ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির ডিজি

মাদকের আগ্রাসন বন্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাবে যৌথ বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ আগস্ট ২০১৭

মাদকের আগ্রাসন বন্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাবে যৌথ বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে মাদকের আগ্রাসন বন্ধে যৌথ বাহিনী গঠন করা হবে। দেশব্যাপী যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর মিয়ানমার সরকারও বাংলাদেশে মরণ নেশা ইয়াবার পাচার ঠেকাতে আন্তরিকতার কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা পাচার বন্ধে যৌথভাবে অভিযান চালাবে। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধে নাফ নদীতে ১৫ দিন পরীক্ষামূলকভাবে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ওই সময় জেলেদের সরকারীভাবে সহায়তা করা হবে। তবে কবে নাগাদ নাফ নদীতে পরীক্ষামূলকভাবে মাছ ধরা বন্ধ করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। নাফ নদীতে মাছ ধরার সূত্র ধরেই মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার হয় বলে বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধে গরু বেচাকেনার পদ্ধতি আরও সহজ করার পাশাপাশি প্রয়োজনে করিডর খুলে দেয়া হবে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেউ যাতে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে অস্ত্র গোলাবারুদ আনতে না পারে, সে জন্য আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই সিল করে দেয়া হয়েছে অস্ত্র গোলাবারুদ চোরাচালানের রুট হিসেবে পরিচিত ১০টি স্পট। বুধবার পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আধাসামরিক বাহিনীটির প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি আরও জানান, মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষায় সেদেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। পুলিশের সঙ্গে বিজিবির সুসম্পর্ক গড়ে ওঠলেও, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তেমন সর্ম্পক গড়ে ওঠেনি। তারপরও দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত আছে। দেশটি থেকে নানাভাবে ইয়াবা আসে। অনেক চেষ্টার পরও ইয়াবার চোরাচালান থামানো যাচ্ছে না। আর এসব ইয়াবার অধিকাংশই আসছে নাফ নদীতে মাছ ধরা জেলেদের মাধ্যমে। এজন্য সরকার নদীটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ১৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সময় জেলেদের সরকারীভাবে সহায়তা করা হবে। জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সম্প্রতি ইয়াবা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন পদক্ষেপে কার্যকর ফল এসেছে। মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার বন্ধে আন্তরিকতার কথা জানিয়েছে। বলেছে, মিয়ানমার থেকে যাতে বাংলাদেশে ইয়াবা বা অস্ত্র গোলাবারুদসহ অন্যান্য অবৈধ জিনিসপত্র পাচার হয়ে যেতে না পারে সে জন্য দেশটি সব ধরনের সহযোগিতা করবে। প্রয়োজনে যৌথবাহিনীর মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। সেই যৌথবাহিনীকে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সহায়তা করবে। এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে মাদকের বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা হয়েছে। সেই কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক সারাদেশে একযোগে সাঁড়াশি অভিযান চলবে। ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধে প্রয়োজনে যে কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। দ্ইুশ’ গ্রামের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট বহনকারীর শাস্তি যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদ- করার সিদ্ধান্ত সঠিক ও যৌক্তিক। এতে করে ইয়াবার আগ্রাসন কমে আসবে। আগামী ২০ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত ইয়াবা বন্ধে করণীয় সর্ম্পকে মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় এক আলোচনায় যোগ দিচ্ছে কোস্টগার্ড, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে ইয়াবা বন্ধের বিষয়টি। বিজিবি প্রধান জানান, মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে নতুন একটি রিজিওন গঠন করা হয়েছে। ওই রিজিওন সীমান্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করে যাতায়াতকারীদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে করে অপরাধীরাও গ্রেফতার হবে। সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ কমে আসবে। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে সীমান্তে হত্যার ঘটনাগুলো ঘটে। এজন্য এর সঙ্গে জড়িতদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে। গরু আনার সঙ্গে জড়িতদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সীমান্ত পর্যটন নামে একটি প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। সীমান্তের কাছে বসবাসকারীরা পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করবে। এতে করে রোজগার ভাল হলে মৃত্যুর ভয় নিয়ে সীমান্ত পার করে গরু আনার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বন্ধ করবে অনেকেই। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে। পাশাপাশি ঈদ ও অন্যান্য সময়ে গরু আনার জন্য প্রয়োজনে করিডর খুলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের গরু বিক্রেতাদের তাদের গরু সীমান্তরেখার জিরো পয়েন্ট এলাকায় পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর বাংলাদেশীরা জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে ভারতীয় বিক্রেতাদের কাছ থেকে গরু কিনে আনবে। এতে করে গোলাগুলি হওয়ার বা গুলি চালানোর মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা কমে আসবে। সীমান্তে হত্যার মতো ঘটনা কমে আসবে। বিজিবি প্রধান বলেন, সীমান্তে যে কোন ধরনের অপরাধ দমনে বিজিবির সমন্বয়ে কুইক এ্যাকশন টিম গঠন করা হবে। টিমের সদস্যরা বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারসহ নানা কাজে সহায়তায় কাজ করবে। ইতোমধ্যেই বিজিবি অটিস্টিক শিশুদের পড়াশোনার জন্য একটি স্কুল চালু করেছে। ফেলানী হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আদালতের বিষয়। আদালত যেভাবে যা করার অনুমতি দেবে, সেভাবেই আনুষঙ্গিক কাজ চলবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা ও অপারেশনস বিভাগের পরিচালক পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের পর মিয়ানমার সরকার ইয়াবার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছে। আগেও বেশ কয়েক দফায় মিয়ানমারের সঙ্গে ইয়াবা ইস্যুতে আলোচনা হলেও কোন চুক্তি হয়নি। এবারের আলোচনায় সেই সম্ভাবনা জেগেছে। বৈঠকে ইতোপূর্বে মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করা ইয়াবা তৈরির ল্যাবরেটরি ও এর ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়টি আলোচিত হবে। দেশে জল ও স্থল সীমান্তের পাশাপাশি দেশের ভেতরে একযোগে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। অভিযানের এমন একটি কর্মকৌশল পদ্ধতিও ঠিক করা হয়েছে।
×