ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিএসপি দূর অস্ত!

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৭ আগস্ট ২০১৭

জিএসপি দূর অস্ত!

বাংলাদেশ ভুলে থাকতে চায়। ভুলে যাওয়া ছাড়া তার জন্য এখন আর বিকল্প নেই। কারণ, ভুলে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এ যেন অনেকটা ভুলে থাকতে বাধ্য করা। অথচ এমনটা হবার কথা ছিল না। কিন্তু অবস্থা এমন করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ যতই এগিয়ে যাক, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হোক না কেন, তারপরও প্রতিবন্ধকতা মুক্ত করার উদ্যোগ নেই। এও এক ধরনের নিপীড়ন এবং তা বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ সকল শর্ত পূরণ করার পরও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। পাঁচ বছর ধরে চলছে এই অবস্থা। বাংলাদেশ বারবার দাবি জানালেও সেই দাবির প্রতি কোন ভ্রƒক্ষেপই করা হচ্ছে না। অযথাই বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দেব, দিচ্ছি করে বহুবার বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আর এই ভিন্নতার কারণেই বাংলাদেশ বলতে বাধ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে এ দেশের পণ্যের অগ্রাধিকার বা অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পাওয়ার বিষয়টি ভুলে থাকতে চায়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তো বলেছেন, বাংলাদেশ যতই পদক্ষেপ নিক না কেন, কেয়ামত পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষোভ, বেদনায় মথিত এমন ভাষ্য অবশ্যই বাস্তবতাবিবর্জিত নয়। কারণ অযথাই অযাচিতভাবে ঝুলিয়ে রাখার মধ্যে কোন কার্যকারণ এতে মেলে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেন কানে দিয়েছে তুলোর পর্যায়ের অবস্থান নিয়েছে। ২০১৩ সালের জুন মাসে দুর্বল শ্রম অধিকার ও অনুন্নত কর্মপরিবেশের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে পোশাক শিল্পের ওপর চাপ পড়ে। জিএসসি স্থগিত হবার কারণে অন্যান্য পণ্য রফতানির ক্ষেত্রেও অনুরূপ অবস্থা হয়। অথচ একক বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রফতানি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অল্প কিছু পণ্যে জিএসপি সুবিধা পাওয়া গেলেও ব্যাপকার্থে তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। স্থগিত করার বছর ২০১৩ সালে মাত্র তেইশ মিলিয়ন ডলারের পণ্য জিএসপির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাঁচ শ’ কোটি ডলার শুধু রফতানি শুল্ক বাবদ দিয়ে বাংলাদেশী পণ্য গেছে সে দেশে। অথচ প্রতিবছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে চলেছে। গত দুই বছরে বাণিজ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। জিএসপি সুবিধা স্থগিত হবার পর শ্রমের পরিবেশ ও শ্রমিকের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করতে অনেক কাজ করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র যে ষোলটি শর্তারোপ করেছে বাংলাদেশ সেসব শর্ত পূরণ করলেও তা তাদের মনঃপূত হচ্ছে না কেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য এর পেছনে অন্য কার্যকারণও থাকতে পারে। ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার এক ঘনিষ্ঠ বাঙালী বন্ধু এই জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার নেপথ্যে বলে প্রচার রয়েছে। আর বিএনপি-জমায়াত জোট নেত্রী তো যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রে খোলা পত্র লিখে উল্লেখ করেছিলেন, বাংলাদেশকে যেন জিএসপি সুবিধা দেয়া না হয়। কি দুর্ভাগ্য বাঙালী জাতির! জোট নেত্রী দেশ ও জনগণবিরোধী অবস্থান নিতে পারেন কিভাবে তা উপলব্ধি করা সহজ নয়। বাংলাদেশের পণ্যের বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র যে চলে আসছে তার উজ্জ্বল উদাহরণ বা নমুনা এই স্থগিতকরণই বলে দেয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শর্তানুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দেয়নি। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইইউসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গত এক দশকে ব্যাপক উন্নতি করেছে। ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতা অনুসারে বাংলাদেশ এখন বত্রিশতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ আর এখন কিসিঞ্জারের উদ্ধৃত তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বরং বাংলাদেশ আজ তাদের কাছে এক ‘রোল মডেল’। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তাই বলেছেন, বাংলাদেশ এখন আর জিএসপি সুবিধা চায় না। এখন এটি ভুলে যেতে শুরু করেছে দেশ তার এই ভাষ্য স্পষ্ট করে। এ ছাড়া আর করণীয় কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলে মনে করতে পারি শুধু।
×