ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তবু কোচ এ্যান্ড্রু অর্ডে আস্থা রাখছে বাফুফে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৬ জুলাই ২০১৭

তবু কোচ এ্যান্ড্রু অর্ডে আস্থা রাখছে বাফুফে

রুমেল খান ॥ অসুখ হলে তা সারানোর নানা উপায় আছে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদি, ঝাড়ফুক, তাবিজ-কবজ ... আরও কত কি! বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও একটা অসুখ আছে। জিততে না পারার অসুখ। অসুখটি বহু বছরের পুরনো। গত কয়েক বছরে ক্রুইফ, লোপেজ, মারুফুল, গঞ্জালো, সেইন্টফিটরা আদাজল খেয়ে, কষে কোমর বেঁধে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ‘যেই লাউ, সেই কদু।’ রোগটা এখনও সারেনি। বরং ভুটানের কাছে হেরে অবস্থা আরও খারাপের দিকেই চলে গেছে। এ থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব তারা তুলে দিয়েছে এ্যান্ড্রু অর্ডের হাতে। নতুন এই কোচকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেয় বাফুফে। ছয় মাসের মধ্যে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে যেতে পারবেন না। তেমনি বাফুফেও তাকে বরখাস্ত করতে পারবে না। এক বছর পর উভয়পক্ষের সম্মতিতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। আপাতত জাতীয় দলের কোন খেলা নেই। তবে এএফসির বয়সভিত্তিক দুটি টুর্নামেন্ট আছে এ বছর। আপাতত দুটি বয়সভিত্তিক (অ-২৩ এবং অ-১৯) কাজ দিয়ে শুরু হবে অর্ডের বাংলাদেশ মিশন। এরপর সেপ্টেম্বরে ফিফা প্রীতি ম্যাচ (হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে), ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ... আপাতত এই হচ্ছে অর্ডের কাজ। তবে জুলাইয়ে অ-২৩ টুর্নামেন্টই হচ্ছে অর্ডের প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট। এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে (‘ই’ গ্রুপ) অংশ নেবে বাংলাদেশ যুব ফুটবল দল। ফিলিস্তিনে এই আসর শুরু হবে আগামী ১৯ জুলাই থেকে। এই আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হচ্ছে জর্দান, তাজিকিস্তান এবং স্বাগতিক ফিলিস্তিন। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো খেলতে হবে যথাক্রমে ১৯, ২১ এবং ২৩ জুলাই। বাংলাদেশ দলের হয়ে এটাই হবে ইংলিশ বংশোদ্ভূত অর্ডের প্রথম পরীক্ষা। যে কোন ফুটবল কোচ মানেই কোন অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি বা জাদুকর নন যে এক মন্ত্রবলেই সব সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। জয় ধরা দেবে তার হাতের মুঠোয়, পাবেন একের পর এক সাফল্য বা শিরোপা। সাফল্যের জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা, পরিকল্পনা, পরিশ্রম, অর্থ এবং ভাগ্য। বাফুফে সবকিছু করছে অর্ডের জন্য। কিন্তু সাফল্যের জন্য এই ভাগ্যটাই সহায় হচ্ছে না অর্ডের। যুব দলকে নিয়ে তিনি এখন অবস্থান করছেন কাতারে। কাতারে এবং নেপালে গিয়ে তিনি দলকে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলিয়েছেন। দুটো ম্যাচেই হেরেছে তার দল (নেপাল যুব দলের কাছে ০-১ এবং কাতার যুব দলের কাছে ০-৩ গোলে)। তারপরও দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখনও তাতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। বরং এখনও তারা আস্থা রেখেছে এই অস্ট্রেলিয়ান কোচের ওপর। গত কয়েক বছরে এই ‘ধৈর্য’টাই ছিল না বাফুফের। প্রত্যাশিত সাফল্য না পেয়ে অস্থির হয়ে তারা বারবার কোচ বদল করেছে। কিন্তু এতে ফল শুভ হয়নি। সে জন্যই হয়তো এবার ‘ধীরে চলো নীতি’ পন্থা অবলম্বন করছে বাফুফে। অর্ডকে নিয়োগের আগে এবার বাফুফে অনেক সময় নিয়েছে। এই সময়টাতে কোচের চেয়ারটা শূন্যই ছিল। নতুন এই কোচকে সময় দিতে চাইছে বাফুফে। দেখা যাক এখন নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পারেন তিনি। বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন চাচ্ছেন আগামী দিনের জাতীয় দল হবে নতুন ও তাজা রক্ত দিয়ে। ফলে তিনি অনেক দেরিতে হলেও এখন জোর দিচ্ছেন বয়সভিত্তিক ফুটবলে। সিনিয়র জাতীয় দলের একনম্বর পাইপলাইন হচ্ছে যুব দল বা অলিম্পিক দল বা অনুর্ধ-২৩ দল। এই দল থেকেই আগামীতে জাতীয় বা সিনিয়র দলে ঠাঁই করে নেবে যুবারা। কিন্তু অর্ডের অধীনে তারা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেনি। বিশেষ করে নেপালের বিপক্ষের হারটা নিয়েই বেশি সমালোচনা হচ্ছে। কেননা নেপাল একসময় ছিল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা দল। আর আজ তাদের সঙ্গেই কুলিয়ে উঠতে পারে না হেমন্তরা। প্রস্তুতি ম্যাচেই এমন দুরবস্থা দেখে শঙ্কিত ফুটবলামোদীরা। ফিলিস্তিনে কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে না জানি কয় গোল হজম করে দেশে ফিরে অর্ড শিষ্যরা। যদিও এ নিয়ে ভাবিত নয় বাফুফে। তারা যুব দলকে ফিলিস্তিনে পাঠিয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আর সাফের প্রস্তুতি হিসেবেই। তাই এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ে সেভাবে কোন উচ্চাকাক্সক্ষা নেই তাদের। তবে অর্ড যেমনই রেজাল্ট করুন না কেন, শোনা যাচ্ছে তার কৌশল ও পরিকল্পনা নাকি পছন্দই হয়েছে বাফুফের। তাই তাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার পক্ষে তারা। মোট কথা এই দলের ওপর আমার আস্থা আছে, কিন্তু প্রত্যাশার চাপ নেই বাফুফের।
×