ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা প্রশাসক সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৩০ জুলাই ২০১৭

জেলা প্রশাসক সম্মেলন

প্রতিবছর সকল বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের অংশগ্রহণে রাজধানীতে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক বা নিয়মিত কার্যবিধি হলেও এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক প্রশাসনিক চিত্র উঠে আসে। একই সঙ্গে সিভিল সার্ভিসের একজন জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের সদস্য ও সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ আমলা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের মনোভাব সম্পর্কেও সরাসরি একটি ধারণা লাভ সম্ভব হয়। সরকার প্রধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাদান সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক। এ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়কসহ সকল সচিব উপস্থিত থাকেন। ফলে এই সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। সম্প্রতি সমাপ্ত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে অনেক বিষয় উঠে এসেছে। যার ভেতর দিয়ে জেলা পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা, ভূমিপ্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের বাস্তব চিত্র উপস্থাপিত হয়। জেলা প্রশাসকদের জন্য ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে সিদ্ধান্তই নিই, মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। আপনাদের আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতাই পারে এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে দিতে। আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সরকারী সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখার বিষয়টি। তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতেও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে জেলা প্রশাসকদের ব্রতী হওয়ার যে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী প্রদান করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সমাজকে অস্থির করে তুলেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রতিরোধ ও দূর করার ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে জেলা প্রশাসকদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। এ সংক্রান্ত যথাযথ নির্দেশ দেয়া হয়েছে সম্মেলনে। এবার ডিসিদের তরফ থেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে যেটি উপস্থাপিত হয়েছিল সেটি হলো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির পরিধি বাড়ানো ও অপরাধীর স্বীকারোক্তি ছাড়াই শাস্তি দেয়ার কর্তৃত্ব। বলাবাহুল্য, বিষয়টি আপীল বিভাগে বিচারাধীন থাকায় এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব ছিল না। তবু এ নিয়ে আন্তরিক আলোচনায় জেলা প্রশাসকদের অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা অনেকটাই প্রশমিত হবে বলে ধারণা করা যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশের টিম জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা ডিসিদের প্রস্তাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস প্রদান করেন। সাধারণ মানুষ আশা করে জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকগণ যে জনসেবক সেটি অবশ্যই তারা স্মরণে রাখবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জনহিতকর ও যুগোপযোগী নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে মান্য করার মধ্য দিয়ে দেশসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। সবারই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাই প্রত্যাশিত। জেলা প্রশাসকদের ওপর অন্যায্য ও অনৈতিক কোন ধরনের চাপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
×