। অনেক দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হিমশিম খাচ্ছে। মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানো না হলে মেধাবী দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না। যদিও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ সম্প্রতি বলেন, ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের জন্য আইটিইউ’র এক কর্মকর্তাকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য নিয়োগ দিয়েছি। কস্ট মডেলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। কস্ট মডেলিং হয়ে গেলে বোর্ড সভায় আলোচনা করে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করব। তবে এখনই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে না। পরামর্শকের সুপারিশ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য দাম ধরা হবে। ‍
×