ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনেস্কোর অনাপত্তি

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৯ জুলাই ২০১৭

ইউনেস্কোর অনাপত্তি

গত বছর ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সফর শেষে সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল করার জন্য বাংলাদেশের কাছে সুপারিশ করেছিল। এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হলে তাতে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে উল্লেখ করে প্রকল্পটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ জানিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আপত্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। একই সঙ্গে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে থাকা প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে সুন্দরবনকে বাদ দেয়ারও ঘোষণা করে ইউনেস্কো। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সংস্থাটি দুটি শর্ত পূরণের কথা বলেছে। এগুলো হলো কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ)। ইউনেস্কোর ৪১তম অধিবেশনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত এসব তথ্য সন্দেহাতীতভাবে দেশের মঙ্গলাকাক্সক্ষী মানুষকে স্বস্তি দেবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নিয়ে কম বিরোধিতা হয়নি। ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে, যা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকিতে ঠেলে দেবে দাবি করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বাম দলগুলো। তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পর সুন্দরবন রক্ষা কমিটির ব্যানারে আরেকটি নাগরিক কমিটি আন্দোলন করছে। তারা বলছে, কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রভাবে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। সুন্দরবন নিয়ে মানুষের বিশেষ আবেগ রয়েছে। সেই আবেগকে পুঁজি করে দেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিরোধিতা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন। যদিও তাদের বিরোধিতার সপক্ষে বিজ্ঞানভিত্তিক সুযুক্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রে বরাবরই তারা অসমর্থ থেকেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুত কেন্দ্রের সপক্ষে বিভিন্ন সময় নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক দল বিএনপি এক পর্যায়ে দেশের এই উন্নয়ন কার্যক্রমের বিরোধিতা করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপর বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে বলে বিএনপি চেয়ারপার্সন দাবি করলেও তা নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জায়গা নেয়া হয়েছে ৯১৫ একর। এর মধ্যে ৪৬৫ একরে মূল বিদ্যুত কেন্দ্র থাকবে। বাদবাকি জায়গায় সোলার প্যানেল বসবে এবং সবুজায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী গত বছর সংবাদ সম্মেলন করে খোলাখুলি বলেছিলেন, ‘আজকে আমি আপনাদের সামনে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিব, বাস্তবায়নাধীন রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না।’ উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন আছে। এই বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়া পরিবেশগত নিরাপত্তার জন্যও এই প্রকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শব্দ ও আলো দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। গভীর সমুদ্র হতে কভার্ড বার্জে কয়লা পরিবহন করা হবে। বার্জে ব্যবহৃত হবে ঢাকনাযুক্ত কম শব্দযুক্ত ইঞ্জিন। ফলে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কাও নেই। সুন্দরবন নিয়ে মানুষের শঙ্কা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে বাস্তবতার নিরিখে ভাবাবেগবর্জিত হয়ে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তথ্য-উপাত্ত ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পর্যালোচনাই উত্তম পন্থা। ইউনেস্কোর মতো প্রতিষ্ঠানের অনাপত্তির পর রামপালে বাস্তবায়নাধীন বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে অপপ্রচার ও বিরোধিতা বন্ধ হবেÑ এটাই প্রত্যাশা।
×