এম শাহজাহান ॥ নিরাপদ কোরবানির মাংসের স্বার্থে খামার পর্যায়ে তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খামারগুলোতে গরু ও ছাগল মোটাতাজাকরণে জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। কোরবানি সামনে রেখে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেশের সকল জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
অভিযোগ রয়েছে, আগামী কোরবানি সামনে রেখে অধিক মুনাফার আশায় নিষিদ্ধ ও মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খাইয়ে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেনÑ এ খাতের অসাধু ব্যবসায়ী ও খামার মালিকেরা। অসাধু খামারিরা পশু মোটাতাজাকরণে নিষিদ্ধ ডাইক্লোফেন ও স্টেরয়েড হরমোন প্রয়োগ করছে। অধিক তাপে রান্নার পরও নষ্ট হয় না মাংস থেকে যাওয়া এসব স্টেরয়েড। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, স্টেরয়েড মাংসযুক্ত মানবদেহে প্রবেশ করে সৃষ্টি করে নানা রোগব্যাধি, এমনকি কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুও হতে পারে। এ কারণে অসুস্থ পশু শনাক্ত করা এবং নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ বন্ধে সরকারী পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, আগামী কোরবানির নিরাপদ মাংস নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা বাড়ছে। পশু মোটাতাজাকরণে যাতে কোন ধরনের বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ না হয়, সে লক্ষ্যে সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদের বরাবর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছেÑ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশে এবার বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু কোরবানি করা হয়। নিরাপদ পদ্ধতিতে পালিত উপযুক্ত ও সুস্থ-সবল কোরবানির পশু প্রাপ্তিতে ভোক্তা শ্রেণীর আস্থা অর্জন করা প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে পরিবেশবান্ধব পশু জবাই ও নিরাপদ মাংসের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে সু-সমন্বয় করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।
শুধু তাই নয়, জেলার সমগ্র খাদ্য শৃঙ্খলজুড়ে খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত কার্যক্রম নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অন্যতম এজেন্ডা-জনসাধারণের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক উর্ধতন কর্মকতা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর কোরবানি সামনে রেখে দেশে পশুপালন মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটির ব্যবহার ক্রমে বাড়ছে। সরকারের কাছে তথ্য রয়েছেÑ কোরবানি সামনে রেখে ইতোমধ্যে ওষুধটির প্রয়োগ বাড়ছে। তিনি বলেন, পশু পালনে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেলে সে পশু কোরবানির হাটে উঠতে পারবে না। অসাধু এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, খামারিদের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। যেখানে মোটাতাজাকরণে ওষুধ ব্যবহার করা হবে সেখানেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। আর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্যই জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দেশব্যাপী নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জেলা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক। আর ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ইতোপূর্বে সরকার ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করে। এ আইনটি বাস্তবায়নে নানা উদোগ নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় মাত্রাতিরিক্ত ও নিষিদ্ধ ওষুধ খাইয়ে পশু মোটাতাজা করে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। মাংসে থাকা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ সম্পর্কে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী জানিয়েছেন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধগুলো রান্নার পরেও নষ্ট হয় না। রক্তচাপ বেড়ে যায়। হরমোনে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য ওষুধগুলো চোরাইপথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়। এসব ওষুধ ১৯৮২ সালেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হলে দেদার আসছে।