ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার আদালতে ধর্ষিতার জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২ আগস্ট ২০১৭

বগুড়ার আদালতে ধর্ষিতার জবানবন্দী

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশব্যাপী বহুল আলোচিত ও নিন্দিত ঘটনার অসহায় শিকার বগুড়ার সেই ধর্ষিত মেয়েটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ ও শিশু আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। এ সময় ধর্ষিত মেয়েটি সেদিনের ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ দেন। বিচারকের নির্দেশে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ধর্ষিত তরুণীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। তবে ধর্ষিতা তার জবানীতে ঘটনার বিবরণে কী বলেছে তা বিস্তারিত জানা যায়নি। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ-১ ও শিশু আদালতে ধর্ষিত তরুণীকে জবানবন্দী দেয়ার জন্য আনা হয়। বগুড়া সদর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ধর্ষিতাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল থেকে আদালতে নিয়ে যান। এ সময় বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী আদালতে ধর্ষিত তরুণীর জবানবন্দী নেয়া হবে। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, কলেজে ভর্তির নাম করে সন্ত্রাসী তুফান সরকার গত ১৭ জুলাই একবার উক্ত তরুণীকে বাসায় ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিল। এতে মেয়েটি রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তুফান। আর তাতে ব্যর্থ হয়েই সে ওই মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং তার মায়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তুফানের ভাই বহিষ্কার ॥ এদিকে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ওই মেয়েকে ধর্ষণ এবং তার মায়ের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্ত্রাসী ধর্ষক তুফান সরকারের বড় ভাই, আরেক সন্ত্রাসী মতিন সরকারকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিছু কৌতূহলী প্রশ্ন ॥ যে বিলাসবহুল বাড়ির সামনে প্রতি সন্ধ্যায় অন্তত ২০টি মোটরসাইকেলে ৩০/৪০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডার তুফান সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকত তারা এখন আত্মগোপন করেছে। কেউ কেউ বগুড়া ছেড়ে বাইরে থেকে খোঁজখবর নিচ্ছে। লোকজনের কৌতূহলী প্রশ্ন : তুফান সরকারই গডফাদার? নাকি তারও গডফাদার আছে? যার বা যাদের ক্ষমতার প্রশ্রয়ে তুফান সরকার নিজস্ব সন্ত্রাসী ও কিলার বাহিনী তৈরি করেছিল তাদেরও অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক। তুফান সরকার ও ভাইদের দখলবাজি ॥ তুফান সরকার, মতিন সরকার ও তাদের ভাইয়েরা হেন অপরাধ নেই যা করেনি। তারা যদি মনে করে কোন জায়গা দখল করবে তাই করত। একটি উদাহারণ- বগুড়া শহরের বুকে চকযাদু রোডের ধারে অবকাঠামোসহ এক খ- ভূমি নজরে আসে তুফান সরকারের। সেই জায়গার স্বত্বাধিকারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করে দখল করে নেয়। সেখানেই তুফান সরকার গড়ে তোলে তুর্য স্যানিটারি স্টোর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গেল ২ জুলাই সেই প্রতিষ্ঠানের আড়ম্বরপূর্ণভাবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। বগুড়ায় ক্ষোভ মানববন্ধন সমাবেশ অব্যাহত ॥ মঙ্গলবার সকালে বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাসদ, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সিপিবি, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, নারী মুক্তি কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তুফান সরকারসহ সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তারা জনপ্রতিনিধি (পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর) মার্জিয়া হাসন রুমকির ভূমিকার নিন্দা প্রকাশ করে এই কাউন্সিলরকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদের জেলা আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, মোস্তাফিজার রহমান ফিজু, উদীচী নেতা মাহমুদুস সোবহান মিন্নু, যুব ইউনিয়ন নেতা শাহনেওয়াজ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের আহ্বায়ক দিলরুবা নূরী, বনানী ববি, রাধা রানী বর্মন, কবি ও লেখিকা সিকতা কাজল, নাদিম মাহমুদ, আব্দুল হাই প্রমুখ।
×