ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আরাফাত শাহীন

পরিবারের দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২০ জুলাই ২০১৭

পরিবারের দায়বদ্ধতা

একজন মানুষ তার সমগ্র জীবনে মোটামুটি তিনটি ধাপ অতিক্রম করে থাকেন। শিশুকাল, যৌবনকাল এবং বৃদ্ধকাল- সময়ের পরিক্রমায় এই তিনটি কাল একজন মানুষকে অতিক্রম করে যেতে হয়। সময় ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে আর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়তে থাকে মানুষের জীবনের পরিপক্কতা; চাই সে দৈহিক হোক কিংবা মানসিক। তবে মানুষের জীবনে তার শিশুকাল এবং বৃদ্ধকালের মাঝে একটি বিশেষ মিল পরিলক্ষিত হয়। উভয় সময়েই একজন মানুষ থাকে অনেক বেশি অসহায় এবং অনেক বেশি দুর্বল। একটা শিশু তার এই সময়টা পিতা-মাতার আদর এবং ভালবাসায় বেড়ে ওঠে। অন্যের সাহায্য ব্যতীত কোন কাজ করাই তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঠিক তেমনিভাবে এই জীবনের শেষের দিনগুলোও এমন আসতে পারে যে সেদিন আর কোন কাজ করার ক্ষমতাই মানুষের থাকবে না। সেদিন ওই মানুষটা তার প্রিয়জনদের সামান্য সহযোগিতা এবং ভালবাসা পেলে সুন্দরভাবে সমাজের বুকে বেঁচে থাকতে পারে। শিশুকালে পিতা-মাতা যেমন তাদের সন্তানকে নিজের বুকে আগলে রাখেন ঠিক তেমনিভাবে পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের ভালবাসার সঙ্গে বুকে টেনে নেয়ার দায়িত্ব তার সন্তানদের ওপর বর্তায়। এই দায়িত্বকে তারা কোনভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। যে সময়টাতে একজন মানুষের পরিবারের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা এবং সহমর্মিতা পাবার কথা সেই সময়টাতে সেই মানুষটা পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি অবহেলা লাঞ্ছনা। তা না হলে ষাটোর্ধ একজন পিতা কেন আজ নিজের অন্ন জোগারের জন্য রিক্সার প্যাডেল ঘোরাতে ব্যস্ত থাকবেন? কেন একজন পঞ্চাশ পেরুনো মা তার পেটের তাগিদে অন্যের বাড়িতে কাজ করবেন? শীতের রাতগুলোতে যে বৃদ্ধ মানুষগুলো ফুটপাথে শুয়ে থেকে সারারাত কাতরান তারাও কারও না কারও মা; কারও না কারও বাবা। তাদেরও ইচ্ছা হয় এই বয়সে এসে একটু সুখ ও স্বচ্ছন্দে জীবন অতিবাহিত করতে। সময় এসেছে আজ ব্যাপারটা নিয়ে ভাববার। শুধুমাত্র নিজেদের সুখের জন্য তাদের এভাবে লাঞ্ছনাকর পরিবেশে ফেলে আসা কোন যথার্থ মানুষের কাজ নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই এ ব্যাপারে দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। আমাদের সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করা আমাদেরই নৈতিক দায়িত্ব। আজ থেকে আসুন পিতা-মাতার একজন যোগ্য সন্তান হিসেবে শপথ করি, অযতœ এবং অবহেলায় কোন পিতা-মাতাই আর বৃদ্ধাশ্রম নামক অন্ধকূপে পড়ে থাকবে না। আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষের মুখেই থাকবে সুখের দীপ্তিময় হাসির রেখা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×