ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয়ে ব্যাহত ক্যান্সার চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩১ জুলাই ২০১৭

ব্যয়ে ব্যাহত ক্যান্সার চিকিৎসা

দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও দুস্থ ও যথেষ্ট অবস্থাসম্পন্ন নয় এমন রোগীরা অতিরিক্ত ব্যয়ভার মেটাতে পারছেন না। ফলে অনেক রোগীর চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। আর মধ্যবিত্ত রোগীরা হিমশিম খাচ্ছেন উচ্চব্যয় মেটাতে। জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে অসহায় রোগীদের বাস্তব চিত্র। কিন্তু মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতেই হবে। সরকার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ রোগী যারা নিজেদের চিকিৎসা ব্যয় বহনে অক্ষম, তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। এক সময় দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে রেডিওথেরাপি দেয়ার জন্য ভাল রেডিওথেরাপি মেশিন পর্যন্ত ছিল না। প্রতিবছর শত শত ক্যান্সার রোগীর রেডিওথেরাপি দেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে যেতেন। এখন আর সে সঙ্কট নেই। স্মরণযোগ্য দেশে দু’বছর আগে কোন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সেন্টারও ছিল না, অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৮টি। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর তা দেশের ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ও কমিয়ে এনেছে। রোগীরা এখন দেশেই লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা পাচ্ছেন। তাদের খরচ পড়বে ভারতে চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেক। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর যত লোকের মৃত্যু হয়, তাদের মধ্যে যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। নতুন পদ্ধতিতে রক্তনালীর মাধ্যমে সরাসরি টিউমারে কেমোথেরাপি দেয়া যাবে। ফলে যকৃত ক্যান্সারের রোগীদের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। দেশে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা ব্যয়, ওষুধের দাম, রোগীর হয়রানি ও বিভ্রান্তি কমিয়ে আনা জরুরী হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী আরও সহজ করতে হবে ক্যান্সার চিকিৎসা। দক্ষ জনবল তৈরি এবং নিয়োগে সরকারের তরফ থেকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ক্যান্সারের হুমকি মোকাবেলায় অন্তত ১৬০টি ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধের ব্যাপারটি বেশ জটিল এবং কখনও কখনও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ডব্লিউএইচওর বিশ্ব ক্যান্সার প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সারের মূল কারণের মধ্যে রয়েছে ধূমপান, সংক্রমণ, এ্যালকোহল, স্থূলতা ও কর্মবিমুখতা, তেজস্ক্রিয়তা (সূর্য এবং চিকিৎসার্থে স্ক্যান উভয় উৎস থেকে), বায়ুদূষণ ও অন্যান্য পরিবেশগত কারণ। ক্যান্সারে চিকিৎসার জন্য কয়েকটি ধাপ আছে, যেমন সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি। নিয়মিত ওষুধ সেবন বা ওরালথেরাপিও একটি ধাপ। এগুলোর ভেতর রেডিওথেরাপি বিশেষ ধরনের চিকিৎসা, যার জন্য বিশেষায়িত টেকনিশিয়ান দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্টদের সঙ্কট রয়েছে। ক্যান্সার একটি সমন্বিত চিকিৎসা। সার্জারি, কেমো ও রেডিওথেরাপি কখন, কোন্টি, কীভাবে করতে হবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওষুধ প্রস্তুত, কেমো ও রেডিওথেরাপি দেয়ার কাজগুলো অনকোলজিস্টরা করে থাকেন। দেশে অনকোলজিস্টদেরও স্বল্পতা রয়েছে। দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা ও চিকিৎসকের ওপর আস্থাহীনতার কারণে প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য পাশের দেশ ভারতসহ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, চীন এমনকি জাপানেও যাচ্ছেন। চিকিৎসার উচ্চ খরচ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব এবং সচেতনতার অভাব প্রভৃতি কারণে ক্যান্সার সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে। তবে বেসরকারী পর্যায়েও নতুন উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো জরুরী হয়ে উঠেছে।
×