ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১২ জুলাই ২০১৭

একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!

শুক্রবার কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দুর্ঘটনাকবলিত ও ডোবায় নিমজ্জমান একটি বাস থেকে চল্লিশজন যাত্রীকে উদ্ধার করে কর্তব্যনিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এক পুলিশ সদস্য। তার নাম মো. পারভেজ মিয়া। তিনি মুন্সীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের সন্তান। প্রথমদিকে তিনি একাই বাসের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে সাত মাসের শিশু ও পঁচিশজন নারীকে বাস থেকে বের করে আনেন। পরে এলাকাবাসীও তাকে সহযোগিতা করে। এই অসাধ্য সাধনের পর মিডিয়ার কাছে প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টিই তিনি উর্ধে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, তিনি খুশি এই ভেবে যে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। তার বিনয় ও মানবতাবোধ আজ দেশের মানুষের মুখে মুখে। পারভেজকে আমাদের অভিনন্দন ও অভিবাদন। পারভেজ মিয়ার সাহসিকতার জন্য পুলিশের উর্ধতন মহলের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পুরস্কৃত করেছেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পদকের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চলতি বছর পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুলিশের সেবাকে আরও জনবান্ধব করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। জনসেবা করার মানসিকতা লালনেরও তাগিদ দেন তিনি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। এমন বাস্তবতায় পারভেজ মিয়ার মতো পুলিশ সদস্যের জনবান্ধব দায়িত্ব পালনের ফলে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে এটাও সত্য সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। মনে রাখা চাই শুধু দেশেই নয়, গত প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় প্রদান করে বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। সামাজিকভাবে দুর্নামের ঢোলই বেশি বাজে, প্রশংসনীয় ভূমিকা চাপা পড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মানবসেবার প্রশংসনীয় যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সেটি গোটা পুলিশ বাহিনীর জন্য গৌরবের বিষয়। জনকণ্ঠ গুরুত্ব দিয়ে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রথম পাতায় প্রকাশ করে। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে অপরের জীবন বাঁচানোর এই মহতী প্রয়াস পারভেজের সতীর্থ বা সহকর্মীদের জন্য অনুসরণ ও অনুপ্রেরণার বিষয়। এ থেকে দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও অনুপ্রাণিত হওয়ার রয়েছে। পুলিশের মতো দক্ষ জনসেবক কিংবা উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের আশায় সব সময় না থেকে জনসাধারণও সংগঠিত হয়ে দুর্দশায় পতিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারে এবং তাদের জীবন রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষ মানুষের জন্য।
×