ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

’৭২ সালের সংবিধান খুব ভাল ছিল ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ জুলাই ২০১৭

’৭২ সালের সংবিধান খুব ভাল ছিল ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯৭২ সালের সংবিধান খুব ভাল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আলাদা সচিবালয় করা হবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মওদুদ আহমদ বলেন, যেদিন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আলাদা সচিবালয় করা হবে সেদিন থেকে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন হবে। তখন আইন বিভাগ ও সরকারের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ৭জন বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে ১৬তম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এটাতে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের মনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, যারা বিচারক অপসারণে অন্যান্য দেশের উদাহরণ দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে বলছি, ওইসব দেশে তো বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ নেই। আজ যে সকল মন্ত্রী আছেন তারা সকলেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিল হওয়াকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে মওদুদ বলেন, এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুরক্ষিত হলো। এখন মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রীমকোর্ট রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু সরকার চেয়েছিল ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে আরও করায়ত্ত ও নতজানু করতে। এটা ছিল তাদের দুরভিসন্ধি। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২ সালের সংবিধানকে আপনারাই খ-বিখ- করেছেন। ১১৬ অনুচ্ছেদ কারা বাতিল করেছিল? আপনারাই ‘ডিফাইন্ড করেছেন, ডিফেইজ করেছেন, ট্রাকেড করেছেন। এখন আবার ৭২ এর সংবিধানের কথা বলছেন, আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুন। চতর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় স্বৈরাচারী সরকার কায়েম করেছিলেন। আপনারা এখন কোন মুখে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে চান? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। মওদুদ বলেন, কাদের হাতে আমারা বিচারপতিদের অপসারণের দায়িত্ব দিতে চাই? যারা নিজেরাই নির্বাচিত নয়, যারা সংসদে বসে তাদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে দেশের মানুষের সন্দেহ আছে। মানুষ বলে কিভাবে তারা বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রাখতে চায়? তারা বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে সরকার পরিচালনা করতে চায়। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার চেয়েছিল বিচার বিভাগকে করায়ত্ত করার, বিচারকদের আরও নতজানু করার। যাতে করে উচ্চতম আদালত তাদের কথা শুনে। মওদুদ বলেন, এখন আওয়ামী লীগের নেতারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলেন এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের কথাও বলেন। যারা এসব কথা বলেন, তারা জ্ঞানপাপী, বাস্তববিবর্জিত ব্যক্তি। তাদের বলা উচিত ৭২ সালের সংবিধান আর ছিল না, নেই। যারা রচনা করেছিল তারাই সেই সংবিধানকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন। মওদুদ বলেন, দেশের মানুষ আজ সমস্যায় জর্জরিত। আজকে দেশে আইনের শাসন নেই, দলীয় শাসন চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেশের মানুষের শেষ ভরসা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়া হয়েছে। আমরা যারা বিরোধী রাজনীতি করি তারা ন্যায় বিচার পাই না। বিশেষ করে নিম্ন আদালতে। অথচ বলা হচ্ছে বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হয়েছে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, দলের নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম নেতা এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মোঃ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
×