ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

অভিমত ॥ রাজনৈতিক মুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১১ জুলাই ২০১৭

অভিমত ॥ রাজনৈতিক মুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব

হ্যারল্ড জে লাস্কির মতে, রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের ভূমিকা পালনে সক্ষমতাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে। এ ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে ভোটদানের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার, নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের অধিকার, সরকারী চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি হলো রাজনৈতিক স্বাধীনতা। অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অর্থ যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী জীবিকা নির্বাহের স্বাচ্ছন্দ্য ব্যবস্থা এবং দৈনন্দিন অভাব, অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি। লাস্কির মতে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছেÑ ‘প্রতিনিয়ত বেকারত্বের আশঙ্কা ও আগামীকালের অভাব থেকে মুক্ত এবং দৈনিক জীবিকা অর্জনের সুযোগ প্রদান।’ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। এছাড়া যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার, বেকার ও বৃদ্ধ বয়সে ভাতা পাওয়ার অধিকার, রুগ্ন-অক্ষম অবস্থায় রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিপালন, উপযুক্ত মজুরি লাভ ইত্যাদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। রাজনৈতিক মুক্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তি পরস্পর কাঁধে কাঁধ মেলে ও হাত ধরাধরি করে চলে। রেলগাড়ির সমান্তরাল পথ চলার মতোই তাদের অবস্থান হতে হয়। একি মায়ের কোলে ভূমিষ্ঠ হওয়া দুই সহোদর ও সহোদরার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মানুষ। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রত্যেকটা শিশু জন্ম গ্রহণের পরে একটি সুন্দর, সুস্থ, নিষ্কণ্টক পরিবেশে ভূমিষ্ঠ হতে চায়। একজন স্বাধীন মানুষ হন উদার, মুক্তমনা ও প্রগতিশীল মতধারার। স্বাধীন মানুষ হন মহৎ ও পরোপকারী। তার স্বাধীনতার সত্তায় একজন মানুষ স্বশিক্ষিত, সু-শিক্ষিত ও স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠা লাভে সক্ষম হয়। কোন রকম সংশয় বা সঙ্কোচ তার স্বপ্ন পূরণের পথে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। তিনি যশ, সম্মান ও সুনামের অধিকারী হন। পরমুখাপেক্ষিতার গ্লানি তাকে স্পর্শ করে না। পরনির্ভরশীল মানুষেরা হয়ে থাকে সমাজের বোঝা। তাই পরমুখাপেক্ষিতা নয়Ñ আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর থাকতে হবে। আত্মনির্ভরশীল মানুষেরা মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন। আত্মনির্ভরশীল মানুষই নিজেকে রাজনৈতিকভাবে গড়ে তুলতে পারেন। অতএব আত্মনির্ভরশীল মানুষই অর্থনৈতিক মুক্তি, অর্জন করতে সক্ষম হন। আত্মনির্ভরশীলতায়, ব্যক্তিত্ব অর্জন হতে পারে। রাজনৈতিক মুক্তি হচ্ছে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের সোপান বা সূচনাপূর্ব। রাজনৈতিক মুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভবপর নয়। রাজনৈতিক মুক্তির দর্শন ছাড়া কোন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তার কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণে সক্ষমতা অর্জন করে না। তাই রাজনৈতিক মুক্তির দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করতে হবে। রাজনৈতিক মুক্তির দর্শন ব্যতিরেকে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়। তাই বলা যায় যে, অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের একটি মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে মুক্তি লাভ তথা ভৌগোলিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করা। নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যে সচেতন করাই নাগরিক অধিকার এর সুযোগ-সুবিধার আওতায় এসে সংবিধানের প্রদত্ত জাতীয় নিরাপত্তাকে সুদৃঢ় ও সংহত করা হয়ে থাকে। যদিও আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি বলা চলে, আমরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করিনি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদ তার বোল ফিরিয়েছে। অনেক দেশে যুদ্ধের পরিবর্তে অর্থনৈতিক শাসন-শোষণ বিস্তৃততর হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ আজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে অর্থনৈতিক পরাধীনতার নতজানু নীতিতে আটকে আছে। আমাদের শিল্প-বাণিজ্যের অচলায়তন থেকে বের হতে হবে। আমাদের রাজনীতির প্রধান কথা হওয়া উচিতÑ শান্তি, সর্বজাতির মুক্তি, সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার বিপ্লব সম্পন্ন করা, জনায়াত্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, সমাজতন্ত্রের দিকে যাত্রা। তাই পরিশেষে বলা যায় যে, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকে সমুন্নত করতে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিতে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে থাকবে। ১২ জুন, ২০১৭ লেখক : উপ-মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি
×