ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ জুলাই ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ সময়টা বেশ অচেনা ঠেকছে। অনেক কিছুই আগের মতো নেই। মানুষের চাওয়া পাওয়াগুলো বদলে যাচ্ছে। মার খাচ্ছে মূল্যবোধ। এই কিছুকাল আগেও সংসার মানে ছিল সংসার ধর্ম। এখন সেই বন্ধন বুড়োদের দাঁতের মতো নড়বড়ে। যারপরনাই দুর্বল। কিংবা মানুষ আরও বেশি উপভোগ করতে চাইছে নিজের জীবনকে। আরও স্বাধীন আরও আরও মুক্ত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর পুরুষ এবং নারী। সুখী হওয়ার আশায় সংসার যেমন গড়ছে, তেমনি সুখী হওয়ার আশা নিয়েই ভাঙছে সংসার। বিশেষ করে রাজধানী শহরে খুব চোখে পড়ছে এই ভাঙ্গা গড়া। পরিসংখ্যানও বলছে, বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ছয় বছরে ঢাকায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩১ হাজার। সিটি কর্পোরেশনের দুই অফিস থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। তবে এসব বিবাহ বিচ্ছেদের খবর অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামনে আসে না। জানাজানি হয় না বললেই চলে। পরিচিত প্রতিষ্ঠিতরা কিংবা তারকা শিল্পীরা যখন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান তখন ব্যাপক প্রচার পায়। তাহসান মিথিলার বেলায় তাই হয়েছে। টেলিভিশনে জনপ্রিয় তারকা জুটি দীর্ঘ ১৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়েছেন। দুজনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার আসে যৌথ ঘোষণা। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর থেকে ব্যাপক আলোচনায় বিষয়টি। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শোনা যাচ্ছে এই আলোচনা। এদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে খবরটি সবার সঙ্গে শেয়ার করেন জনপ্রিয় গায়ক এবং অভিনেতা তাহসান। বার্তাটিতে তারা বলেছেন, দ্বন্দ্ব মতবিরোধ নিরসনের অনেক দিনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আমরা মনে করেছি, সামাজিক চাপে একটি সম্পর্ক ধরে রাখার চেয়ে আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াই হবে মঙ্গলজনক। ভক্তদের অনুভূতির কথা আমলে নিয়ে তারা বলেছেন, এটা আপনাদের খুব খারাপ লাগবে, আমরা বুঝি। আমরা এ জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সবসময় নিজেদের সম্পর্কের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণœœ রেখেছি। ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে। বিচ্ছেদ সত্ত্বেও বাবা-মা হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে জানানো হয় ফেসবুক স্ট্যাটাসে। তাদের গান নাটকের দর্শকরাও জানাচ্ছেন প্রতিক্রিয়া। কত রকমের বক্তব্য যে আসছে। আরও কিছুদিন এই ইস্যুতে আলোচনা চলমান থাকবে বলে ধারণা করা যায়। চিকুনগুনিয়ার কথা বলতে হবে। কে তাড়াবে এডিস মশা? এই নিয়ে রশি টানাটানি চলছিল। নাগরিকদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। ফগার মেশিন নিয়ে নেমে পড়েছেন এমনকি মেয়র আনিসুল হক। বসে নেই সাঈদ খোকনও। ধোঁয়ায় কাজ কী হচ্ছে এখনও পরিষ্কার নয়। তবে কাজ শুরু হয়েছে দেখে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করছেন। এর আগে মেয়র আনিসুল হকের উপর ভীষণ চটেছিলেন তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা সাধারণ মানুষ। মশা নিধনে ব্যর্থ মেয়র উল্টো কথা শুনিয়েছিলেন। তার ‘ঘরে ঘরে গিয়ে মশাররি টানাতে পারব’ না মন্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। অবশ্য পরোক্ষণেই ভুল বুঝতে পেরেছিলেন আনিসুল হক। দুঃখ প্রকাশ করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন। তবে যারা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা এখনও সমালোচনা করছেন মেয়রের। নির্বাচনকালীন সময় দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় সমালোচনার জবাব কাজ দিয়ে দিতে পারেন কি না আনিসুল হক। এবার শ্রাবণের কথা বলা যাক। বর্ষার দ্বিতীয় মাস। ইতোমধ্যে প্রথম সপ্তাহটি পার করেছে। আষাঢ়ে বৃষ্টি হলেও, শ্রাবণধারার স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। অন্যরকম মুগ্ধতা নিয়ে উপভোগ করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বরাবরই এই মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এবারও টানা বর্ষণে সিক্ত হচ্ছে রাজধানী। মাঝে মাঝে যে গরম পড়ছে তা থেকে বলা চলে বাঁচিয়ে দিচ্ছে শ্রাবণধারা। অনেকে ইচ্ছে করেই গা ধুয়ে নিচ্ছেন। উপভোগ করছেন। প্রিয় ঋতু বর্ষাকে গত মাসেই বরণ করে নিয়েছিলেন রাজধানীবাসী। আজ শুক্রবার শ্রাবণ মাসটিকে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজন করা হবে আরও একটি বর্ষা উৎসবের। আয়োজক সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। প্রতিবারের মতোই সকাল ৭টায় জেগে ওঠবে চারুকলার বকুলতলা। সঙ্গীত নৃত্য কবিতাসহ নানা আয়োজনে শিল্পীরা বর্ষা বন্দনা করবেন। শুরুটা হবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে। প্রথম শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি। পরে একে একে গাইবেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, শ্যামা রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, অনিমা রায়, মামুন জাহিদ খান, সঞ্জয় কবিরাজ, আঞ্জুমান ফেরদৌস কাকলী, সমর বড়ুয়া প্রমুখ। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে পঞ্চভাস্কর, সমস্বর, বহ্নিশিখা ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। নৃত্যজন, নৃত্যাক্ষ, নৃত্যমঞ্চ, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, স্পন্দন, বাফার শিল্পীরা নাচের মুদ্রায় তুলে ধরবেন বর্ষাকে। কবিতা থেকে বর্ষার কথা বলবেন রফিকুল ইসলাম, শিমুল মুস্তফা, নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও মাশকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। আয়োজনটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ত সময় পার করছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। মাঝে মধ্যেই কথা হয়েছে তার সঙ্গে। তখন জানা যায়, টাকা-পয়সার অভাবে তাকে এবার বিশেষ ভুগতে হয়েছে। তবে থেমে যাননি। উৎসবটি করছেন তিনি। প্রতিবছর বর্ষা উৎসব হয় দিনব্যাপী। এবার কাটছাঁট করে অর্ধদিবস করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ভালবাসার এই আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী উৎসবে নগরবাসীকে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন নিবেদিন প্রাণ এই সংস্কৃতিকর্মী।
×