ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শোকরে মাস

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৭ আগস্ট ২০১৭

শোকরে মাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগস্ট এলেই বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং চেতনায় নতুন পথ চলার দিশা খুঁজে পায়। আর কয়েকদিন পরেই বাঙালীর প্রিয় নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে দেশবাসী। শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে অন্তরের অন্তস্তল থেকে। আজ ৭ আগস্ট সোমবার। আর আটদিন পরে পালিত হবে বাঙালীর রক্তে ভেজা ইতিহাসের একটি দিন ১৫ আগস্ট। শোকদিবস। সারাদেশব্যাপী ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শোক মিছিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই করেনি। এই হত্যাকান্ডের বিচারও চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছিল। সংবিধানে ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রূদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু খুনীচক্র জানে না বর্বরোচিত এই হত্যাকা-ের বিচার একদিন বাংলার মাটিতেই সম্পন্ন হবে। ২১ বছর চক্রান্তের বেড়াজালে তারা আটকে রেখেছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার। এই সময়ে নানা কালিমায় লিপ্ত করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং দর্শনকে। কিন্তু কোন চক্রান্তেই এই বিচার ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে সোচ্চার ছিল বাঙালী। কিন্তু সেই কণ্ঠকেও রোধ করে দেয়া হয়েছিল প্রায় ২১ বছর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অবশেষে দেশে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসে শুরু করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার। কিন্তু বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে এই বিচার প্রক্রিয়াও রুদ্ধ করে দেয়। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার ধাপে ধাপে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে খুনীচক্রের নানা ষড়যন্ত্রে। শুধু বিচার বন্ধ করার চেষ্টাতে তারা থেমে থাকেনি। তারা জানত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এই বিচার সম্পন্ন হবেই। বাংলার মাটিতে তা কার্যকর করাও হবে। তাই এই বিচার যাতে সম্পন্ন না হয় এবং তা যাতে কার্যকর না হয় সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যাকেও বারবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। রক্তাক্ত এ আগস্ট মাসেই বর্বরোচিত আরও একটি হামলার শিকার হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ‘৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় তার দুই কন্যা দেশের বাইরে অবস্থানের কারণে যেমন প্রাণে বেঁচে যান। ঠিক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে রক্ষা পেয়ে যান। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার এদেশের মাটিতে সম্পন্ন হলেও এখনও কিছু ঘাতক ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে আগের দাবি ছিল বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের যারা নারকীয়ভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এরপর জনগণের দাবি অনুযায়ী খুনীদের ফাঁসি অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি ওঠে। সে দাবিও কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে এখন নতুন করে জনগণের পক্ষ থেকে আরও দাবি উঠছে এ মামলায় যেসব খুনী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদের বিচারও কার্যকর করতে হবে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এদেশে সম্পন্ন হলে তার হত্যাকান্ডে এদেশে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তার জের আজও বহন করেতে হচ্ছে জাতিকে। এই শূন্যতা কোনদিন পূরণ হবার নয়। ’৪৭-এর পথ ধরে ব্রিটিশদের অধীন থেকে মুক্তির যে স্বাদ পেয়েছিল এ দেশবাসী কিছুদিন যেতে না যেতেই তা ফিকে হতে থাকে। বাঙালীর সব আশা আকাক্সক্ষা ধুলায় মিশিয়ে আবার পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চেয়েছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর তারা বাঙালী জাতির ওপর চালিয়েছে নতুন করে ঔপনিবেশিক শাসন। সেই স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব ছিল না। যার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব অবশেষে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে বাঙালী জাতি তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠে বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির স্বাদ বাঙালী জাতি তাঁর নেতৃত্বে পেলেও অর্থনেতিক মুক্তির আগেই তাকে সরিয়ে দেয়া হলো এই পৃথিবী থেকে। এই সেই আগস্ট মাস। এই সেই শোকের মাস। ১৫ আগস্টের সেই কালো রাত্রিতে হত্যা করা হলো বাঙালীর প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আর মাত্র ৮দিন পরেই সেই শোকাবহ দিন আবার জাতির সামনে ফিরে আসছে। এদিন শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে পড়বে বাঙালী। স্মরণ করবে তারা শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। কণ্ঠে উচ্চারিত হবে কাঁদো বাঙালী কাঁদো। এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রলীগ। রবিবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএস জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ স্মারকলিপি প্রদান করে। এতে বলা হয়েছে- দন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফাঁসির রায় হয়ে যাওয়ার সাত বছর পরেও অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারায় সমগ্র জাতির মতোই ছাত্রলীগ প্রতিনিধি হতাশ ও চিন্তিত। তাই আমাদের বিশ্বাস জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের স্ব-ঘোষিত খুনীদের দেশে এনে ফাঁসির মঞ্চে তুলে খুনের রাজনীতি বন্ধে পৃথিবীতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে আপনার মন্ত্রণালয়। এর আগে একই দাবিতে দোয়েল চত্বর থেকে সুপ্রমীকোর্ট পর্যন্ত এলাকায় মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানেই শোষণহীন সমাজের স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। ১৫ আগস্টের কালরাতে স্বপ্নের সমাধি করে এই জাতিকে চিরতরে অভিভাবক শূন্য করে একদল নরপিশাচ, ক্ষমতালোভী, ঠান্ডা মাথার খুনীচক্র। এর পরের দুই দশকে বাঙালীর ইতিহাস শুধুই পিছিয়ে যাওয়ার, হতাশার আর বঞ্চনার। এদিকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলার ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে ছাত্র সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগ। আগামী ১২ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্র সমাবেশ সফল করতে ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ছাত্রলীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করা হবে। ছাত্র সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অধীনস্থ সকল স্কুল-কলেজ, থানা-ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান মিজানুর রহমান।
×