ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের বিরোধিতায় বিএনপি অনড়

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ জুলাই ২০১৭

রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের বিরোধিতায় বিএনপি অনড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউনেস্কো রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প স্থাপনের বিষয়ে তাদের আপত্তি তুলে নিলেও এ প্রকল্পের বিরোধিতায় বিএনপি অনড় বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অর্গানাইজেশন কী বলল, না বলল- এটা দেখার বিষয় নয়। আমরা মনে করি সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপন অন্যায়, অবৈধ ও দেশকে ধ্বংস করে দেয়ার শামিল। কারাবন্দী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের মুক্তির দাবিতে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম নামক একটি সংগঠন। রিজভী বলেন, দেশের পরিবেশবিদরা এমনকি ভারতের অনেক পরিবেশবিদও বলেছেন সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প স্থাপন করলে সুন্দরবন নষ্ট হবে এবং ওই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ, গাছ-মাছ-পানি ও মানুষ বিপন্ন হবে। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ-বুদ্ধিজীবী আছেন তারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার করছেন, আন্দোলন করছেন। বিএনপি সে আন্দোলন সমর্থন করে। রিজভী বলেন, আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে, এ আগুনের তীব্রতা কতটুকু সেটা আমিই বুঝতে পারব। সেখানে আমি বালতিতে করে পানি ঢালব না দমকল বাহিনী নিয়ে এসে আগুন নেভাব- সেটা আমিই ঠিক করব। আমার দেশের যারা বুদ্ধিজীবী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ তারা কি লেখাপড়া করেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি? আনু মুহাম্মদ সাহেব থেকে শুরু করে আর যারা লিখছেন, এমনকি ভারতেও অনেক পরিবেশবিদ বলছেন যে, সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুত কেন্দ্র হলে আমাদের সুন্দরবন নষ্ট হবে। রিজভী বলেন, ভারতে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুত কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেখানে তা করা হয়নি। হাসিনার সরকারকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এ বিদ্যুত কেন্দ্র বসাচ্ছে। কারণ তারা সুন্দরবন নষ্ট করবে, বাংলাদেশের মানুষকে বিপন্ন করবে এবং আমাদের গাছ, মাছ ও পানি বিপন্ন করবে। এটাই তাদের উদ্দেশ্য। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনরা দেশের ব্যাংক লুটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে। সুইস ব্যাংকের টাকার যে প্রতিবেদন বেরোল তাতে ২০১২ সালের পর থেকে দুই-তিনগুণ করে সুইস ব্যাংকে টাকা বাড়তে শুরু করেছে। সবাই বললেন, সোনালী ব্যাংক লুট, রূপালী ব্যাংক লুট, বেসিক ব্যাংক লুট ও শেয়ারবাজার লুটের টাকাগুলো সুইস ব্যাংকে ঢুকেছে আর আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বললেন, বিএনপির টাকা। বর্তমান জাতীয় সংসদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে বিরোধী দল গঠনমূলক আলোচনা করে সংসদে। বাংলাদেশের সংসদে সে দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে। ‘জাতীয় সংসদ ক্ষমতাসীন দল ও তাদের জোটের বিচিত্রানুষ্ঠানের প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।’ জনগণের সুখ-দুঃখের কোন বিতর্ক সংসদে হয় না। গাজীপুরের নির্বাচিত মেয়র এমএ মান্নানকে ফের বরখাস্ত করার সরকারী সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি। রিজভী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শত শত মানুষকে বেআইনীভাবে আটক করে গোপন স্থানে রেখেছে বলে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন যথার্থ। তারা যতটুকু পেরেছে, নির্ভুল প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা করেছে। আরও কিছুদিন গেলে আরও তথ্য পেত। কারণ, প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ সারাদেশের কত নেতা গুম হয়েছে তা আপনারা জানেন। তাই নতুন করে আর তালিকা কী দেব। যারা মিথ্যার মধ্যে বসবাস করেন, তাদের আর সত্য বলে কী লাভ? অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব সূর্যরশ্মিবিধৌত চশমা পরেন। এ কারণে হয়ত পরিষ্কারভাবে দেশে কী ঘটছে, না ঘটছে দেখতে পারেন না। শুধু তাই নয়, তাদের কান বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, তুলা দিয়েছেন। সরকারের দেয়া তথ্য-উপাত্ত জনগণ বিশ্বাস করে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, তাদের এক ধরনের বিকারগ্রস্ত অবস্থা হয়ে গেছে। সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর যে পরিসংখ্যান তা বানানো। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা যখন ঈদের আগে সড়কের বেহাল অবস্থার কথা বললাম তখন তা আমলে নেননি। এ কারণে এক শ’র উপরে লোক দুর্ঘটনায় মারা গেল। তারপরও ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন, শান্তিতে ও স্বস্তিতে আমরা ঈদ পার করেছি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
×