ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ নিহত ১২

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩০ জুলাই ২০১৭

সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ নিহত ১২

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনসহ নিহত হয়েছেন ছয়জন। অন্যত্র মারা গেছে ব্যবসায়ীসহ ছয়জন। এদের মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ডিন এবং খুলনা কলেজ ছাত্রসহ দুইজন, বাগেরহাটে একজন এবং নরসিংদীতে দুইজন। শুক্র ও শনিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। জানা গেছে, ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কাজির রাস্তা নামকস্থানে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়ি সামনের দিক থেকে ওই মাইক্রোবাসটিকে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। হতাহতরা সকলেই মাইক্রোবাসের যাত্রী। দুর্ঘটনার ফলে শ্যামলী পারবহনের বাসটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ওই বাসের যাত্রী মারাত্মক আহত হননি। পুলিশ বাসটি আটক করতে পারলেও পালিয়ে গেছেন চালক। করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক নওশের আলী জানান, বাসটি দ্রুত গতিতে চলছিল এবং রংসাইডে এসে ওই মাইক্রোবাসটিকে সজোরে আঘাত করলে এটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুজ্জামান জানান, ফরিদপুর ও মধুখালী দমকল বাহিনীর দুটি দল ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনায় পড়া মাইক্রোবাসটির বডি কেটে হতাহতদের বের করে। এ দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া হাসপাতালে নেয়ার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাকি দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের সদস্যরা হলেন, শ্যামনগরের পরাণপুর গ্রামের খয়রুন বিবি (৩৫), তার বাবা করিম গাজী (৫৬), খায়রুনের ননদের ছেলে নাজমুল গাজী (৪০) ও নাজমুল গাজীর স্ত্রী আফিসা বেগম (১৮)। নিহত অপর দুজন হলেন মাইক্রোবাস চালক শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া গ্রামের আনিসুর রহমান (২৫) ও তার ভাগিনা জাহিদ হোসেন (১৮)। এ দুর্ঘটনায় আহত হন খায়রুনের দুই ছেলে আবুল কালাম আজাদ (২০) ও মোঃ সাইফুদ্দিন (২৬)। বর্তমানে তারা ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আবুল কালাম আজাদ জানান, তার মা খায়রুন দুই বছর আগে কাজের জন্য ওমানে যান। গত শুক্রবার তিনি দেশে ফিরে আসেন। বিদেশ ফেরত মাকে ঢাকা থেকে বাড়িতে আনতে তারা সাতক্ষীরা থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে শুক্রবার ভোরে ঢাকা যান। মাকে নিয়ে ফেরার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হন। নিহত জাহিদের বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তার ছেলে কলেজে পড়ে। সে মাইক্রোবাস চালানো শিখতে মাঝে মধ্যে তার মামার সঙ্গে যেত। গত শুক্রবারও এ কারণেই সে মামার সঙ্গে বের হয়েছিল। করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক নওশের আলী জানান, এ দুর্ঘটনার ফলে ওই মহাসড়কে আধা ঘণ্টার জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, মৃতদেহগুলি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে। পরে তা নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পাবনা ॥ বেড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন রাশেদ কবির নিহত হয়েছে। এ সময় আরও অন্তত ৫ যাত্রী আহত হয়। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পাবনাগামী সরকার ট্রাভেলস পরিবহনের একটি বাস জেলার বেড়া উপজেলার চাকলা ছোন্দহ ব্রিজের কাছে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সরকার ট্রাভেলসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসটির চালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাসের অন্যান্য ৫/৬ যাত্রী সামান্য আহত হলে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্য বাসে তুলে দেয়া হয়েছে। তবে বাসটির চালক ও চালক সহকারী পালিয়ে যায় বলেও জানান ওসি। এদিকে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন রাশেদ কবিরের মৃত্যুতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খুলনা ॥ খুলনায় যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজ ছাত্রসহ ২ জন নিহত ও ৩-৪ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের হরিণটানা থানাধীন রাজবাঁধ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হলেন, কলেজ ছাত্র অমিত সরকার (১৮) ও ইজিবাইক চালক রবিউল ইসলাম (২৫)। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা থেকে যাত্রীবাহী বাসটি সাতক্ষীরা যচ্ছিল। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বাসটি রাজবাধ এলাকায় পৌঁছলে কৈয়া বাজারের দিক থেকে আসা একটি ইজিবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ইজবাইক দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং বাসটি খাদে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ইজিবাইক চালক রবিউল মারা যান। স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র অমিতকে গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। নিহত অমিতের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামে। এ দুর্ঘটনায় আহত আরও ৩-৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পুলিশ ওই বাসটিকে আটক করেছে। তবে চালক ও তার সহযোগীরা পালিয়ে গেছে। বাগেরহাট ॥ মোল্লাহাটে পাটবোঝাই ট্রাক দোকানের ওপর তুলে দেয়ায় মিশকাত মুন্সি নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোরে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের মাদ্রাসা ঘাট নামক স্টান্ডে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দোকানি মিশকাত মুন্সি দোকানের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি গাওলা গ্রামের হেকমত মুন্সির ছেলে। এ সময় ট্রাকের চালক আলমগীর হোসেন আহত হয়। ঘুমিয়ে বাস চালানোর কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে হাইওয়ে থানা পুলিশের এসআই সাফুর আহম্মেদ জানান। পুলিশ জানায়, পাট বোঝাই খুলনা মেট্রো-ট-১১-১০১০ নং ট্রাক ভাঙ্গা থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় চালনার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের বিপরীত পাশের দু’টি দোকান চাপা দিয়ে উল্টে যায় ট্রাক’টি। ওই সময় ট্রাকসহ পাটের চাপায় দুর্ঘটনা স্থলেই মৃত্যু হয় ঘুমন্ত ওই দোকানির। এছাড়া ট্রাকের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে চালক তার সিটেই আটকে যায়। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশ এলাকার লোকজন ছুটে এসে পাট সরিয়ে নিহত যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার ও অনেক চেষ্টার পর আহত চালককে আটকাবস্থা থেকে বের করে। নরসিংদী ॥ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরবের অদূরে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলকুটি নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাসকে প্রাইভেটকার ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে একজন মারা যায়। হাসপাতালে নেয়া হলে আরও একজন মারা যায়। এ সময় আহত হয় কমপক্ষে ৫ জন। খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকারটি উদ্ধার ও আহতদের হাসপাতালে পাঠায়। ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি মিজানুল হক জানিয়েছেন, নীলকুটি এলাকায় ঢাকাগামী দিগন্ত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাকা পাংচার হলে তা মেরামত কাজ করছিল। এ সময় পেছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি প্রাইভেটকার বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত (৫৫) একজন মারা যায়। হাসপাতালে নেয়া হলে সায়েদ আলী (৩৮), বানিয়াচং, হবিগঞ্জ মারা যায়। এ সময় আহত হয় কম পক্ষে ৫ জন। পুলিশ প্রাইভেটকারটি আটক করেছে। তবে চালক পলাতক। দমকলকর্মীর মৃত্যু ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতাদের উদ্ধার করে দমকল ব্যারাকে ফিরে গিয়ে এক ঘণ্টার ব্যবধানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দমকলকর্মী আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা (৫৭)। মৃত আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিযনের মছলন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মধুখালী দমকল বাহিনীতে লিডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফরিদপুর দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কাজীর রাস্তা নামক স্থানে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধারকাজে অংশ নেন মধুখালী দমকল বাহিনীর লিডার আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা। হতাহতদের উদ্ধার করে মধুখালী দমকল কার্যালয়ের ব্যারাকে ফিরে যান তিনি। আনুমানিক ভোর ৪টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
×