ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেই শোকের স্মৃতি

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১২ আগস্ট ২০১৭

সেই শোকের স্মৃতি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, তখন আমি ক্লাস থ্রি-তে পড়ি। কুমারখালী শহরের পাশে বাটিকামারা সরকারী প্রাইমারী স্কুল। সকালে স্কুল থাকায় সকালেই স্কুলে পৌঁছেছি। তখনও ক্লাস শুরু হয়নি, আনুমানিক সকাল ৮টার মতো হতে পারে। সেই মুহূর্তে বয়স্ক এক ব্যক্তি স্কুলে এসে স্যারদের জানাল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। যিনি এই সংবাদটি জানালেন তার নাম হলুত মোল্লা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি শহীদ গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই। ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সকালে কুমারখালী বড় জামে মসজিদ ঈদগা ময়দানে ঈদের নামাজ পড়াকালীন, হাজার হাজার মুসল্লির মধ্যে জাসদ নামধারী একদল অস্ত্রধারীর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, স্বাধীন বাংলার সর্বপ্রথম নির্বাচিত কুষ্টিয়া জেলার খোকসা কুমারখালীর এমপি শহীদ গোলাম কিবরিয়া। তার ৮ মাস পরেই সংবাদ পেলাম এদেশেরই একদল বিপথগামী সেনা ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার পরিবারবর্গ। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদে স্কুলের স্যাররা এবং আমরা সকল ছাত্রছাত্রী শোকে পাথর হয়ে পড়ি। সেই মুহূর্তে স্যারেরা সবাইকে ছুটি দিয়ে স্কুল বন্ধ করে যার যার বাড়ির পথে রওনা দিলেন। আমি রেল গেটের কাছে এসে দেখি কুমারখালীতে ক্যাম্প করে থাকা রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা ট্রেন বোঝাই করে ঢাকার দিকে ফিরছে। বাড়ির সামনে এসে দেখি মহল্লার সকল মানুষ গোল হয়ে বসে রেডিওর খবর শুনছে। আমিও সেখানে দাঁড়িয়ে খবর শুনি, বাংলাদেশ বেতার পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ বলা হচ্ছে। ২-১ মিনিট পর পর ঘোষণা দেয়া হচ্ছে, আমি মেজর ডালিম বলছি স্বৈরাচারী মুজিব সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে, নতুন সরকারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে খোন্দকার মোশতাক আহমদকে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। রক্ষীবাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। রেডিওতে শুধু ঘোষণা, খবর আর দেশের গান বাজানো হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কেমন যেন চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিকেল হলো। বাজার চৌরাস্তায় গিয়ে দেখি কিছু মানুষ সরকার পরিবর্তনে খুশি। কারণ এদের মধ্যে কিছু লোক রক্ষীবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে নির্যাতন ভোগ করেছে। ছাড়া পেয়ে আনন্দ উল্লাস করছিল। এমপি গোলাম কিবরিয়া হত্যার কারণে কুমারখালীতে অসংখ্য জাসদ কর্মী রক্ষীবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জেলখানার বাসিন্দা হয়। এরাও পরে ছাড়া পায়। এমপি গোলাম কিবরিয়া শহীদ হলে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন মনসুর আলী হেলিকপ্টার নিয়ে কুমারখালীতে আসেন তাকে শেষ শ্রদ্ধা ও দাফনে অংশ নিতে। আমার জীবনে সেই প্রথম হেলিকপ্টার দেখি। আমার স্মৃতিতে শহীদ গোলাম কিবরিয়া হত্যা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা দুটোই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন বলে, মহান আল্লাহ তাদেরকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। তারা দীর্ঘজীবী হোন। আশরাফুল ইসলাম বকুল কুমারখালী, কুষ্টিয়া
×