ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগ নেতৃত্বের সাফল্যের দুই বছর

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৬ জুলাই ২০১৭

 ছাত্রলীগ নেতৃত্বের সাফল্যের দুই বছর

সোহেল তানভীর ॥ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। ১৯৪৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে জন্ম নেয়া এই সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আজ। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সংগঠনটি ৬৯ বছরে পা দিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫-২৬ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে সোহাগ-জাকির প্যানেল নির্বাচিত হয়। এই কমিটির দুই বছরে রয়েছে নানান অর্জন। এর মধ্যেÑ পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ, শিক্ষা ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন দফা, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, শৃঙ্খলা ভঙ্গে ২ বছরে বহিষ্কার ৩০৬, দেশের বাইরে ২১টি দেশের কমিটি গঠন, বন্যার্ত ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে ছিল ছাত্রলীগ। এছাড়া রয়েছে কিছু সমালোচনাও। এর মধ্যে গঠনতন্ত্র না মানা, বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা। তবে যেখানে অভিযোগ পেয়েছে সেখানে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। যা বর্তমান কমিটির উল্লেখযোগ্য অবদান। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। তবে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলেই নতুন কমিটি গঠনের জন্য যে কোন সময় সম্মেলন করা হবে বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। তিনি বলেন, নেত্রী বললেই সম্মেলনের ব্যবস্থা নিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। নেত্রী যেদিন বলবে সেদিনই সম্মেলন হবে। কিছুদিন আগে দেশে বন্যা, হাওড় ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ করে প্রশংসিত হয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিনামূল্যে মেডিক্যাল টিম প্রেরণ করে নেতৃবৃন্দ। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশংসিত হয় ছাত্রলীগ নেতারা। ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটে সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪২টি ইউনিটে সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। পূর্বের আংশিক কমিটির প্রায় ১০৩টি ইউনিট পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোতে খুব শীঘ্রই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানালেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। এছাড়া ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক শাখাগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে ২১টি ইউনিটে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি ইউনিট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব শীঘ্রই তা গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রলীগ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কুড়িগ্রামে প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষরোপণ করে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা, মহানগর, উপজেলায় প্রায় ৫ লাখ বৃক্ষরোপণ করেছে সংগঠনটি। বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ৫ জুন কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিবছর সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রায় ৩০ হাজার ব্যাগ রক্তদান করে থাকে বলে জানা গেছে। এছাড়া চিকিৎসাসেবা দেয়া হয় দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের। দেশের প্রায় প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। তাদের মাধ্যমে এ সকল অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেয় মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ পরবর্তী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করে সংগঠনটি। শিক্ষা ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন শিক্ষার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠায় ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকার যে ভ্যাট নির্ধারণ করেছিল তা প্রত্যাহারে জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রলীগ। সংগঠনটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা প্রত্যাহার করে নেন। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশংসিত হয় ছাত্রলীগ। ফলে শিক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন করতে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন দফা ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য, শিক্ষা ও খাবারের মান উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসম্মত থাকার জায়গা, আবাসন সঙ্কট দূরীকরণসহ ১৯ দফা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ দফা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ দফা দাবি স্ব স্ব উপাচার্য বরাবর পেশ করে। এছাড়া ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক জঙ্গীবাদ। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অবস্থান জিরো টলারেন্স। দেশ থেকে জঙ্গীবাদের মূল উপড়ে ফেলতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে সংগঠনটি। গত ৪ মার্চ দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করে। এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে প্রায় ১ কোটি মানুষ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরে। এই কর্মসূচীতে সমর্থন দিয়েছে অসংখ্য মানুষ। বন্যার্তদের পাশে ছাত্রলীগ চলমান বন্যাতেও ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে সংগঠনটি। দুই শীর্ষ নেতাও ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন বন্যাকবলিত এলাকায়। ১৬ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রলীগের ৮টি ত্রাণ টিম বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছে। সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করেন। অতিসম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে হাওড়াঞ্চলে যে আগাম বন্যা হয়েছে সেখানেও ত্রাণসামগ্রী দিয়েছে ছাত্রলীগ। আগাম বন্যায় ধানক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় হাওড় ও বিল অঞ্চলে ধান কাটার লোকের অভাব দেখো দিলে অসহায় কৃষকদের ধান কাটতে সাহায্য করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি নাটোরের চলন বিলে সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধান কেটে কৃষকদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। সাহায্য করেছে ধান মাড়াই করতেও। তবে এত কিছুর পরেও সাধারণ নেতাকর্মীদের আশানুরূপ তেমন কোন ফলাফল ছাড়াই গত ১২ জুন শেষ হয় ছাত্রলীগের দুইদিনব্যাপী বর্ধিত সভা। সভায় সাধারণ কর্মীদের কাক্সিক্ষত সেই সিদ্ধান্ত, কমিটির মেয়াদ বাড়ানো বা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার কোন আলোচনা করা হয়নি। সভায় বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনের ঘোষণা দেয়া হয়। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও এই কমিটির অধীনে চলবে বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন। জানা যায়, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর শেরপুর জেলা ইউনিট, ১০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা ইউনিট, ২৯ জুলাই খুলনা জেলা ইউনিটসহ আরও একাধিক জেলা ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে সোহাগ-জাকির কমিটি।
×